ভারতের গজলডোবা বাঁধের সবক'টি (৫৪টি) গেট খুলে দেওয়ায় উজান থেকে ধেয়ে আসা বানের পানিতে নীলফামারী জেলার ১০ ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। ২০টি চরে দেখা দিয়েছে বন্যা। বন্যাকবলিত হয়ে খাদ্যাভাব এবং নানা সংকটে পড়েছেন প্রায় ৮ লাখ মানুষ।
মঙ্গলবারও বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে তিস্তার পানি। সকাল ৬টা থেকে নীলফামারীর ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ১০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে তিস্তার পানি।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, তিস্তা নদীর ভারতের পশ্চিমবঙ্গে গজলডোবা ব্যারেজের সবকটি জলকপাট খুলে দেওয়ায় আকষ্মিক ভাবে পানি বেড়েছে ভাটির দেশ বাংলাদেশ অংশে তিস্তা ব্যারেজের নীলফামারী পয়েন্টে। কর্মকর্তারা বলছেন, এ পরিস্থিতি আরো কয়েকদিন এভাবে থাকতে পারে।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ্য হয় ডিমলা উপজেলার টেপাখড়িবাড়ি, ঝুনাগাছ চাপানি, খালিশা চাপানি, পুর্ব ছাতনাই, খগাখড়িবাড়ি, গয়াবাড়ি এবং জলঢাকা উপজেলার গোলমুন্ডা, শৌলমারী, কৈমারী ও ডাউয়াবাড়ি ইউনিয়ন। এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হন টেপাখড়িবাড়ি ও ঝুনাগাছ চাপানি ইউনিয়নের মানুষরা।
ক্ষতিগ্রস্ত দশ ইউনিয়নে জনসংখ্যা ৮লাখ ৫৪হাজার ৬৫৬জন। আর বন্যায় আক্রান্ত হয়েছেন ১লাখ ৫২হাজার ৭০৬টি পরিবার।
এদিকে বন্যা মোকাবেলায় ৪০ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ৫০হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া রয়েছে বলে জানান, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ খালেদ রহীম।
পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ খান জানান, নদী বেষ্টিত ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকায় পানি প্রবেশ করায় ঘর বাড়ি হাঁটু পানিতে তলিয়ে রয়েছে।
তিনি বলেন, গতকাল থেকে খাদ্যাভাবে পড়েছেন ইউনিয়নের অন্তত দশ হাজার মানুষ। দ্রুত শুকনো খাবার বিতরণ করা প্রয়োজন। ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা প্রণয়ন করে প্রশাসনের কাছে হস্তান্ত করা হচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন চেয়ারম্যান।
পানি বৃদ্ধির ফলে হুমকীর মুখে পড়েছে টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের চরখড়িবাড়ি গ্রামের স্বেচ্ছাশ্রমে নির্মিত বালু বাঁধটি। যে কোন মুহুর্ত্বে ধসে গেলে পানিতে তলিয়ে যাবে চারটি ওয়ার্ড।
জানতে চাইলে টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম সাহিন বলেন, মাননীয় সংসদ সদস্য, স্থানীয়দের সহযোগীতা এবং পরিষদের সহযোগীতায় বাঁধটি নির্মাণ করা হয়। কিন্তু সেটি স্থায়ী নয়। পানির স্রোত বেড়ে গেলে বাঁধটি বিলিন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড ডালিয়া বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী হাফিজুল ইসলাম জানান, মুলত উজানের ঢলে কারণে পানি বেড়েছে তিস্তায়। তাছাড়া ভারী বৃষ্টিপাতও রয়েছে। এ অবস্থা চলতে থাকবে আরো কয়েক দিন।
তিনি আরো বলেন, ভারতের গজলডোবা ব্যারেজের সবকটি জলকপাট খুলে দেওয়ায় পানির প্রবাহ বেড়ে যায় তিস্তা নদীতে। সেখান থেকে বাংলাদেশ অংশে তিস্তা ব্যারেজ পয়েন্টে আসতে সময় লাগে ১২ঘন্টা। আমরা বিষয়টি জানার পর সার্বিক ভাবে প্রস্তুতি নিয়ে থাকি।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তিস্তা ব্যারেজের সবকটি(৪৪টি) জলকপাট খুলে রেখেছি আমরা। নজর রয়েছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ, এ্যাপ্রোচ বাঁধ, গাইড বাঁধ, স্পার রক্ষায়।
এদিকে তিস্তা ছাড়াও পানি বেড়েছে জেলার উপর দিয়ে বহমান বুড়ি তিস্তা, চারালকাটা, বুড়িখোড়া, যমুনেশ্বরী, খড়খড়িয়া, দেওনাই, খেড়–য়া, শালকি, নাউতারা, কুমলাই, ধুম, ধাইজান, চিকলি নদীতেও।
বিডি প্রতিদিন/ ১১ জুলাই, ২০১৭ / ই জাহান