দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার দেয়া রূপরেখা অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার হলে বিএনপি অবশ্যই নির্বাচনে যাবে এবং সেই নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় যাবে বলে মন্তব্য করেছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক মন্ত্রী মির্জা আব্বাস। যদি এর ব্যতিক্রম হয়, আওয়ামী লীগ যদি ছলে-বলে-কৌশলে মামলা-মোকদ্দমার মাধ্যমে দেশনেত্রী তথা বিএনপিকে বাদ দিয়ে কেউ বা কোন অংশ নিয়ে নির্বাচন করার চেষ্টা করে, অবশ্যই সেই নির্বাচন প্রতিহত করা হবে বলে হুশিয়ারি দেন মির্জা আব্বাস। নগরীর সদর রোডের অশ্বিনী কুমার হলে আজ দুপুরে উত্তর জেলা বিএনপি’র তৃণমূল কর্মীসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন তিনি।
উত্তর জেলা বিএনপি’র সভাপতি মেজবাউদ্দিন ফরহাদের সভাপতিত্বে কর্মী সভায় মির্জা আব্বাস আরো বলেন, দেশে আজ গনতন্ত্র নেই। দেশে আজ হত্যাকান্ড খুন-গুমের রাজনীতি চলছে। গুম-নিহতের মধ্যে বন্দি গনতন্ত্র। বিএনপি’র ৫ হাজার নেতাকর্মী নিখোঁজ আছে। বহু নেতাকর্মীকে ক্রসফায়ারের নামে হত্যা করা হয়েছে। এগুলো বিনা বিচারে ছেড়ে দেয়া হবে না। আওয়ামী লীগকে সকল দেনা শোধ করতে হবে আগামীতে।
নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের দাবীতে বিএনপির আগামী আন্দোলনে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ কখনোই সঠিক নির্বাচন দেবে না। লুটের টাকা-সম্পদ রক্ষায় আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় টিকে থাকার চেষ্টা করবে। ওই সময় জনগনকে সাথে নিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন আদায় করতে হবে। ওই আন্দোলনে যাতে পেছন থেকে বিএনপি’কে কেউ ছুরিকাঘাত করতে না পারে, সেজন্য দলের মধ্যে ঘাঁপটি মেরে থাকা মীর জাফরদের সনাক্ত করার আহ্বান জানান তিনি।
সভায় বিএনপি’র দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতিতে চরম বিরক্ত মির্জা আব্বাস আগামী নির্বাচনের মাঠে আওয়ামী নৈরাজ্য ঠেকাতে বিএনপি নেতাকর্মীরাকে কত মারামারি করতে পারেন সেটি দেখার কথা বলেন।
কর্মীসভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান বেগম সেলিমা রহমান ও জয়নাল আবেদীন, কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান সরোয়ার, কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আ ক ন কুদ্দুসুর রহমান, ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সোবাহন, কেন্দ্রীয় ছাত্রদল সভাপতি রাজিব আহসান, উত্তর জেলা যুবদলের সাধারন সম্পাদক বদিউজ্জামান মিন্টু সহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।
এর আগে মির্জা আব্বাস মঞ্চে ওঠার পূর্বে হলের মধ্যে এবং বাইরে বিএনপি ও ছাত্রদলের একাধিক গ্রুপ নিজেদের মধ্যে হাতাহাতি এবং চেয়ার ছোড়াছুড়িতে জড়িয়ে পড়েন। এ সময় তুমুল হট্টগোল হয় সেখানে। এতে বিব্রত হন বিএনপি’র কেন্দ্রিয় ও স্থানীয় নেতারা।
দলের ভাইস চেয়ারম্যান বেগম সেলিমা রহমান ও জয়নাল আবেদীনসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে দলের সার্বিক চিত্র তুলে ধরে বক্তব্য দিচ্ছিলেন উত্তর জেলার আওতাধীন মুলাদী পৌর বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক আল মামুন।
তিনি তার বক্তব্যে বলেন, ২০০৮ সালে সেলিমা রহমানের পরামর্শে গঠিত উত্তর জেলা যুবদল নিস্ক্রিয় হয়ে পড়েছে। তারা দলের কোন কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেছ না। একইভাবে মুলাদী উপজেলা বিএনপির সভাপতি ছত্তার খান সহ কমিটির অধিকাংশ নেতা নিস্ক্রিয়। তারা দলে গ্রুপিং করছে।
তিনি সেলিমা রহমান অনুসারীদের কমিটি বাতিল করে দলের ভাইস চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীনের অনুসারীদের নিয়ে উত্তর জেলা যুবদলের এবং মুলাদী উপজেলা বিএনপি’র নতুন কমিটি করার দাবী তোলেন। এ সময় উত্তর জেলা বিএনপি’র সভাপতি মেজবাউদ্দিন ফরহাদ তাকে সংযত হয়ে বক্তব্য দিতে বলেন। মঞ্চে থাকা দক্ষিন জেলা যুবদলের সংগঠনিক সম্পাদক হাফিজ আহম্মেদ বাবলু তার তাছ থেকে মাইক্রোফোন কেড়ে নিলে হট্টগোল শুরু হয়। এক পর্যায়ে উভয় গ্রুপের নেতাকর্মীরা হাতাহাতি এবং চেয়ার ছোড়াছুড়ি করেন। এতে সভার কার্যক্রমে কিছু সময়ের জন্য বিঘ্নি ঘটে। পরে উত্তর জেলা বিএনপি’র সাধারনণ সম্পাদক আ ক ন কুদ্দুসসহ স্থানীয় সিনিয়র নেতারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন। একই সময়ে অশ্বিনী কুমার হলের বাইরে ছাত্রদলের দুই গ্রুপের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে হাতাহাতি এবং ধাক্কাধাক্কি হয়। বেলা ১২ টার দিকে প্রধান অতিথি মির্জা আব্বাস সভাস্থলে পৌঁছলে ফের স্বাভাবিকভাবে সভার কার্যক্রম শুরু হয়।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার