কদিন পরই হিন্দু ধর্মের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। দেবী দুর্গা আসছেন মর্ত্যলোকে। তার আগমন ঘিরে তাই এখন ব্যস্ত সিরাজগঞ্জের পালপাড়ার প্রতিমা তৈরির কারিগররা। দিনরাত পরিশ্রম করে নিপুণ হাতে গড়ছে দেব-দেবীর অবয়ব।
পুরুষ কারিগরের পাশাপাশি নারীরাও কাঁদামাটি দিয়ে পরম যত্নে দেবীর মুকুট, হাতের বাজু, গলার মালা, শাড়ির পাইর, প্রিন্ট ও ঠাকুরের চুল তৈরি করছে।
দিনরাত সমান তালে প্রতিমা তৈরি করে ব্যস্ত সময় পার করছেন সিরাজগঞ্জের ভদ্রঘাট ইউনিয়নের পালপাড়া প্রতিমা কারিগররা। তবে প্রতিমা তৈরিতে যে পরিশ্রম আর খরচ হয় কিন্তু বিক্রি করে বেশি লাভ হয় না। এজন্য সরকারের কাছে সহায়তার দাবি করেছেন প্রতিমা কারিগররা।
সরেজমিনে দেখা যায়, কামারখন্দ উপজেলার ভদ্রঘাট ইউনিয়নের বাজার ভদ্রঘাট পালপাড়া গ্রামে প্রায় ৩০-৪০টি হিন্দু পরিবার রয়েছে। এর মধ্যে অধিকাংশই প্রতিমা তৈরির কারিগর। নারী-পুরুষ সকলেই প্রতিমা তৈরির কাজ করে। প্রতিমা তৈরি করেই চলে তাদের সংসার। সারা বছর তাদের কদর না থাকলেও পূজার আগে তাদের কদর বেড়ে যায়।
পূজার একমাস আগ থেকে শুরু হয় প্রতিমা তৈরির কাজ। এবার শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে এখানে প্রতিমা তৈরির ধুম পড়েছে। সকাল থেকে রাত অবধি চলছে প্রতিমা তৈরি। গ্রামের বধূরা নিপুণ হাতে পরম যত্নে দেবীর মুকুট, হাতের বাজু, গলার মালা, শাড়ির পাইর, প্রিন্ট, ঠাকুরের চুল ও মাথা তৈরি করছে। আর পুরুষেরা সেগুলো সঠিকভাবে লাগিয়ে মাটি প্রলেপ লাগিয়ে দিচ্ছে। কেউ কেউ রং তুলিতে দেবীকে ফুটিয়ে তুলছে।
প্রতিবছর দুর্গাপূজায় এ গ্রামের তৈরি প্রতিমা সিরাজগঞ্জ, রাজশাহী, বগুড়া, নাটোর ও জামালপুরসহ বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি হয়ে থাকে। তবে পরিবারের সকলেই অক্লান্ত পরিশ্রম করে প্রতিমা তৈরি করলেও বেশি খরচের কারণে মুনাফা অর্জন করতে পারছে না এসব কারিগররা। কঠোর পরিশ্রম করেও মানবেতর জীবন কাটাতে হচ্ছে তাদের। তাদের দাবি সরকার যদি স্বল্পসুদে বা আর্থিক সহায়তা করে এ শিল্পটাকে টিকিয়ে রাখত, তাহলে তাদের পরিবারের স্বচ্ছলতা আসত।
এদিকে এ বছর জেলার প্রায় ৪০০ মণ্ডপে পূজা উদযাপন হবে বলে আয়োজকরা জানিয়েছেন।
মৃৎশিল্পী দীপ্ত রানী ও বিকৃষ্ণা রানী পাল জানান, পুরুষদের সহযোগিতা করতেই প্রতিমা কাজ করছি। তবে যে টাকা আয় হয় তা দিয়ে সংসার চলে না। সরকার যদি সহায়তা করতো তবে সংসার স্বচ্ছলভাবে চলতো।
মৃৎশিল্পী শ্রীকান্ত পাল জানান, একদিকে সুতা, বাঁশ-কাঠের দাম বৃদ্ধি অন্যদিকে পরিবারের সকলকে নিয়েই কাজ করি। এতে যে পরিশ্রম হয় সে পরিমাণ মূল্য আমরা পাই না। সরকার যদি সহায়তা করতো তবে এ শিল্পটি আরও উন্নত করা যেতো।
সিরাজগঞ্জ জেলা পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ কুমার কানু জানান, নিপুণ হাতে যারা যারা দুর্গা মাকে তৈরি করেন তাদের অবস্থা করুণ। এসব কারিগররা দারিদ্রসীমার নিচে বাস করেন। তাদের জীবনমান উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আর্থিক সহায়তা দাবিও পূজা উদযাপন কমিটির এই নেতার।
বিডি প্রতিদিন/১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭/আরাফাত