নেত্রকোনার হাওর অঞ্চলে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ত্রাণ সহায়তা বিতরণ কার্যক্রমে নানা অনিয়মের অভিযোগ ওঠেছে। সেই সাথে ১৫ টাকা কেজি দরের ওএমএসের সুবিধা বাড়ানোর জন্য নেত্রকোনা পৌর শহরে কার্যক্রম বন্ধ রেখে দূর্গত এলাকায় ৭২ জন ডিলার দিয়েছে খাদ্য বিভাগ। তবুও অনেকে পাচ্ছেন না এসব সুবিধা। তবে জেলা প্রশাসন বলছে, অনিয়মের অভিযোগ পাওয়ার সাথে সাথেই ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাঁধ ভেঙ্গে পাহাড়ী ঢলে অকাল বন্যার কবলে পড়ে নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ, খালিয়াজুরী ও মদন উপজেলা। বন্যার পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত পুরো জেলা। আর এর মধ্যে খালিয়াজুরী ও মোহনগঞ্জ উপজেলার সবগুলো ইউনিয়নই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মদন উপজেলার ২ টি ইউনিয়ন বাদে সবগুলো ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
বাকী ৭ উপজেলার মধ্যে দূর্গাপুর, কলমাকান্দা, বারহাট্টা ও আটপাড়ায় শতভাগ ইউনিয়নকে ক্ষতিগ্রস্ত দেখানো হয়েছে। পূর্বধলায় ১১ টির মধ্যে ৭টি, কেন্দুয়ায় ১৩ টির মধ্যে ৮টি ও সদরে ১২ টির মধ্যে ৬টি ইউনিয়নকে ক্ষতিগ্রস্ত দেখিয়ে ত্রাণ বিতরণ চলছে।
অন্যদিকে এ ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমে কিছু জন প্রতিনিধির কপাল খুলেছে। আর হাওরবাসীর মধ্যে দেখা দিয়েছে ত্রাণের অপ্রতুলতা। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিবর্গ এবং কৃষকরা মনে করছেন হাওরের সবগুলি এলাকায় আগে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম পূর্ণ করে কম ক্ষতিগ্রস্থ এলাকাগুলোতে বিতরণে গেলে হাওরের সমস্যাটা সমাধান হতে পারতো এই বরাদ্দ দিয়েই।
জেলার কৃষি বিভাগ ও জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে করা সরকারী হিসেব মতেই মোট ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক পরিবার রয়েছে ১ লাখ ৬৭ হাজার ১৮০ জন।
জেলা ত্রাণ ও দূর্যোগ পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. আব্দুর রহমান বলেন, ক্ষতিগ্রস্তদের সকল তথ্য দিয়েছে কৃষি বিভাগ। আমরা শুধু বরাদ্দ দেই। প্রথম পর্যায়েই আমরা দিচ্ছি জিআর ৩৯২ টন ও ৫০ হাজার ভিজিএফ কার্ড। নগদ সাড়ে সাত কোটি টাকা। এর মধ্যে ঝড়ে নিখোঁজ হয়ে মৃত্যু ও পানিতে ডুবে মৃত্যু হওয়ায় দুই পরিবারকে দাফনের জন্য মোট ২৫ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে।
জেলা ত্রাণ ও দূর্যোগ পুনর্বাসন কার্যালয় সূত্রে আরো জানা যায়, জেলায় ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের মধ্যে প্রান্তিক কৃষক রয়েছে ৬১ হাজার ৪৫৪ জন, ক্ষুদ্র কৃষক ৭৬ হাজার ৯৫৫ জন, মাঝারী রয়েছে ২৪ হাজার ৭৪০ জন ও বড় কৃষক ৪ হাজার ৩১ জন।
এদিকে বিভিন্ন এলাকায় মনিটিরিং রাখতে জেলা প্রশাসন পুলিশ প্রশাসন নিজে উপস্থিত থেকে ত্রাণ বিতরণ কাজ করছেন। তারপরও পুরো জেলায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে চালের মাপে কম দেয়া, নিজ লোকদের কার্ড দেয়া এমন নানা অভিযোগ রয়েছে। তবে কার্ডে অপ্রতুলতা থাকায় কিছুটা সমস্যা হচ্ছে বলেও জানান জেলা প্রশাসক। এদিকে ওএমএস কার্যক্রমেও দাম বেশি রাখার অভিযোগ অস্বীকার করেছে খাদ্য বিভাগ।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. সোহরাব উদ্দিন বলেন, পৌর এলাকার ওএমএস ডিলার সরিয়ে আমরা দুর্গত এলাকায় দিয়েছি। যাতে করে ক্ষতিগ্রস্ত বড় এবং মাঝারি কৃষক বাদ না পরে। সেই সাথে কোথাও কোন অনিয়ম পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিক ব্যবাস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।
জেলা প্রশাসক ড. মুশফিকুর রহমান বলেন, আমরা পুলিশ প্রশাসন নিয়ে মনিটরিং করছি। তারপরও যে সকল অভিযোগের ব্যাপারগুলো উঠছে সাথে সাথে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। তবে ত্রাণের অপ্রতুলতা রয়েছে বেশ। আমরা এরইমধ্যে প্রপোজাল পাঠিয়েছি যাতে সকলকে সহযোগিতা করা যায়।
তিনি আরো বলেন, আমরা শুধু ইউপি চেয়ারম্যানদের ভরসা করছি না। এই ত্রাণ তৎপরতা উপজেলা চেয়ারম্যানদের মাধ্যমেও হচ্ছে। আর মনিটরিং এর জন্য ট্যাগ অফিসার এবং ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ রয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/ ৪ মে, ২০১৭/ই-জাহান