জীবন-জীবিকার একমাত্র অবলম্বন ফসল হারিয়ে দু‘চোখ ভরা শুণ্যতা নিয়ে জীবিকার সন্ধানে গ্রাম ছাড়ছে সুনামগঞ্জের সদর ইউনিয়ন মধ্যনগরের মানুষ। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে অসময়ে ফসল হারিয়ে, ‘অধিক শোকে পাথর’ কৃষককূল ও শ্রমজীবি মানুষেরা অর্ধাহারে-অনাহারে সময় পার করছেন। নাম মাত্র মূল্যে শেষ সম্বল গবাদি পশু বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন অনেকেই।
আকস্মিক বন্যায় সুনামগঞ্জ জেলার সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত মধ্যনগর ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, বড় ঘোরাডোবা, ছোট ঘোরাডোবা, মরিচাপুরী, মেঘনা, বুয়ালা, শালদিঘা ও কাইলানিসহ ছোটবড় সব হাওরের ফসল তলিয়ে গেছে অথৈ জলে। ফসলের সাথে ভেসে গেছে কৃষকের স্বপ্ন। পরিবারে নেমেছে বিষাদের ছায়া। ধান বিক্রিয় টাকায় চাষাবাদের ঋণ, সারা বছর পরিবারের ব্যয়ভার বহন এখন তাদের পক্ষে দুষ্কর। বন্ধ হয়েছে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের শিক্ষার্থীদের পড়া-লেখা। নিজ এলাকায় বিকল্প কর্মসংস্থান না থাকায় কাজের সন্ধানে পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলায় ছুটছেন এলাকার বেশির ভাগ মানুষ। স্থানীয় খোলা বাজারে বিক্রি হওয়া ওএমএস’র চাল নিতে অভাবী মানুষের দীর্ঘ সারি দেখা গেছে।
স্থানীয় অনন্তপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, একদিকে গ্রামের লোকজন হারিয়েছেন ফসল, অন্যদিকে ঝড়-তুফানে বিধ্বস্ত হয়েছে বেশির ভাগ বসতঘর। কৃষকরা জানান, প্রকৃতির সাথে আমাদের নিয়মিত যুদ্ধ করতে হয়। কিন্তু শত বছরেও এ রকম নির্মম বিপর্যয় ঘটেনি। এবছর একভাগ ধানও আমরা তুলতে পারিনি। অন্যত্র কাজ করে অনাহারে-অর্ধাহারে কাটছে আমাদের দিন।
মধ্যনগর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান প্রবীর বিজয় তালুকদার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, কৃষির উপরই এ এলাকার মানুষের জীবন-জীবিকা নির্ভরশীল। জেলায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আমাদের ইউনিয়ন। আমাদের ৫ হাজার ৩শ' কৃষক পরিবার অর্ধাহারে-অনাহারে সময় পার করছেন। ইতোমধ্যে ২ হাজার কৃষক পরিবারকে আমরা অব্যাহতভাবে সরকারি সহায়তা দিচ্ছি। লোকজন জীবিকার তাগিদে বিক্রি করছেন গবাদি পশু। কেউ কেউ ছুটছেন অন্যত্র কাজে। এ জনপদকে বাঁচাতে সরকারের পাশাপাশি বিত্তবান এলাকার মানুষের এগিয়ে আসা জরুরি।
বিডি-প্রতিদিন/এস আহমেদ