এতিম শিশু মীম!।প্রতিনিয়ত খোঁজে তার বাবা ও মাকে। কেঁদে কেঁদে ফিরে বলে মোর বাপ, মোর মা কই।
মীম ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার আমজানখোর ইউনিয়নের বারোসা গ্রামের মজিবর রহমানের মেয়ে। তার বয়স এখন আট বছর। জন্মের পাঁচ মাস পর তার বাবা ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে নিহত হয়।
কিছুদিন পর তার মা দ্বিতীয় বিয়ে করে অনত্র চলে যান। এ অবস্থায় অন্যান্য শিশুদের মতো পিতা মাতার ভালবাসা না পেয়ে দুঃখে কষ্টে, খেয়ে না খেয়ে বৃদ্ধ দাদি মর্জিনার সঙ্গে অন্যের বাড়িতে আশ্রিত হয়ে আছে মীম।
পাঁচ মাস বয়স থেকেই মীমকে নিয়ে দাদি মর্জিনা নিজের খাবার জোগাড় করার পাশাপাশি শিশু মীমের খাবার জোগাড় করা কঠিন হয়ে পরে। বৃদ্ধ বয়সে অন্যের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ধরণা আর প্ররিশ্রম করেও যেন কুলকিনারা হয়নি এখন পর্যন্ত। এভাবে বেড়ে উঠে শিশু মীম। মীম যত বড় হয় দাদি বয়সের ভাড়ে দিন দিন নুয্য হয়ে পরছে। যোগ হয়েছে অসুস্থতা।
নিজে অসুস্থ হয়ে কুড়ে ঘরের বিছানায় পরে থাকা আর শিশু মীমের চিন্তায় এখন দিন কাটছে তার। ভাবনা একটাই মৃত্যুর আগে কার কাছে রেখে যাবেন এতিম নাতনিকে?
এদিকে অবুঝ মীম যাকে কাছে পায় তার কাছেই বাবা-মায়ের কথা জিজ্ঞেস করে। বাড়ির পাশ দিয়ে কাউকে দেখলেই দৌড়ে গিয়ে কাঁন্নাজড়িত কণ্ঠে বলে মোর বাপ, মা কই।
খোজ নিয়ে জানা গেছে, হতদরিদ্র মজিবর মারা যাওয়ার সময় পরিবারের জন্য তেমন কিছুই রেখে যেতে পারেননি। ফলে কিছুদিন পরেই তার স্ত্রী দ্বিতীয় বিয়ে করে অন্যত্র চলে যান। এরপর থেকে শিশু মীমকে আগলে রেখেছেন দাদি মর্জিনা।
বারোসা গ্রামে গিয়ে কথা হয় বৃদ্ধা মর্জিনার সঙ্গে। তিনি বলেন, এ বাড়ি- ও বাড়ি ঘুরে যা জোটে তা খেয়ে হামরা (আমরা) বেঁচে আছি। এলা ‘মোর (আমার) যাবার সময় হইছে, যাবো মীমওক কায় দেখিবে বলেই মূর্ছা যান এই বৃদ্ধা।
বিজিবি’র তথ্য মতে, দুই দশকে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বিএসএফের গুলিতে অন্তত শতাধিক বাংলাদেশি নাগরিক নিহত হয়েছেন।
আমজানখোর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আকালু বলেন, বিএসএফের বর্বরতায় তার এলাকার অনেকেই নিহত হয়েছেন। এর ফলে অনেকেই আপনজন হারিয়ে অসহায় অবস্থায় পড়েছে। এরমধ্যে নারী ও শিশুরা সবচেয়ে দুর্দশাগ্রস্ত বলে জানান এ জনপ্রতিনিধি।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রতিনিধি বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার নির্বাহী অফিসার আব্দুল মান্নান এর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, আমি আমজানখোর ইউনিয়নের শিশু মীমের কথা জেনে তাকে দেখতে গিয়েছি। দাদি মর্জিনার চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। শিশুটির ভবিষ্যত নিয়ে আমরা ভাবছি। এছাড়া তার দাদিকে বয়স্কভাতা কার্ড দিয়ে সহায়তা করা হবে বলে তিনি আশ্বস্ত করেন।
বিডিপ্রতিদিন/ ৩১ অক্টোবর, ২০১৭/ ই জাহান