বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ নিয়ে কলারোয়া উপজেলা প্রশাসনের আয়োজিত আনন্দ শোভাযাত্রা ও আলোচনা সভায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পাল্টা-পাল্টি বক্তব্য দেওয়াকে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে পন্ড হয়ে গেছে ইউনেস্কো কতৃক স্বীকৃতি পাওয়ায় বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ নিয়ে সরকারি অনুষ্ঠান। দুই গ্রুপের দিনভর দফায় দফায় সংঘর্ষে ৫ পুলিশসহ কমপক্ষে উভায় গ্রুপের ৩০ জন আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ১৫ রাউন্ড ফাকা গুলি বর্ষণ করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে দাঙ্গা পুলিশ। এতে উপজেলা সদরে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
কলারোয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বিপ্লব কুমার জানান, বঙ্গবন্ধুর ৭ ই মার্চের ভাষন ইউনেস্কো কর্তৃক স্বীকৃতি পাওয়ায় সকাল ১১ টার দিকে কলারোয়া উপজেলা পরিষদ চত্বরে সরকারি ভাবে অনুষ্ঠান পালিত হচ্ছিল। এসময় অনুষ্ঠানে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি উপজেলা চেয়ারম্যান ফিরোজ আহমেদ স্বপন ও সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম লাল্টুর মধ্যে দলীয় কোন্দল নিয়ে পাল্টা পাল্টি বক্তব্য দেয়। এতে সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম লাল্টুর কর্মী সমর্থকরা সভাপতি উপজেলা চেয়ারম্যান ফিরোজ আহমেদ স্বপনের উপর চড়াও হয়। এসময় উভয় গ্রুপের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। ঘন্টাব্যাপী সংঘর্ষে চেয়ার ভাঙচুর, ককটেল বিস্ফোরণ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, হামলা-পাল্টা হামলায় উপজেলা পরিষদ চত্ত্বর রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। উপজেলা চেয়ারম্যান অফিসের পিয়ন মশিয়ার রহমানসহ আহত হয় আওয়ামী লীগের উভায় গ্রুপের ১৫ জন। এছাড়া ইটপাটকেল নিক্ষেপে কলারোয়া থানা পুলিশের এএসআই আব্দুর রহমান, আহসান হাবিব,পুলিশ সদস্য আব্দুল হাই,রুহুল,ও তিতুলসহ ৫ পুলিশ আহত হয়। এক পর্যায়ে পুলিশ লাটিচার্জ শুরু করে। বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ ১৫ রাউন্ড গুলিবর্ষণ করে।
এসময় উপজেলা পরিষদে উপজেলা চেয়ারম্যান চেয়ারম্যান ফিরোজ আহমেদ স্বপন দুই ঘন্টা আবরুদ্ব হয়ে পড়ে। পন্ড হয়ে যায় অনুষ্ঠান। ঘটনার পরপরি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনিরা পারভিনসহ অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তা ১২টি ইউপি চেয়ারম্যান, ১২ জন পৌর কাউন্সিলর, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি সম্পাদকসহ অনেকে দোতলায় মিটিং করছিলেন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, এ সময় আমিনুল ইসলাম লাল্টু, যুবলীগ সভাপতি শাহজাদা এবং সাবেক চেয়ারম্যান মোরশেদসহ কয়েকজন নেতা উপজেলা অফিস ভবন ঘেরাও করে তারা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে ইউএনও অফিস ও চেয়ারম্যানের অফিসসহ বেশ কয়েকটি অফিস ভাঙচুর করে। তিনি আরও জানান, লাল্টুর নেতৃত্বে গ্রুপটি তাদেরকে অবরুদ্ধ করে রাখে। দুই ঘন্টাব্যাপী অবরোধের পর তারা বেরিয়ে আসেন। পরে দুপুরে কলারোয়া থানায় উভয় গ্রুপ পাল্টা-পাল্টি মামলা করতে গেলে থানার অভ্যন্তরে সাতক্ষীরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মেরিনা আক্তারের উপস্তিতিতে দলীয় নেতা-কর্মীদের বিরোধ মিমাংসার চেষ্টা করে।
উপজেলা চেয়ারম্যান দলের সভাপতি ফিরোজ আহমেদ স্বপন প্রতিপক্ষের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম লাল্টু গ্রুপকে সন্ত্রাসি ও আসামি বলায় ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন নেতা কর্মীরা। আবারো সংঘর্ষ বাধে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে পুলিশ লাঠিচার্জ করে । এতে অন্তত আরও ১৫ জন আহত হন। আহতদেও মধ্যে উপজেলা চেয়ারম্যান স্বপনের ভাই মন্টুসহ পাঁচজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। উপজেলা সদরে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক আমিনুল ইসলাম লাল্টু জানান, কর্মসূচিতে আমাকে বক্তৃতা করতে না দেওয়ায় ফুঁসে ওঠে নেতাকর্মীরা। এ সময় উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান, ভাইস চেয়ারম্যান আরাফাত ও শহিদসহ উপজেলা চেয়ারম্যান ফিরোজ আহমেদ স্বপনের লোকজন চেয়ারছুড়ে আমার লোকজনদের উপর হামলা করে। ফলে উভয়ের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। তিনি পৃথক পথসভা করতে থাকায় সেখানেও হামলা করে উপজেলা চেয়ারম্যান দলের সভাপতি সমর্থক ভাইস চেয়ারম্যান আরাফাত, শাহীন, রানা, শহিদ, বাবলু, ইমরান, তুহিনসহ বেশ কয়েকজন। তিনি ককটেল, ইটপাটকেল নিক্ষেপসহ কোনো অঘটনের সঙ্গে তার ও তার সমর্থকদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই বলে জানান। এ সব ঘটনার জন্য দায়ি ফিরোজ আহমেদ নিজেই।
কলারোয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি উপজেলা চেয়ারম্যান ফিরোজ আহমেদ স্বপন ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বলেন, বঙ্গবন্ধুর ভাষণ ইউনেসকোর স্বীকৃতি পাওয়ার কারণে উপজেলা প্রশাসনের সাথে যৌথভাবে আনন্দ মিছিল ও অন্যান্য কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। উপজেলা চত্বরে অনুষ্ঠান চলাকালে কয়েকটি ককটেল ফাটিয়ে দলীয় সেক্রেটারি আমিনুল ইসলাম লাল্টু কিছু লোক নিয়ে সন্ত্রাস সৃষ্টি করেন। ককটেলের শব্দে মুহুর্তেই শিশুরা দৌড়াদৌড়ি শুরু করে। আতংকিত হয়ে তারা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। এ সময় তিনি সহ প্রশাসনের লোকজন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দ্রুত অনুষ্ঠান কার্যক্রম ফের শুরু করেই তা সমাপ্ত করেন।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার