ধামরাইয়ের কুশিয়ারা এলাকার বংশী নদী পাড়ে যৌতুক ও দাম্পত্য কলহের জের ধরে এক গৃহবধূকে হত্যা করে লাশ গুমের অভিযোগ উঠেছে শ্বশুর বাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে। এঘটনায় ওই গৃহবধূর পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় একটি মামলা দায়ের করা হলে পুুলিশ অভিযান চালিয়ে একজনকে আটক করেছে।
ওই গৃবধূর নাম ঝর্না আক্তার (১৯)। তিনি গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর উপজেলার বড় মাটিয়া গ্রামের রওশন আলী কন্যা। ২০১৭ সালের ১৩ ই র্মাচ ধামরাই উপজেলার বড় কুশিয়ারা গ্রামের আব্দুর সাত্তারের ছেলে শাহাদাৎ এর সাথে পারিবারিকভাবে ঝর্না আক্তারের বিয়ে হয়।
ঝর্নার মা আমেনা বেগম সাংবাদিকদের জানান, বিয়ের পর থেকেই মেয়ের জামাই শাহাদাৎ হোসেন, তার মা হালিমা বেগম ও বাবা আব্দুর সাত্তার মিয়া বিভিন্ন সময় যৌতুকের জন্য ঝর্নাকে চাপ সৃষ্টিসহ শারিরীক নির্যাতন চালাতো। যৌতুকের টাকা দিতে দিতে না পারায় তাদের মধ্যে ঝগড়া বিবাদ লেগে থাকতো। এরই মধ্যে ঝর্নাকে মারধর করে দ্বিতীয় বিয়ে করার জন্যে জোরপূর্বক স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেয় শাহাদাৎ। পরবর্তীতে এলাকার মাদবার আবুল হাসেমের মাধ্যমে সালিশ বৈঠক করে স্ট্যাম্প উদ্ধার করা হয়।
এরপর ঘর বানানোর কথা বলে শ্বশুর বাড়িতে ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন শাহাদাৎ। আমরা টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে ফের চলে আসে ঝর্নার উপর অমানুষিক নির্যাতন। একপর্যায়ে দাম্পত্য কলহের জের ধরে শাহাদাৎ ও তার বাবা-মা এবং বোন মিলে আমার মেয়েকে মেরে বংশী নদীতে ফেলে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেন আমেনা বেগম।
তিনি আরও বলেন, টানা ৭ দিন ধরে বংশী নদীতে নৌকা দিয়ে মেয়েকে খুঁজতে বের হই আমরা। এ ঘটনার ধামচাপা দেওয়ার জন্য বিচার করা হয়। অনেক খোঁজাখুজির পরেও ঝর্নাকে না পাওয়া গেলে ঘটনার দুই দিন পর ধামরাই থানায় নিখোঁজের একটি সাধারণ ডায়েরি করে। ধামরাই থানা পুলিশ বুধবার সকালে শাহাদাৎ এর বোন আমেনা খাতুনকে এ ঘটনায় ৫৪ ধারায় গ্রেফতার করে।
ঝর্নার মা আমেনা বেগম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ঝর্নাকে তার শ্বশুর বাড়ির পরিবারের লোকজন মিলে হত্যা করে লাশ গুম করে ফেলেছে বলে তার ধারণা। সে কখনোই বাড়ি ছেড়ে কোথাও যেতে পারে না। কিন্তু শ্বশুরবাড়ির লোকজন ঝর্নার সন্ধান না করে তার সম্পর্কে বিভিন্ন মিথ্যা গুজব সাজিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।
এ ব্যপারে ধামরাই থানার উপ-পরিদর্শক আতিয়ার হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, গৃহবধূ ঝর্নাকে যৌতুকের জন্য মারধর করা হয়েছে। পরিবারে দাবি হত্যার পর লাশ গুম করে নদীতে ফেলে দেওয়া হয়েছে। এই ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেও আমেনা নামে একজনকে আটক করেছে পুলিশ।
ঢাকা জেলার অতিক্তির পুলিশ সুপার খোরশেদ আলম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এই ঘটনার সাথে জড়িত আমেনা নামের এক নারীকে আটক করা হয়। গৃহবধূকে কি কারণে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না সেই ব্যাপারে আমাদের পুলিশ বিভিন্ন এলাকার অভিযান অব্যাহত রয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারনা করা হচ্ছে, সময়মত যৌতুকের টাকা না পাওয়ার এমন ঘটনা ঘটে পারে। সেই বিষয় আমরা তদন্ত করছি।
এদিকে ধামরাই থেকে আমেনা নামের চার বছরের এক শিশুকে অপহরণ করা হয়েছে। শিশুটির পরিবার এই ঘটনায় ধামরাই থানায় একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেছে। এছাড়া পুলিশ অপহণের ঘটনায় জড়িত থাকার সন্দেহে বিউটি নামে এক নারী পোশাক শ্রমিককে আটক করেছে। সোমবার রাতে অপহৃত শিশু আমেনার বাবা বাবু বাদী হয়ে ধামরাই থানায় একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেন।
পুলিশ জানায়, অপহৃত শিশু আমেনার বাবা বাবুর ফুফাতো বোন বিউটি আক্তার গত শুক্রবার ধামরাইয়ের ভাড়াড়িয়া ইউনিয়নের কাটাবৈর এলাকার থেকে বেড়ানোর কথা বলে বাসা থেকে আমেনাকে নিয়ে কৌশলে অপহরণ করে। পরে গত দুই দিন শিশু আমেনার পরিবার এদিক-সেদিক খোঁজাখুঁজি করে কোন সন্ধান না পেয়ে ধামরাই থানায় একটি অপহরণ মামলা দায়ের করে। থানায় মামলা দায়েরের পরপরই পুলিশ আমেনার বাবার ফুফাতো বোন পোশাক শ্রমিক বিউটিকে আটক করে। বিউটি লাশ বংশী ব্রিজ উপর থেকে নদীতে ফেলে দেয়ার কথা স্বীকার করে।
বিডি প্রতিদিন/৪ অক্টোবর ২০১৭/হিমেল