ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ পরিবেশে রাঙামাটিতে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব প্রবারণা পূর্ণিমা উদযাপিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার ভোরে রাঙামাটি রাজবন বিহারে শুরু হয় প্রবারণা পূর্ণিমা উৎসব। বুদ্ধ পতাকা উত্তোলনের মধ্যেদিয়ে সূচনা করা হয় ধর্মীয় উৎসব। এরপর ভিক্ষুক-সংঘের পিন্ডদান ও প্রাতঃরাশ, বুদ্ধপূজা, অষ্ট পরিষ্কার দান, সংঘদান, উৎসর্গসহ ভক্ত ও পূণ্যার্থীদের বনভান্তের ধর্মীয় দেশনা দেওয়া হয়। এসময় দুর-দূরান্ত থেকে বিহারের আগত পূণ্যার্থীদের ঢল নামে। ভক্তদের সাধু সাধু সাধু ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠে পুরো রাজবন বিহার এলাকা।
অনুষ্ঠানে মহাপরিনির্বাণে বৌদ্ধ আর্যপুরুষ, শ্রাবকবুদ্ধ ও মহাসাধক শ্রীমৎ সাধনানন্দ মহাস্থবির বনভান্তের শান্তির প্রার্থনা জানান অনুগত শিয্যমণ্ডলীসহ অগণিত পুণ্যার্থী। এসময় সদ্ধর্মপ্রাণ দায়ক-দায়িকাদের উদ্দেশ্যে ধর্মীয় দেশনা দেন বনভান্তের উত্তরসূরী শ্রীমৎ প্রজ্ঞালংকার মহাস্থবির।
অনুষ্ঠানে সমবেত হাজার হাজার পুণ্যার্থীর উদ্দেশে বুদ্ধের অহিংসা পরম নীতি এবং বনভান্তের আদর্শে হিংসা, রাগ, অহংকার, লোভ, মোহ ও মিথ্যা দৃষ্টি পরিহার করে নিজেকে সর্বদা সৎপথে পরিচালিত করার হিতোপদেশ দেন ভিক্ষুসংঘ।
অন্যদিকে, প্রবারণা পূর্ণিমা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব হলেও এবার ছিল ভিন্নমাত্রা। সাধারণত প্রবারণা পূর্ণিমান উৎসবের মূল আকর্ষণ ফানুস। কিন্তু এবার উৎসবে রাঙামাটির আকাঁশে উড়েনি কোন ফানুস। পার্বত্যাঞ্চলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মধ্যে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের নারী-পুরুষ, তরুণ-তরুণীরা হাজার প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মধ্যদিয়েই পালন করেছে দিনটি। তাই এবার প্রবারণা পূর্ণিমায় ছিলনা তেমন উৎসবের আমেজ।
এ ব্যাপারে রাঙামাটি রাজবন বিহার উপসাক-উপসিকা পরিষদের সভাপতি গৌতম দেওয়া জানান, রাঙামাটি রাজবন বিহারে ধর্মীয় রীতি-আচার সবই পালন করা হবে। তবে বাতিল করা হয়েছে ফানুস উড়ানো পর্বটি। মিয়ানমারে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর নৃশংসতার প্রতিবাদে আমরা এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, প্রবারণা পূর্ণিমা তিথিতে বৌদ্ধ সাধকরা টানা তিন মাস বর্ষাবাস সমাপ্ত করে ধর্ম প্রচারে বেরিয়ে পড়েন। প্রবারণা পূর্ণিমার দিন থেকে টানা এক মাস ধরে বিভিন্ন বৌদ্ধ মন্দিরে প্রধান ধর্মীয় উৎসব দানোত্তম কঠিন চীবর দান উদযাপিত হয়ে থাকে। তাই বৌদ্ধদের জন্য এই পূর্ণিমাটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
বিডি প্রতিদিন/০৫ অক্টোবর ২০১৭/আরাফাত