বরিশালের গৌরনদী ও বানারীপাড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে উপ-নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। সোমবার সকাল ৮টায় গৌরনদীর ৪৫টি এবং বানারীপাড়ার ৩৮টি কেন্দ্রে একযোগে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। চলবে টানা বিকেল ৪টা পর্যন্ত। প্রতিটি কেন্দ্রে পর্যাপ্ত সংখ্যক নিরাপত্তা বাহিনী থাকলেও অনেক কেন্দ্রে দেখা যায়নি বিএনপি প্রার্থীর পোলিং এজেন্ট। তেমন দেখা মিলছে না ভোটারদের। নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সকাল ৮টার আগেই ভোট গ্রহণের যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করে বসে থাকলেও গৌরনদী উপজেলা সদরের পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে প্রথম ভোট পড়েছে সকাল ৮টা ২৫মিনিটে। এরপর থেকে একজন দুইজন করে ভোটার আসছেন এবং তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিচ্ছেন।
সকাল সাড়ে ৯টায় একই চিত্র দেখা গেছে গৌরনদী উপজেলা সদরের গৌরনদী মডেল উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রেও। এই কেন্দ্রেও দেখা যায়নি বিএনপি’র কোন পোলিং এজেন্টকে। দেখা যায়নি ভোটারদের দীর্ঘ লাইনও। একজন দু’জন ভোটার আসছেন এবং তারা ভোট দিচ্ছেন কোন প্রভাব বিস্তার ছাড়াই। ভোটের মাঠের শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতি বিরাজ করলেও এই ভোট উৎসবমুখর নয় বলে মন্তব্য করেছেন ভোটাররা।
উপজেলা সদরের প্রধান প্রধান কেন্দ্রে পোলিং এজেন্ট না থাকার কারণ হিসেবে বিএনপি প্রার্থী এসএম মনজুর হোসেন মিলন বলেন, নির্বাচনের দুইদিন আগে থেকে তার পোলিং এজেন্ট এবং কর্মী-সমর্থকদের কেন্দ্রে না যাওয়ার জন্য হুমকি দিয়েছে ক্ষমতাসীনরা। তাই ভয়ে অনেক কেন্দ্রে যায়নি বিএনপি’র পোলিং এজেন্ট এবং ভোটাররা।
যদিও বিএনপি প্রার্থীর অভিযোগের বিষয়ে গৌরনদী থানার ওসি মো. আলাউদ্দিন বলেন, বিএনপি প্রার্থী ঘরে বসে অভিযোগ করতেই পারেন। তিনি নিজে কিংবা তার কোন কর্মী মাঠে দেখা যায়নি। প্রতিটি কেন্দ্রে এবং কেন্দ্রের বাইরে পর্যাপ্ত সংখ্যক নিরাপত্তা বাহিনী আইন শৃংখলা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব পালন করছেন। কেন্দ্র এবং কেন্দ্রের বাইরে ভোটারদের নিরাপত্তা দেয়ার জন্য সর্বোচ্চ সকর্তাবস্থায় রয়েছেন পুলিশসহ অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনী।
সকালের দিকে ভোটার কম হওয়ার কারণে হিসেবে গৌরনদী পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের পিজাইডিং অফিসার কৃষিবিদ মো. রোকনুজ্জামান বলেন, এটা উপ-নির্বাচন। উপ-নির্বাচনগুলোতে সাধারণত ভোটারদের তেমন আগ্রহ থাকেনা। এখানেও সে রকম হচ্ছে। তাছাড়া উপজেলা সদর কিংবা পৌর শহরের মানুষজনের ঘুম ভাঙে ৯টা সাড়ে ৯টার পর। দুপুরের পর ভোটারের উপস্থিতি বাড়বে বলে ধারণা করেন তিনি।
বানারীপাড়ায়ও ভোটের মাঠের একই চিত্র পাওয়া গেছে। সেখানে ভোটারের উপস্থিতি একেবারেই কম। প্রতিটি কেন্দ্রে সকালে ভোটারের চেয়ে ভোট সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা বেশী দেখা গেছে। তবে কোন কেন্দ্রে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কোন অপ্রীতিকর কিংবা অনাকাঙ্ক্ষিত কোন পরিস্থিতির খবর পাওয়া যায়নি।
আজকের উপ-নির্বাচনে গৌরনদীতে আওয়ামী লীগের সৈয়দা মনিরুন্নাহার মেরী ও বিএনপি’র এসএম মনজুর হোসেন মিলন এবং বানারীপাড়ায় আওয়ামী লীগের গোলাম ফারুক, বিএনপি’র শাহে আলম ও জাতীয় পার্টির মিজানুর রহমান চোকদার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
দুই উপজেলার মধ্যে গৌরনদীতে মোট ৪৫ কেন্দ্রের মধ্যে ২৫টি এবং বানারীপাড়ায় ৩৮টি কেন্দ্রের মধ্যে ২০টি কেন্দ্র অধিক গুরুত্বপূর্ন (ঝূঁকিপূর্ণ) হিসেবে চিহ্নিত করেছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী।
গৌরনদীতে মোট ভোটার ১ লাখ ৪১ হাজার ২৯৬ জন এবং বানারীপাড়ায় ভোটারের সংখ্যা ১ লাখ ১৩ হাজার ৪৩১ জন।
রিটার্নিং অফিসার সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আব্দুল হালিম খান বলেন, দুই উপজেলার প্রতিটি কেন্দ্রে ৬ জন সশস্ত্র পুলিশ এবং ১৮ জন আনসারসহ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর ২৪ জন সদস্য নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছেন। প্রতি ৩টি কেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করছে একদল স্ট্রাইকিং ফোর্স। এছাড়া দুই উপজেলায় ৪ প্লাটুন বিজিবি এবং র্যাবের ২টি করে ৪টি দল কেন্দ্রের বাইরে টহলে নিয়োজিত রয়েছে। দুই উপজেলায় একজন করে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এবং ৪জন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আইন শৃঙ্খলা তদারকি করছেন। ভোটের পরদিন অর্থাৎ আগামীকাল ৭ মার্চ পর্যন্ত তারা দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবেন।
বিডি-প্রতিদিন/০৬ মার্চ, ২০১৭/মাহবুব