বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল (শেবাচিম) কলেজ হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণির স্টাফ কোয়ার্টারের ৩নং পুকুর এবং মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডের আয়ার বাসা থেকে বিপুল পরিমাণ সরকারি ওষুধ উদ্ধার করছে পুলিশ। এ ঘটনায় ওয়ার্ডের ইনচার্জ সিনিয়র স্টাফ নার্স বিলকিস বেগমকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। ঘটনা তদন্তে ‘কেঁচো খুড়তে সাপ’ বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে।
শুক্রবার সকালে ওষুধ উদ্ধারের ঘটনায় আয়া শেফালী ও তার মাদকাসক্ত ছেলে মামুনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ওই ঘটনায় কোতয়ালী পুলিশের এসআই অরবিন্দ বাদী হয়ে থানায় তাদের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন।
মামলার সূত্র ধরে শনিবার মেডিকেলে অভিযান চালায় পুলিশ। ওই ঘটনায় মেডিকেল কর্তৃপক্ষের গঠিত তিনটি তদন্ত কমিটিও পুলিশের সঙ্গে একযোগে হাসপাতালের মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডের ওষুধ স্টোরে অভিযান চালায়।
পুলিশ ও হাসপাতালের তদন্ত কমিটি যৌথ অভিযানে মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডের ওষুধ স্টোর থেকে রোগীদের জন্য বরাদ্দকৃত বিপুল পরিমাণ বিভিন্ন ধরনের ওষুধ উদ্ধার করে। বরাদ্দকৃত সরকারি ওষুধ রোগীদের মাঝে বিতরণ না করে আত্মসাতের উদ্দেশ্যে সংরক্ষণ করেছিল ওয়ার্ডের দায়িত্বপ্রাপ্তরা।
উদ্ধারকৃত ওষুধের বাজার মূল্য প্রায় ৫ লাখ টাকা। এই ওষুধ দিয়ে একই ওয়ার্ডের রোগীদের ৩/৪ মাসের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হতো বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের পরিচালক ডা. এসএম সিরাজুল ইসলাম।
সরকারিভাবে ওষুধ বরাদ্দ থাকার পরও সেগুলো বিতরণ না করায়, বাইরে থেকে প্রয়োজনীয় ওষুধ কিনতে হয়েছে রোগীদের। এতে ক্ষুব্ধ রোগী ও তাদের স্বজনরা।
বরিশাল মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) সাইফুল্লাহ নাসির জানান, ওষুধ চুরির মামলা তদন্তে গিয়ে আরো বিপুল পরিমাণ সরকারি ওষুধ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় ওয়ার্ডের ইনচার্জ সিনিয়র স্টাফ নার্স বিলকিস বেগমকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। ঘটনার সঙ্গে যারাই জড়িত থাকুক তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
হাসপাতালের পরিচালক ডা. এসএম সিরাজুল ইসলাম বলেন, বিভিন্ন সময় বরাদ্দকৃত সরকারি ওষুধ রোগীদের মাঝে বিতরণ না করে সংরক্ষণ করে রাখা সম্পূর্ণ অবৈধ। এ ঘটনায় ওয়ার্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত সিনিয়র স্টাফ নার্স বিলকিস বেগমের বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে। পুলিশ অভিযুক্ত সিনিয়র নার্সের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেবে। প্রয়োজন হলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ থানায় অভিযোগ করবে।
তিনি আরো জানান, শুক্রবার স্টাফ কোয়ার্টারের পুুকুর থেকে সরকারি উদ্ধারের পর হাসপাতালের মেইন মেডিসিন স্টোর, সাব-স্টোর এবং ওয়ার্ডের মেডিসিন স্টোরের রিজার্ভ তদন্তে গঠিত তিন কমিটির মধ্যে দুইটি কমিটি মেইন মেডিসিন স্টোর ও সাব স্টোরের তদন্ত সম্পন্ন করেছে। ওই দুইটি স্টোরে সব ওষুধ এবং কাগজপত্র ঠিক আছে। গতকাল একযোগে ৩ কমিটি ওয়ার্ডের মেডিসিন স্টোর তদন্তে যায়। তদন্তে অসঙ্গতি ধরা পড়ে এবং বিপুল পরিমাণ বরাদ্দকৃত ওষুধ উদ্ধার করা হয়।
পর্যায়ক্রমে সব ওয়ার্ডে এই অভিযান চালানোর পাশাপাশি ৩ তদন্ত কমিটির কার্যক্রম স্বয়ং নিজেই তদারকি করার কথা বলেন তিনি।
প্রতি বছর শেরে-ই বাংলা মেডিকেলের রোগীদের জন্য কোটি কোটি টাকার ওষুধ বরাদ্দ দেয় সরকার। কিন্তু রোগীরা এসব ওষুধ পায় না বলে অভিযোগ দীর্ঘদিনের।
বিডি প্রতিদিন/ ১৩ মে ২০১৭/আরাফাত