অল্প মূলধন ও কঠোর পরিশ্রম পূঁজি করে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে পাম চাষে সফল হয়েছেন উপজেলার রাজৈ ইউনিয়নের কুল্লাব গ্রামের সৌদি ফেরত আনোয়ার হোসেন। শুরুতে মূলধন কম থাকলেও এখন তা কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে তার বাগানে গাছের সংখ্যা দুই হাজারেরও বেশি। বিদেশি টেলিভিশনে প্রতিবেদন দেখে উৎসাহিত হয়ে পাম চাষ শুরু করেন আনোয়ার। স্থানীয়রা এই চাষকে প্রথমে বোকমি বললেও সফল হয়ে আনোয়ার দেখিয়ে দিয়েছেন, অসম্ভব বলে কিছু নেই।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, ভাগ্যের চাকা পরিবর্তনে আনোয়ার হোসেন সৌদি আরব যান বেশ ক’বছর আগে। সৌদিতে চাকুরির অবস্থায় ২০০৭ সালে বিদেশী টিভি চ্যানেলে মালয়েশিয়ার একটি পাম বাগানের ওপর করা প্রতিবেদন দেখেন তিনি। সেই প্রতিবেদন দেখে জানতে পারেন, এটি দীর্ঘ মেয়াদি আবাদ। তারপরও বিষয়টি তাকে আকৃষ্ট করে। সৌদিতে থেকেই সিদ্ধান্ত নেন দেশে ফিরে পাম চাষ করবেন। দেশে ফিরে সঙ্গে সঙ্গেই স্বপ্ন পূরণে কাজ শুরু করেন। ২০১০ সালে নিজ গ্রামে আবাদী ও অনাবাদী মোট ১০ একর জমিতে পাম চাষ শুরু করেন আনোয়ার। তার সফলতায় এখন এ চাষে আগ্রহী হতে শুরু করেছে অনেকেই।
আনোয়ার হোসেন জানান, আবাদের প্রথম দিকে জমি নিংড়ানোর জন্য শ্রমিক মজুরি, গাছের পরিচর্যা, কীটনাশক সার, পানি সেচ সব মিলিয়ে প্রচুর ব্যয় হয়। সৌদি থেকে রোজগার করা আয়ের প্রায় সব টাকাই এর পিছনে ব্যয় করেছি।
শুরুর দিকে কষ্ট হলেও দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর এখন স্বপ্ন পূরণের পথে আনোয়ার। এত কম সময়ে সফলতার মুখ দেখবেন তা আশা করেননি। আনোয়ার জানান, আবাদের সাড়ে তিন বছরের মধ্যেই পাম গাছে ফলন ধরতে শুরু করে। তখন ফলনগুলো কেটে ফেলে দেয়া হয় গুটিগুলো বড় করার স্বার্থে। প্রতিটি গাছে প্রায় ১০/১২টি বাদাঁ রয়েছে এবং প্রতিটি বাঁদা ১৫-২০ কেজি ওজন। এগুলো কিছু দিন পর প্রতিটি ৪০-৫০ কেজি ওজনের হবে।
আনোয়ার আরও জানান, পাম চাষের আবাদটি দীর্ঘমেয়াদী হলেও একবার আবাদে প্রায় ৪০ থেকে ৫০ বছর পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়। খরচটা প্রথম দিকে একটু বেশি হলেও পরে শুধু পরিচর্যা করলেই চলে।
আনোয়ার এরইমধ্যে জেলা বাণিজ্য মেলায় উৎপাদিত পামের গুটি প্রদর্শন করে পুরস্কৃত হয়েছেন। তার প্রত্যাশা, কৃষিতে পুরস্কার প্রাপ্তদের তালিকায় তার নাম অন্তর্ভুক্ত হবে।
উপজেলা কৃষি অফিসার মো. সাইফুল আজম খান বলেন, পাম চাষের জন্য এ এলাকার মাটি ও প্রকৃতি অত্যন্ত উপযোগী। উঁচু টিলায় এ ধরনের আবাদ হলে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার পাশাপাশি জমিগুলোকেও কাজে লাগানো যায়। এ ছাড়াও বৈশ্বিক জলবায়ুর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় এ ধরনের আবাদ উপযোগী এবং জরুরি।
বিডি প্রতিদিন/২৬ নভেম্বর, ২০১৬/ফারজানা/১৮