বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের নতুন কমিটির সম্ভাব্য সভাপতি ও সম্পাদক প্রার্থী বন্দুক (এয়ারগান) নিয়ে পোজ দিয়ে ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপলোড করার ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয়েছে। এ ঘটনায় বিব্রত ছাত্রলীগের উপজেলা ও জেলা কমিটির দায়িত্বশীল নেতারা। তারা ওই ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, সংগঠনের জন্য ক্ষতিকর এমন কোন আপত্তিকর মন্তব্য কেউ করে থাকলে তাদের নতুন কমিটিতে ঠাই হবেনা। এ ঘটনায় বিব্রত ছাত্রলীগ, এমনকি আওয়ামী লীগের নেতারাও।
গত রবিবার রাতে বাবুগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি প্রার্থী প্রসেনজিৎ দাস অপু এবং সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী কাওসার মাহমুদ মুন্না বন্দুক হাতে নিশানা তাক করে নিজেদের আলাদা আলাদা ছবি তোলেন। বন্দুক হাতে ওই ফটোসেশন করা তিনটি ছবি তারা রবিবার রাত ১১টা ২১ মিনিটে নিজেদের ফেসবুক ওয়ালে আপলোড করেন। সেই সঙ্গে তারা ছবির উপরে ‘বন্দুক দিয়ে টার্গেট প্র্যাকটিস করি, বন্দুকের নিশানা এবার তুই’ লিখে স্ট্যাটাস দেন। কাওসার মাহমুদ মুন্নার ওয়াল থেকে পোস্ট করে প্রসেনজিৎ দাসকে ট্যাগ করা হয়। বন্দুক হাতে ছাত্রলীগ নেতাদের ছবি আপলোড করার পর সেই ছবি ভাইরাল হয়ে যায়। চারিদিকে শুরু হয় সমালোচনার ঝড়।
গত রবিবার রাতে ওই ছবি আপলোড করার পর থেকে আজ বুধবার পর্যন্ত সামাজিক, রাজনৈতিক অঙ্গন এবং ফেসবুকে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলে।
নাম না প্রকাশের শর্তে বাবুগঞ্জ উপজেলা ছাত্রদল ও ছাত্রমৈত্রীর একাধিক নেতা বলেন, ছাত্রলীগ ক্ষমতার আস্ফালন করছে। তাদের এ ধরণের মন্তব্য সুস্থ রাজনীতি চর্চার জন্য অশুভ সংকেত। এর মাধ্যমে ছাত্রলীগ যে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে তার প্রমাণ পাওয়া যায়। পদ পাওয়ার আগেই যদি তারা এ রকম মন্তব্য করেন, এরপর পদ পেলে তারা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেবেন।
বাবুগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আক্তারুজ্জামান মিলন মৃধা জানান, প্রসেনজিৎ দাস অপু এবং কাওসার মাহমুদ মুন্না এমন সব নেতাদের পাশে থাকেন তাদের বিরুদ্ধে কিছু বলা কঠিন। তারা যে মন্তব্য করেছে সেটা নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এ ধরণের মন্তব্য দলের কর্মীদের জন্য এক ধরণের হুমকী।
উপজেলা ছাত্রলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. সোহেল আহমেদ এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বলেন, ছাত্রলীগ নামধারী কিছু সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন পন্থায় দলে অনুপ্রবেশ করছে। এদের ব্যাপারে এখনই সতর্ক না হলে ভবিষ্যতে এরা আওয়ামী লীগের জন্য মহাবিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।
জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি হেমায়েতউদ্দিন সুমন সেরনিয়াবাত জানান, বাবুগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগ কমিটির মেয়াদ অনেক আগে শেষ হয়েছে। কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠন করার প্রস্তুতি চলছে। ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা পদ পেতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। প্রসেনজিৎ দাস অপু ছাত্রলীগের সভাপতি পদের প্রার্থী এমনটা জানেন, মুন্না কোন পদ চায় সেটি তার জানা নেই। সংগঠনের জন্য ক্ষতিকর কিংবা আপত্তিকর কোন মন্তব্য কেউ করে থাকলে তারা নতুন কমিটিতে স্থান পাবে না। যাদের ছাত্রত্ব আছে এবং বয়স বিবেচনা করে পদপদবী দেওয়া হবে।
অভিযুক্ত প্রসেনজিৎ দাস অপু বলেন, বন্দুক নয়, বরিশালের মুক্তিযোদ্ধা পার্কে এয়ারগান দিয়ে বেলুন ফুটাচ্ছিলেন। মুন্না সেই ছবি তুলে ফেসবুকে দিয়ে তাকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলেছে। ওই ছবি আপলোড, কিংবা ছবির সাথে ওই ধরণের মন্তব্য করা উচিত হয়নি।
অপু বলেন, ওই পোস্টটি ডিলেট করা হয়েছে। প্রতিপক্ষের কাউকে হুমকী বা অন্য কোন উদ্দেশ্যে ওই ছবি পোস্ট করা হয়নি বলে দাবি করেন অপু। অপরদিকে ছবি আপলোড করা মুন্নার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীম বলেন, যারা বন্দুক হাতে নিয়ে পোজ দিয়ে ছবি তুলে সেই ছবি ফেসবুকে আপলোড করেছে, তারা ছাত্রলীগের কোন পদ-পদবী নেই। ছাত্রলীগ একটি ঐহিত্যবাহী সংগঠন। এই ধরনের বিকৃত রুচির কেউ যাতে ছাত্রলীগের কোন কমিটিতে স্থান না পায় সেই বিষয়ে জেলা ছাত্রলীগ নেতাদের সতর্ক থাকতে হবে। একই সাথে তাদের বিরুদ্ধে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন নিরাপত্তা বিশ্লেষক আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদ ফারুক শামীম।
বরিশালের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোল্লা আজাদ হোসেন বলেন, বন্দুক নিয়ে ছবি তুলে সেই ছবি ফেসবুকে আপলোড করে স্ট্যাটাস দেওয়ার বিষয়টি জেলা পুলিশের নজরে এসেছে। পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করে দেখছে, আসল ঘটনাটি কি তা তদন্তে করে বের করা হবে। কেউ অভিযুক্ত হলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবে পুলিশ।
বিডি প্রতিদিন/৪ অক্টোবর ২০১৭/হিমেল