তিন বছরের শিশু পল্লব চন্দ্র সরদার। জন্মের পর থেকে গায়ের চামড়া কুচকানো। বয়স বাড়ার সাথে সাথে চামড়া কুচকানো বাড়তে থাকে। বাড়তে থাকে পল্লবের যন্ত্রণা। এক অজানা রোগে আক্রান্ত হয়ে পল্লবকে যন্ত্রণা ভোগ করতে হচ্ছে। একমাত্র সন্তানের এ অবস্থায় চিকিৎসায় কোন সু-ব্যবস্থা না হওয়ায় নিরুপায় হয়ে পড়েছে পরিবার।
জানা গেছে, নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার মিঠাপুর ইউনিয়নের হাকিমপুর গ্রামের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির সুরেশ সরদারের ছেলে পল্লব চন্দ্র সরদার (৩)। পল্লব জন্মের পর থেকেই গায়ের চামড়া কুচকানো। পা থেকে মাথা পর্যন্ত সমস্ত শরীর চামড়া যেন সাপের চামড়ার মতো দাগ কাটা। এরপর যতোই দিন যায় গায়ের চামড়া শক্ত হতে থাকে। তার অস্থিরতা বাড়তে থাকে। নির্দিষ্ট সময় পর সাপের মতো গায়ের চামড়া পরিবর্তন হয়ে পাতলা ও শরীরের প্রতিটি দাগ থেকে রস বের হওয়া। যন্ত্রণায় ঠিকমত খাওয়া দাওয়া ও ঘুমাতে পারে না। এলাকাবাসীর সহযোগিতায় পল্লবকে চিকিৎসার জন্য ঢাকা পিজি হাসপাতালে নেয়া হয়। চিকিৎসকরা ভিটামিন ও পুষ্টিযুক্ত খাবারের অভাবে এ রোগের উৎপত্তি হয়েছে বলে জানিয়েছেন। এরপরও পল্লবের কোন উন্নতি হয়নি। পাশাপাশি কবিরাজি চিকিৎসা দেয়া হয়। দীর্ঘদিনে চিকিৎসা করেও কোন সুফল হয়নি। দিন আনা-দিন খাওয়া ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির পরিবার এ পর্যন্ত প্রায় তিন লাখ টাকা ছেলের চিকিৎসার পেছনে ব্যয় করলেও কোন লাভ হয়নি। পল্লবের চোখ দিয়ে অনবরত পানি ঝরছে। সব সময় চোখের পাতা ফুলে লাল টগবগে হয়ে থাকে। মনে হয় রক্ত বের হওয়ার উপক্রম। ঠিক মতো ঘুমাতেও পারে না। মুখ বন্ধ হয় না। লালা পড়ে। হাত ও পায়ে ফাঁটা। রোদ-গরম সহ্য করতে পারে না।
এ বিষয়ে প্রতিবেশী জিতেন সরদার ও চন্দনা রানী বলেন, পরিবারটি খুবই দরিদ্র ও অসহায়। আমরা যথাসাধ্য সহযোগিতা করেছি। রোগ নির্ণয় না হওয়ায় সঠিক চিকিৎসা হচ্ছে না।
পল্লবের দাদা মংলা সরদার ও দাদী তাহলা লালমনি বলেন, জন্মের পর থেকে সমস্যা দেখা দেয়। পরিবারের একমাত্র সন্তান পল্লব। অনেক ডাক্তার-কবিরাজি দেখিয়েছি। কোনোভাল হওয়ার লক্ষণ দেখি না। এ নিয়ে পরিবারের কারো শান্তি নাই। বাচ্চাটার সুচিকিৎসার জন্য প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করছি।
পল্লবের মা প্রার্থনা রানী বলেন, নির্দিষ্ট সময় পর পর সাপের মতো চামড়া উঠে গিয়ে পাতলা হয়ে যায়। অনেক সময় ব্লেড দিয়ে কেটে দিতে হয়। সময় যত যাচ্ছে সমস্যা ততই বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাচ্চার শরীর থেকে প্রচুর গরম বা তাপ বের হয়। তখন কোলে করে নিয়ে থাকাও কষ্টকর হয়ে উঠে। ঠাণ্ডা পরিবেশ, ঘরের মধ্যে, গাছের ছায়া ও পুকুর পাড়ে নিয়ে বসে থাকতে হয়। মাঝে মধ্যে নলকুপের ঠাণ্ডা পানিতে গামছা ভিজিয়ে সমস্ত শরীর মুছে দিতে হয় ও ভেজা গামছা পেঁচিয়ে রাখতে হয়। এতে কিছুটা আরাম বোধ করে।
সমাজসেবী রজত গোস্বামী বলেন, সমাজের বৃত্তবানদের কাছে আমার অনুরোধ আর্থিকভাবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলে চিকিৎসার মাধ্যমে বাচ্চাটি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবে। এতে সে সমাজের বোঝা না হয়ে সম্পদে রুপান্তরিত হবে।
মিঠাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফিরোজ হোসেন বলেন, বাচ্চাটি দীর্ঘ দিন ধরে কষ্ট ভোগ করছে। দেশে জটিল জটিল রোগের চিকিৎসা হচ্ছে। আশা করছি, এ রোগের কারণ উৎঘাটন করে সু-চিকিৎসা করা সম্ভব। প্রধানমন্ত্রীসহ স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতার হাত বাড়ানোর জন্য অনুরোধ জানান তিনি।
এ বিষয়ে বদলগাছী উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. জাহিদ নজরুল চৌধূরী বলেন, জ্বিনগত কোন ত্রুটির কারণে এ সমস্যা হতে পারে। অথবা জটিল কোন চর্ম রোগও হতে পারে। তবে এটা নির্ণয়ের জন্য কোন স্পেশালাইজড হাসপাতাল যেখানে চর্ম বা জ্বিনগত ত্রুটি নিয়ে চিকিৎসা করা হয়। সেখানে গেলে হয়তো রোগ নির্ণয় করা সম্ভব হবে।
শিশু পল্লবকে সাহায্য করবার জন্য এই ফোন নম্বরে যোগযোগ করা যেতে পারে। পল্লবের মা প্রার্থনা রানী: ০১৮২২-৪৪৮৬০৭ এবং প্রার্থনা রানীর দেবর- রনজন কুমার, বিকাশ নম্বর: ০১৭৫৭-১৯৫০৬৬
বিডি প্রতিদিন/৪ আগস্ট, ২০১৭/ফারজানা