বাগেরহাটের শরনখোলায় ক্লিনিক ব্যবসায়ীর অপ-চিকিৎসার শিকার হয়েছেন দরিদ্র পরিবারের এক গৃহবধূ। ফাতেমা বেগম নামের ওই গৃহবধূ গত চার মাস ধরে হাসপাতালে মৃত্যুর প্রহর গুনছেন। তার অ্যাপেন্ডিসাইটিস অপারেশনের নামে ক্লিনিক চিকিৎসক পায়ু পথের নাড়ি কাটায় এ অবস্থা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এরপর থেকেই ক্রমশ শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকায় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসা নিলেও এখনো স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে পারেনি ফাতেমা। এদিকে এঘটনায় থানায় মামলা করেছে ভুক্তভোগীর পরিবার। পাশাপাশি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।
ফাতেমা ও তার স্বজনরা জানান, বাগেরহাটের শরণখোলায় দিনমজুর হেলাল তালুকদারের স্ত্রী এবং শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী (ভিক্ষুক) সবুর হাওলাদারের একমাত্র মেয়ে ফাতেমা বেগম অ্যাপেন্ডিসাইটিস এর ব্যাথায় বেশ কিছুদিন ভুগছিলেন। গত ১২ মার্চ ফাতেমা শরনখোলা উপজেলা সদরের ছুরাতুন্নেছা সার্জারী ক্লিনিকে ভর্তি হয়। সেখানের চিকিৎসক মো. নজরুল ইসলাম ফারুকী ফাতেমার অ্যাপেন্ডিসাইটিস অপারেশনের জন্য অস্ত্রপচার করেন। কিন্তু চিকিৎসক অ্যাপেন্ডিসাইটিস অপারেশন না করে পায়ু পথের নাড়ি কেটে ফেলে। এর দু'দিন পর উন্নত চিকিৎসার জন্য ফাতেমাকে খুলনায় পাঠায়।
এরপর থেকেই ফাতেমার অবস্থার অবনতি হতে থাকে। কয়েকবার ফাতেমার অস্ত্রপচার করা হয়। কিন্তু ফাতেমা এখনও সুস্থ হয়ে উঠেনি। এরই মধ্যে ভিটেমাটি বিক্রি করে এবং ধার দেনা নিয়ে চিকিৎসার জন্য সাড়ে ৪ লাখ টাকা খরচ করা হয়েছে। এখন ওই পরিবারটি অসহায় হয়ে পড়েছে। বর্তমানে খুলনার একটি ক্লিনিকে ভর্তি রয়েছে ফাতেমা।
ফাতেমার বাবা সবুর হাওলাদার বলেন, ছুরাতুন্নেছা সার্জারী ক্লিনিকের ডাক্তার নজরুল ইসলাম ফারুকীর অপচিকিৎসার কারণে আমার একমাত্র মেয়ে ফাতেমা এখন মৃত্যু শয্যায়। তার চিকিৎসার পেছনে এ পর্যন্ত ধার দেনা করে সাড়ে ৪ লাখ টাকা খরচ করেছি। এখনও চিকিৎসার জন্য অনেক টাকা দরকার। কোথায় কিভাবে টাকা ম্যানেজ করবো- তা জানিনা। আমি ওই ডাক্তারের বিচার চাই।
শরনখোলা উপজেলার রায়েন্দা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান মিলন বলেন, শরনখোলা উপজেলায় চিকিৎসা সেবার নামে একপ্রকার ব্যবসার মনোভাব নিয়ে কতিপয় ব্যক্তি নিয়ম-নীতি উপেক্ষা করে ক্লিনিক গড়ে তুলেছে। সরকারিভাবে উপযুক্ত চিকিৎসক দিয়ে জনসাধারনের সেবার মান বাড়াতে হবে।
চিকিৎসক নজরুল ইসলাম ফারুকীর সাথে কথা হলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ফাতেমার অ্যাপেন্ডিসাইটিস বের করা যায় নাই। ভেতরে মনে হয়েছে ইনফেকশন হয়েছে। তাই পরে ক্লোজ করে দেয়া হয় এবং ফাতেমাকে খুলনায় রেফার করা হয়।
শরনখোলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো: আব্দুল জলিল বলেন, ফাতেমার পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে ক্লিনিকের মালিক ও চিকিৎসকের নামে আদালতের নির্দেশে থানায় মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে।
বিডি প্রতিদিন/১৮ জুলাই ২০১৭/হিমেল