এবার ইয়াবা ও মানব পাচারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলেন সদ্য কারামুক্ত উখিয়া-টেকনাফের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব আব্দুর রহমান বদি নিজেও। ইয়াবা ব্যবসায়ী ও মানব পাচারে জড়িতদের ব্যাপারে তথ্য দিলে তিনি পুরস্কারও দেবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮ টায় টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের উদ্যোগে আয়োজিত গণসংবর্ধনা ও দোয়া মাহফিলে এ ঘোষণা দেন বদি। গতকাল নিজ এলাকায় ফেরেন সদ্য কারামুক্ত বদি। তাকে তিন শতাধিক তোরণে বরণ করে নেয় জামায়াত, বিএনপি, জাতীয় পার্টি থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগের বদি-অনুগত নেতা-কর্মীরা।
এদিকে ইয়াবা ও মানব পাচারে গডফাদার হিসেবে একাধিকবার পত্রপত্রিকায় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকায় বদির নাম উঠে এলেও এবার বদি সয়ং এ যুদ্ধের ঘোষণা দেয়ায় এলাকাবাসীর মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে। স্থানীয়রা মনে করছেন, এবার ইয়াবার মারণছোবল থেকে দেশ অনেকটাই রক্ষা পাবে। বদির ঘোষণার সময় তুমুল করতালিতে তাকে অভিনন্দিত করা হয়। জয়োধ্বনি তোলা হয় বদির নামে।
এমপি বদি বলেন, গুটি কয়েক ইয়াবা ও মানব পাচারকারীর কারনে সমগ্র এলাকার মানুষ দুর্নামের ভাগিদার হতে পারে না। আপনারা ভাল হয়ে যান, না হলে এলাকা ত্যাগ করে চলে যান। এলাকাকে ইয়াবা ও মানবপাচার মুক্ত করতে চাই। সাংবাদিক ভাইরা ইয়াবা ও মানব পাচারের সঠিক তথ্য দিন, আমিসহ অভিযান চালাব। কোথায় ইয়াবা পাচার, কে ব্যবসায়ী তা তথ্য দিলে ১০ হাজার টাকা এবং মানব পাচারে জড়িতদের ধরে দিলে ১৫ হাজার টাকা পুরস্কার দেয়া হবে।
তিনি শুক্রবারের জুমার নামাজের খুতবায় মাদক ও ইয়াবার কুফল সম্পর্কে বলার অনুরোধ জানান।
কক্সবাজার-৪ (টেকনাফ-উখিয়া) আসনের সরকারদলীয় এ সংসদ সদস্য বলেন, এমপি বদির পরিবারের কেউ ইয়াবা ও মানব পাচারে জড়িত নয়। যদি জড়িত থাকে হাতে নাতে ধরে ক্রস ফায়ারের আওতায় নিয়ে যান, এতে কোন দুঃখ নেই। কিন্তু বলে যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর একটা তালিকা আছে, তা ইয়াবা ব্যবসায়ীর লিষ্ট। এ ইয়াবা তালিকায় কার বিরুদ্ধে কয়টি মামলা আছে তা দেখলেই ইয়াবা ব্যবসায় কারা জড়িত বেরিয়ে আসবে। সে তালিকা নাকি ৭০০ জনের। এ তালিকা কারা করেছে জানি না, শুধু আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের অর্ন্তভুক্ত করে ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করা হয়েছে। অথচ ইয়াবা ব্যবসা করে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা অনেক টাকার মালিক হয়েছে, তারা তালিকায় নেই।
এ সময় বদি সঠিক ইয়াবা ব্যবসায়ীর তালিকা তৈরি করার দাবি জানান।
তিনি আরও বলেন, আমি কক্সবাজার জেলায় চার চার বার শ্রেষ্ট করদাতা নির্বাচিত হয়েছি। সরকারকে ব্যবসা থেকে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব দিয়ে আসছি। যারা প্রতিবছর সরকারকে রাজস্ব দেয় তারা দুর্নীতিবাজ হতে পারে না। আমার বিরুদ্ধে করা দুদকের মামলায় দুর্নীতি প্রমান করতে পারেনি। আমি দুর্নীতিবাজ নই। একজন দুদক কর্মকতার ছেলের অনৈতিক আবদার রক্ষা না করায় আমার বিরুদ্ধে এ মামলা করা হয়েছে। আমি জনগণের দোয়ায় উচচ আদালত থেকে মুক্ত হয়ে বেরিয়ে এসেছি।
তিনি দীর্ঘ ২১দিন পর কাশিমপুর কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে উখিয়া-টেকনাফের মানুষের মাঝে ফিরে আসতে পেরে আল্লাহর নিকট শুকরিয়া জ্ঞাপন করেন।
টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে গণ সংবর্ধনা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন টেকনাফ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাফর আহমদ। টেকনাফ পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আলম বাহাদুরের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শফিক মিয়া, উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা জহির হোসেন, এম এ হাজী হাফেজ উল্লাহ, অ্যাড. মইনুল হোসন চৌধুরী, পৌর মেয়র হাজী মো. ইসলাম, হ্নীলা ইউপি চেয়ারম্যান এইচ কে আনোয়ার, সেন্টমাটিন ইউপি চেয়ারম্যান নূর আহাম্মদ, যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক সাবরাং ইউপি চেয়ারম্যান নূর হোসেন, সদর ইউপি চেয়ারম্যান শাহজাহান, পৌর মহিলা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী নাজমা আলম, পৌর যুবলীগ সভাপতি মঞ্জুরুল করিম সোহাগ, সদর ইউপি সদস্য শাহ আলম, সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি সরুয়ার আলম প্রমুখ।
উল্লেখ্য, চলতি বছর ২ নভেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের একটি মামলায় ঢাকার একটি আদালত সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদিকে তিন বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং ১০ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেন। এর ১৮ দিন পর ২০ নভেম্বর উচ্চ আদালত থেকে জামিন পান বদি। ২১ নভেম্বর তিনি কারাগার থেকে বের হন।
এমপি বদির অঙ্গীকার : বিমানবন্দর থেকে টেকনাফ যাওয়ার সময় উখিয়া থেকে টেকনাফ পর্যন্ত আরাকান সড়কের দুই ধারে বেশ কয়েকটি পথসভায় বক্তব্য দেন এমপি বদি। এসব পথসভায় তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন। একই সঙ্গে তিনি দুদকের করা মামলার দায় চাপান কুচক্রী মহলের ওপর। ইয়াবা ও মানব পাচারের ব্যাপারে নিজের পক্ষে সাফাই গাইতে গিয়ে এমপি বদি বলেন, ‘এক মাসের মধ্যে টেকনাফের ইয়াবা ও মানব পাচারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।’
বিডি-প্রতিদিন/এস আহমেদ