বগুড়ার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হয়েছে। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয় নেয়া লোকজনের সংখ্যা বাড়ছে। মঙ্গলবার বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে যমুনা নদীর পানি বেড়ে বিপদ সীমার ৪৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বগুড়ায় ভারিবর্ষণের পর যমুনা তীরবর্তী সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনট উপজেলার নতুন নতুন এলাকা বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে।
বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার বন্যা কবলিত এলাকার লোকজন বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধসহ উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। বাঁধে আশ্রয় নেয়া পরিবারগুলোকে তাদের গবাদি পশু নিয়ে গাদাগাদি করে বসবাস করতে দেখা গেছে। উপজেলার কুতুবপুর, কামালপুর, চন্দনবাইশা, চালুয়াবাড়ী, কাজলা, কর্ণিবাড়ী, বোহাইল, হাটশেরপুর ও সারিয়াকান্দি এ নয়টি ইউনিয়নের ৫০টি গ্রামের ১০ হাজার পরিবারের ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে আছে।
বগুড়া জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা শাহারুল ইসলাম মো. আবু হেনা জানান, বন্যাকবলিত এলাকায় নগদ চার লাখ টাকা (জিআর ক্যাশ), ২৫০ মে:টন জিআর চাল বরাদ্দ হয়েছে। এরমধ্যে সারিয়াকান্দি উপজেলায় ১ লাখ টাকা, ১শ মে:টন চাল, সোনাতলা উপজেলায় ২০ মে: টন বিতরণ করা হয়েছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ১৪ ইউনিয়নের ৭৫ গ্রামের ১৩ হাজার ২২২ পরিবার। সারিয়াকান্দি আশ্রয়প্রকল্পে আশ্রয় নিয়েছে ৭৬৫ পরিবার। বাঁধের উপর তিন হাজার ৩৫৫ পরিবার ও বিভিন্ন বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছে।
জেলা শিক্ষা অফিসার গোপাল চন্দ্র জানান, বন্যায় পানি প্রবেশ করায় ৮২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ হয়ে গেছে। সারিয়াকান্দি উপজেলায় ৫৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সোনাতলায় ১২টি ও ধুনটে ৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। এছাড়া পাঁচটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও দুইটি মাদ্রাসায় পানি উঠায় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে বলে শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে।
বগুড়া জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রকৌশলী আনোয়ারুজ্জামান জানান, বাধে আশ্রিতদের জন্য সুপেয় পানির ব্যবস্থা করেছে। ২৩টি হস্তচালিত নলকূপ ও ৫০টি ল্যাট্রিন স্থাপন করা হয়েছে। বন্যা কবলিতদের জন্য প্রয়োজনে আরো ব্যবস্থা করা হবে।
বগুড়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক প্রতুল চন্দ্র জানান, পাট, ধান, সবজি ও বীজতলাসহ তিন হাজার ৮৭৭ হেক্টর জমির ফসল বন্যার পানিতে ক্ষতি হয়েছে। গোটা জেলায় ১৩৬৭ হেক্টর জমির আউশ, ২৪৪০ হেক্টর জমির পাট, ৩০ হেক্টর বীজতলা, ৪০ হেক্টর সবজির ক্ষেত তলিয়ে গেছে। এছাড়া ৮৫টি পুকুর বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে।
বগুড়া জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা গোপাল চন্দ্র জানান, সোনাতলা, সারিয়াকান্দি ও ধুনট উপজেলার পাঁচটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ও দুটি মাদ্রাসায় বন্যার পানি উঠেছে।
বগুড়া জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার হোসেন আলী জানান, সোনাতলা, সারিয়াকান্দি ও ধুনট উপজেলার ৭৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পানি উঠেছে। ১২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা উপস্থিত থাকলেও শিক্ষার্থীরা আসছে না। যে সব বিদ্যালয়ে বন্যার কারণে পড়ালেখা বিঘ্নিত হবে সে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বন্যার পানি চলে যাবার পর অতিরিক্ত ক্লাস নিয়ে তা পুরণ করা হবে।
বিডি প্রতিদিন/১১ জুলাই, ২০১৭/ফারজানা