রাঙামাটিতে আওয়ামী লীগের নেতার উপর হামলার ঘটনায় পৃথক দু’টি মামলায় ১১৪ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ মামলায় বিলাইছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যানসহ ১৪জনকে আটক করেছে পুলিশ।
শুক্রবার ভোর রাতে রাঙামাটি শহর থেকে ৯জন ও বিলাছড়ি উপজেলা থেকে ৫জনকে আটক করা হয়।
এদিকে হঠাৎ জোড়া খুন ও সন্ত্রাসী হামলার ঘটনার আতঙ্ক এখনো কাটেনি রাঙামাটিতে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলেও স্থানীয়দের মধ্যে দেখা দিয়েছে উদ্বেগ-উৎকন্ঠা। তবে যে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে রাঙামাটি বিভিন্ন স্থানে পুলিশের টহল জোড়দার করা হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি রাঙামাটিতে সন্ত্রাসীদের হামলায় ২জন নিহত ও ২জন আহত হয়েছে। এসব ঘটনাগুলো রাঙামাটি জেলার পৃথক চারটি স্থানে একইভাবে ঘটেছে। এঘটনায় নিহত হয়েছে-নানিয়ারচরে সাবেক ইউপি মেম্বার অনাধি রঞ্জন চাকমা ও জুরাছড়ি উপজেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি অরবিন্দু চাকমা।
এছাড়া একই দিন বিলাছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি রাসেল মার্মাকে কুপিয়ে জখম করে সন্ত্রাসীরা। এসব ঘটনার প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য রাখার অভিযোগে রাঙামাটি শহরে নিজ বাড়িতে সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয় মহিলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ঝর্ণা খীসা ও তার পরিবার। তবে সন্ত্রাসীরা এসব ঘটনা পর্যায়ক্রমে কেন ঘটিয়ে যাচ্ছে সে বিষয়ে সঠিক কোন তথ্য পাওয়া না গেলেও সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারের অভিযানে নেমেছে পুলিশ।
এসব ঘটনার উদ্বেগ প্রকাশ করে রাঙামাটি পুলিশ সুপার সাঈদ তারিকুল হাসান জানান, রাঙামাটি দুর্বৃত্তের হামলায় ঘটনায় প্রতিটি পৃথক মামলা হয়েছে। আসামিকে ধরার জন্য পুলিশের প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। এ মধ্যে ১৪জনকে আটক করা হয়েছে। ভবিষ্যতে এ ধরণে ঘটনা না ঘটে সে বিষয়ে বিশেষ সর্তক অবস্থানে রয়েছে আইনশৃঙ্খা বাহিনী।
রাঙামাটি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুছা মাতব্বর ও বিলাইছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুরেশ কান্তি তঞ্চঙ্গ্যা জানান, রাঙামাটি জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ঝর্না খীসার ওপর হামলার ঘটনায় তিনি নিজে বাদী হয়ে ২১জনের নাম উল্লেখ করে আরও ৪০জন আজ্ঞাত নামাসহ ৬১জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেন। এছাড়া বিলাইছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি রাসেল মারমার ওপর হামলার ঘটনায় তিনি নিজে বাদী হয়ে তিনি ২৮জনের নাম উল্লেখ্য করে আরও ২৫জনকে আসামী করে মোট ৫৩জনের বিরুদ্ধে উপজেলা থানায় পৃথক আরও একটি মামলা করে। এদের মধ্যে অভিযান চালিয়ে রাঙামাটি সদর থানার মামলায় ৯জনকে আটক করেছে পুলিশ।
আটকৃতরা হলেন- রিটন চাকমা (২৯), বাবু চাকমা (২৭), মঙ্গল মনি চাকমা (২৬), সাধান চাকমা (২৮), রিকন চাকমা (২৮), কালনজিৎ চাকমা (২২), রূপম চাকমা (২৪), সময় বিজয় চাকমা (২১), শুভ মঙ্গল চাকমা (২৩)। এছাড়া একই রাতে শহরের রাঙ্গাপানি এলাকা থেকে উপজেলা চেয়ারম্যান শুভমঙ্গল চাকমা (৬০) ও তার ছেলে সমরজিৎ চাকমা (২১) গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়া বিলাইছড়ি উপজেলা থেকে আর তিনজন সুমন চাকমা (২৫), চন্দ্র চাকমা (৩২), বিভময় চাকমা (২৬) আটক করা হয়।
রাঙামাটি কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সত্যজিৎ বড়ুয়া এবং বিলাইছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মঞ্জুরুল আলম মোল্লা এদের গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, গ্রেফতার সবাইকে আদালতে চালান দেয়া হয়েছে। বাকি আসামীদের খুব দ্রুত গ্রেফতার করা হবে।
উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার রাঙামাটি জেলার নানিয়ারচর ও জুরাছড়ি উপজেলায় সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হয়েছে সাবেক ইউপি মেম্বার অনাধী রঞ্জন চাকমা ও উপজেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি অরবিন্দু চাকামা। এছাড়া সন্ত্রাসী হামলায় মারাত্মক আহত হয় বিলাইছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি রাসেল মার্মা ও রাঙামাটি জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ঝর্ণা খীসা। এসব ঘটনায় এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। এসব ঘটনায় সাথে জড়িতদের রাঙামাটি হরতাল ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে জেলা যুবলীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
বিডি-প্রতিদিন/ সালাহ উদ্দীন