বরিশাল মহানগর মহিলা দলের কর্মী সভায় প্রধান অতিথি বিএনপি’র যুগ্ম মহাসচিব ও মহানগর সভাপতি সাবেক মেয়র অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ারের সাথে প্রকাশ্য বাক যুদ্ধে জড়িয়েছেন বিএনপি’র বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক সংরক্ষিত এমপি অ্যাডভোকেট বিলকিস জাহান শিরিন।
মহানগর মহিলা দলের প্রস্তাবিত কমিটির সভাপতির নাম বাদ দেওয়াকে কেন্দ্র করে সরোয়ারের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন শিরিন। এ ঘটনার পর সরোয়ার ও শিরিন সহ মহিলা দলের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সামনে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন বিএনপি’র দুই দল নেতাকর্মী।
বুধবার সকাল পৌঁনে ১১টার দিকে নগরীর সদর রোডের অশ্বিনী কুমার হলে এসব ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ ছাত্র ও যুবদল নেতাকর্মীদের সভাস্থল থেকে বের করে দেয়ার পর শান্তিপূর্ণভাবে সভা শুরু হয়।
মহানগর মহিলা দলের কর্মী সভার অনুষ্ঠান মঞ্চে অন্যান্য অতিথিদের নাম লেখা হলেও সভার সভাপতির নাম লেখা হয়নি। মহানগর মহিলা দলের সম্ভাব্য সভাপতি শিরিনপন্থী নেতা শামীমা আকবরের নাম বাদ দেয়ায় ঘটনার সূত্রপাত।
আনুষ্ঠানিকভাবে কর্মী সভা শুরুর আগ মুহূর্তে নেতা-কর্মীদের সামনে মঞ্চে সভার প্রধান অতিথি মহানগর বিএনপির সভাপতি ও কেন্দ্রিয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব সরোয়ারের সঙ্গে প্রকাশ্য বাকযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন বিএনপি’র বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান।
মহানগর মহিলা দলের কর্মী সভার ব্যানারে প্রস্তাবিত কমিটির সভাপতি শামীমা আকবরের নাম না থাকায় প্রতিবাদ জানান শিরিন। এ সময় তিনি মঞ্চে থাকা কর্মী সভার প্রধান অতিথি সরোয়ারের কাছে শামীমা আকবরের নাম বাদ দেওয়ার কারণ জানতে চান। বিষয়টি নিয়ে দুই কেন্দ্রীয় নেতা প্রকাশ্য বাকযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন। পরে কেন্দ্রীয় মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস এবং সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
বিএনপি’র বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট বিলকিস জাহান শিরিন বলেন, মহিলা দলের কর্মসূচি, সেখানে নারীরা সবকিছু করবে। কিন্তু মহানগর বিএনপির সভাপতি কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান সরোয়ার সভায় প্রভাব বিস্তার করেছেন। মহিলা দলের প্রস্তাবিত কমিটি তার পরামর্শেই করা হয়েছে। তিনি মহিলা দলের প্রস্তাবিত সভাপতির নাম বাদ দিয়েছেন। এ নিয়ে তার সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়েছে।
সভার প্রধান অতিথি বিএনপি’র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার বলেন, প্রস্তাবিত কমিটিতে সমস্যা ধরা পড়েছে। এ কারণে সভাপতির নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। সেটা নিয়ে শিরিনের সঙ্গে তার বাদানুবাদ হয়েছে। পরে কেন্দ্রীয় মহিলা দলের সভাপতি সভায় সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এ ঘটনা নিয়ে কর্মীদের মধ্যেও একটু উত্তেজনা দেখা দিয়েছিলো।
এদিকে দুই নেতার বাদানুবাদে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলে আধিপত্য বিস্তার এবং অভ্যন্তরীন কোন্দলের জের ধরে দুই দল নেতাকর্মী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। সংঘর্ষে জেলা ছাত্রদল সদস্য শিরিনপন্থী সাইমুন আহমেদ কালু, ছাত্রদল কর্মী নিলয় ও সবুজ আহত হয়। তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
সংঘর্ষের কারণে সভাস্থলে চরম বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। পরে পুলিশ ছাত্র ও যুবদল নেতাকর্মীদের হল থেকে বের করে দিলে শান্তিপূর্ণভাবে সভা শুরু হয়।
জাতীয়তাবাদী মহিলা দল কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আফরোজা আব্বাসকে অনুষ্ঠানের উদ্ধোধক হলেও উত্তপ্ত পরিস্থিতির কারণে পরে তিনি সভার সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
কর্মী সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার। প্রধান বক্তা ছিলেন মহিলা দল কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিন, বিএনপি কেন্দ্রিয় কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুল হক নান্নু, সদস্য জেবা আহমেদ, মহিলা দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হেলেন জেরিন খান ও মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারন সম্পাদক জিয়াউদ্দিন শিকদার জিয়া।
২০০৫ সালে বিলকিস জাহান শিরিনকে সভাপতি এবং শামীমা আকবরকে সাধারণ সম্পাদক করে মহানগর মহিলা দলের কমিটি গঠন করা হয়। অন্যদিকে শাহানা সালেহ’কে সভাপতি এবং লাইজু বেগমকে সাধারণ সম্পাদক করে জেলা মহিলা দলের কমিটি গঠন করা হয়।
দীর্ঘদিন কমিটি না হওয়ায় এবং বিলকিস জাহান শিরিন বিএনপি’র বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক হওয়ার পর এক নেতার এক পদ নীতি অনুসরন করে মহানগর মহিলা দলের সভাপতি পদ থেকে সরে দাঁড়ান।
বিডি প্রতিদিন/ সালাহ উদ্দীন