পা আছে, কিন্তু হেঁটে চলার শক্তি নেই। নাইছ আকতার জন্ম থেকে শারীরিক প্রতিবন্ধী হলেও তার রয়েছে অদম্য শিক্ষা শক্তি। সহপাঠিদের সাথে চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে নাইছ আকতার (১৫)। হেঁটে চলার শক্তি না থাকায় কেন্দ্রে যেতে হয়েছে বাবা'র কোলে। তাকে ঘিরেই ছিল কেন্দ্রের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দৃষ্টি। অচল ডান হাত রেখে বা’হাতে দ্রুত গতিতে লিখেই বিশ্বহরিগাছা-বহালগাছা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাইছ আকতার এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৩.৫৫ পেয়েছেন।
জানা যায়, চৌকিবাড়ী ইউনিয়নের বহালগাছা গ্রামের নজরুল ইসলাম একজন প্রান্তিক কৃষক। আকতার জাহান গৃহিনী। এই দম্পত্তির ২০০১ সালে জন্ম নেয় এক কন্যা শিশু। জন্ম থেকেই শিশুটি শারীরিক প্রতিবন্ধী। নজরুল ইসলাম ও আকতার জাহান দম্পত্তির এই কন্যা শিশু নিজের দু’পায়ে ভর করে দাঁড়াতে পারে না। শক্তি না থাকায় ডান হাতটিও অচল। ওই দম্পতি তাদের এই শিশু’র নাম রাখেন নাইছ আকতার। বিশ্বাস থেকেই প্রতিবন্ধী এই শিশুর মাধ্যমে সুন্দর কিছু বিকাশের স্বপ্ন ছিল ওই দম্পতির। বেড়ে ওঠার সাথে লেখাপড়ার প্রতি তার আকর্ষণ সৃষ্টি হয়। বাবা-মা’র কোলে করেই বিদ্যালয়ে গিয়ে লেখাপড়া করেছে সে। নাইছ আকতার ২০১৪ সালের জেএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ৩.৬৭ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়। আর চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৩.৫৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে নাইছ।
বগুড়ার ধুনটের বিশ্বহরিগাছা-বহালগাছা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সেজাব উদ্দিন বলেন, বিদ্যালয়ে অনেক শিক্ষার্থী অনিয়মিত থাকে। কিন্তু প্রতিবন্ধী হলেও নাইছ আকতার বাবা-মা’র কোলে চেপে নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসতো। প্রতিবন্ধী হলেও সে অত্যন্ত মেধাবী। শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে মাড়িয়ে এসএসসি জয় করেছে নাইছ। আশা করি সে উচ্চ শিক্ষা অর্জনের মধ্যদিয়ে দেশের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করবে।
অদম্য নাইছ জানায়, শারীরিক প্রতিবন্ধী হলেও সমাজের সব প্রতিবন্ধকতা মাড়াতে চায় উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করে। মনের কোনে শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন লালন করে নাইছ সব কষ্টসহ্য করেও নিয়মিত লেখাপড়া করছে। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা না থাকলে হয়তো আরো ভালো ফলাফল করা সম্ভব হতো। তবে যে ফলাফল হয়েছে এতেও খুশি নাইছ আকতার। নাইছ জানায়, বাবা-মায়ের কোলে চরে এক সময় রাস্তায় বেরুলে মানুষ বিদ্রুপের চোখে তাকিয়ে থাকতো। লেখাপড়া করার কারণে মানুষ এখন ভালোবাসে। এবার উচ্চ শিক্ষা নিয়ে শিক্ষকতা পেশায় নিজেকে নিয়োজিত করতে চাই।
নাইছ আকতারের বাবা নজরুল ইসলাম বলেন, মেয়ে প্রতিবন্ধী হলেও মেধাবী শিক্ষার্থী। লেখাপড়ার প্রতি তার প্রবল আগ্রহের কারণে আমাদের সব কষ্ট দূর হয়েছে। ভালো ফলাফল নিয়ে উচ্চ শিক্ষা অর্জন করতে পারলে বাবা-মায়ের স্বপ্ন পূরণ হবে।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার