সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার দশঘর ইউনিয়নে প্রকল্পের নামে চলছে দুর্নীতির মহা উৎসব। বেঁধে দেয়া সময়ের (চলতি বছরের জুন পর্যন্ত) মধ্যে কাজ শেষ না করেই টিআর, কাবিখা, কাবিটা, কর্মসৃজন প্রকল্পের বেশির ভাগ টাকাই তুলে নেয়া হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, এ কাজে নির্দিষ্ট কমিশনের বিনিময়ে সহযোগীতা করেছেন সংশ্লিষ্ট অফিসের অসাধু কর্মকর্তারা। এসব প্রকল্প সম্পর্কে সাধারণ মানুষও কিছুই জানে না। বাঁছ-বিচার না করেই গোপনে লুটে নেওয়া হচ্ছে রাস্তাঘাট ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান উন্নয়নে বরাদ্ধের বিপুল অংকের অর্থ। রীতিমতো হরিলুট হচ্ছে প্রকল্পের টাকা। দীর্ঘ প্রায় ৯ বছর ধরে নির্বাচন না হওয়ার ফলে এই ইউনিয়নে হরিলুটের মহোৎসব চলছে বলে মনে করছেন উপজেলার সচেতন মহল।
জানা গেছে, ২০১৬-২০১৭ অর্থ বছরে ২৪টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে (টিআর, কাবিখা, কাবিটা, কর্মসৃজন প্রকল্প) দশঘর ইউনিয়ন পরিষদে ২৫ লক্ষ ৯২ হাজার ৬শত ৩৮ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়।
রবিবার (১৬জুলাই) সরেজমিনে দশঘর ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, ২৪টি প্রকল্পের মধ্যে ৮টি প্রকল্পের কাজ না করেই তুলে নেয়া হয়েছে টাকা। কাগজে কলমে বাস্তবায়ন দেখানো হলেও দৃশ্যমান কোনো কাজই হয়নি। বাদবাকি প্রকল্পে নামমাত্র কাজ করে দায় সারা হয়েছে। এরমধ্যে সময়মত কাজ না হওয়ায় ফেরত গেছে একটি প্রকল্পের দেড় লক্ষাধিক টাকা। এছাড়াও অনেক জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে নিজের এবং আত্মীয়স্বজনের নামে একাধিক সোলার প্যানেল নেবার অভিযোগ রয়েছে।
আত্মসাতের আমলনামায় দেখা যায়, ‘৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা বরাদ্ধের সাড়ইল শামিমুর রহমানের বাড়ির সামনে থেকে মাছুখালী পাকারাস্তা পর্যন্ত রাস্তা কাম বাঁধ মেরামত, ১ লাখ ৭৬ হাজার টাকা বরাদ্ধের সাড়ইল গুলেরখাড়া হতে কামারগাঁও পর্যন্ত রাস্তা মেরামত, ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা বরাদ্ধের রায়কেলী গ্রামের রইছ উদ্দিনের বাড়ি থেকে গুচ্ছগ্রাম পর্যন্ত রাস্তা মেরামত, ৩৮ হাজার ২২০ টাকা বরাদ্ধের কচরাকেলী গ্রামের রাস্তা মেরামত, ৩৭ হাজার ৫৭৩ টাকা বরাদ্ধের বরুনী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় হতে শাহী খানের বাড়ী পর্যন্ত রাস্তা মেরামত, ৩৭ হাজার টাকা বরাদ্ধের দশঘর গ্রামের খেলার মাঠ উন্নয়ন, ১ লাখ ২৮ হাজার ৮৮০ টাকা বরাদ্ধের দশঘর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মাঠ ভরাট, ২৫ হাজার ৭৬০ টাকা বরাদ্ধের বাউসী গ্রামের মনির বেগের পুত্র এনাম বেগের বাড়িতে, সুশীল ঘোষের পুত্র শ্যামল ঘোষের বাড়িতে দুটি সোলার প্যানেল’-এই প্রকল্পগুলোর কাজই হয়নি। সময়মত কাজ করতে না পারায় চান্দভরাং স্কুল এন্ড কলেজের জন্যে বরাদ্দ ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা ফেরত গেছে। উল্লেখিত প্রকল্প নিয়ে এলাকার জনসাধারণ জানান, ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে এইসব প্রকল্পে কোনো কাজ হয়নি।
২নং ওয়ার্ড সদস্য আবুল হোসেন জানান, আমার সবগুলো প্রকল্পেই কাজ সম্পন্ন হয়েছে। একটি প্রকল্প নিয়ে ভুল বুঝাবুঝির সৃষ্টি হলেও পরে সেটা সমাধান করা হয়।
৪নং ওয়ার্ড সদস্য চুনু মিয়া জানান, আমার দুই প্রকল্পের মধ্যে জনসাধারণের সুবিধার্থে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে ১টি প্রকল্প স্থান পরিবর্তন করে অন্যত্র কাজ করানো হচ্ছে।
৭নং ওয়ার্ড সদস্য হরমুজ আলী জানান, ঝড়বৃষ্টির কারণে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ সম্পন্ন না করতে পারলেও বর্তমানে প্রকল্পের কাজ চলছে।
ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) হাবিবুর রহমান ছাতির তার নিজ প্রকল্পগুলো সম্পর্কে বলেন, এগুলোর কাজ এ মাসের (জুলাই) মধ্যেই শেষ করা হবে।
এব্যাপারে কথা হলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অমিতাভ পরাগ তালুকদার জানান, প্রকল্পগুলো নিয়ে ওঠা অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ না হওয়া প্রকল্পের সাথে সংশ্লিষ্টদের নোটিশ প্রদানের মাধ্যমে বরাদ্ধের অর্থ ফেরত নেয়া হবে।
বিডি প্রতিদিন/১৭ জুলাই ২০১৭/হিমেল