বাংলা নববর্ষ কড়া নাড়ছে দরজায়। উৎসবের রং বইতে শুরু করেছে সর্বত্র। মাদারীপুরের শিবচরের পালপাড়ায় গিয়ে কুমার নারী পুরুষদের শেষ মুহুর্তের রং নিয়ে ছড়াছড়িতে উৎসব মুখর হয়ে উঠছে বাংলা নববর্ষ। উৎসবকে বর্ণিল করে তুলতে বিলুপ্ত হতে যাওয়া মাটির তৈরি খেলনাসহ বিভিন্ন সামগ্রী তৈরি শেষে চলছে বাড়িতে বাড়িতে রংয়ের প্রতিযোগিতা। নতুন বছরের প্রথম দিন থেকেই জমে উঠবে গ্রামে গ্রামে চলা ’গলিয়া’খ্যাত গ্রামীণ মেলা। রংয়ের ছড়াছড়ি নিয়ে নারীদের ব্যস্ততাও চোখে পড়ার মতো।
সরেজমিন ঘুরে জানা যায় , প্লাস্টিক, সিলভারের অধিক ব্যবহার ও সহজলভ্যতার কারনে গত কয়েক বছর ধরে সারাদেশে মাটির তৈরি বিভিন্ন সামগ্রী বেচাকেনায় ধস নামে। এরফলে এ পেশা ছেড়ে বিকল্প পেশায় ঝুকেছে বিশেষ করে পাল সম্প্রদায়ের মানুষ। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে বাংলা নববর্ষ পালনে আপামর জনগণের বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনা দেখা দেয়ায় দেশের ঐতিহ্য মাটির তৈরি সামগ্রীরও কদর বেড়েছে।
মাদারীপুর ছাড়াও পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোতে গলিয়াখ্যাত বৈশাখী মেলা পুরো বৈশাখ মাসজুড়ে হওয়ায় এসকল মাটির জিনিসের দামও ভাল পাওয়া যায়। এরফলে বৈশাখকে সামনে রেখে প্রানচাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে পালপাড়াগুলোতে। পাল সম্প্রদায় অধ্যুষিত চরমুগরিয়া, ঘটমাঝি, রাস্তি, রাজৈর, ভদ্রাসন , নলগোড়া সহ বিভিন্ন এলাকাগুলোতে এখন মাটি দিয়ে খেলনা, ফল,ঘোড়া, হাতিসহ বিভিন্ন সামগ্রী তৈরি শেষে রং করার প্রতিযোগিতা চলছে ঘরে ঘরে।
রংয়ের তুলিতে মাটির সামগ্রী রাঙ্গানোর সমারোহ এখন নারীদের আঙ্গুলে। পাল সম্প্রদায়ের নারী পুরুষ ব্যস্ত এখন রংয়ের ছোঁয়ায় বাহারি ডিজাইন দিয়ে ক্রেতাদের আকর্ষণ বাড়াতে। তবে পরিশ্রমের তুলনায় দাম কম হওয়ার অভিযোগও অনেকের। তারপরও বছরের প্রথম দিনটিকে ঘিরেই বিকিকিনি বাড়ায় দারুন খুশি নির্মাতারা। নববর্ষকে ঘিরে প্রাণ পাওয়া মাটির শিল্পকে কেন্দ্র করে উচ্ছ্বলতা প্রকাশ করেন মৃৎ শিল্পীরা। তবে দাম নিয়ে অসন্তোষ তাদের। অনেকে দাবী করেন আধুনিক প্রশিক্ষনসহ সরকারের সূদুরপ্রসারী পরিকল্পনার ।
সবিতা পাল বলেন , সারা বছর চাহিদা না থাকলেও ১লা বৈশাখ আসলে আমাদের মাটির তৈরি সামগ্রীর কদর বাড়ে । তাই এই সময় আমাদের পরিশ্রম অনেক বেড়ে যায়। দিন-রাত মাটির সামগ্রী তৈরিতে ব্যস্ত থাকি।
অমল পাল বলেন, ১লা বৈশাখ থেকে শুরু করে পুরো বৈশাখ মাস গ্রামে গ্রামে গলিয়া হয়, পার্শ্ববর্তী জেলাগুলো থেকেও ব্যাবসায়ীরা এখানকার মাটির সামগ্রী কিনে নেয়। তাই এসময় আমাদের বিক্রিও খুব ভাল হয়। কিন্তু পরিশ্রমের তুলনায় যা মূল্য পাই তা খুবই কম ।
মাদারীপুর জেলা প্রশাসক ওয়াহিদুল ইসলাম বলেন, জেলাজুড়ে পহেলা বৈশাখ খুব উৎসব মুখর পরিবেশে পালন করা হয়। বছরের প্রথম দিন থেকেই গ্রামে গ্রামে গলিয়া খ্যাত মেলা বসে। সে সকল মেলায় মাটির সামগ্রী খুব ভাল বিক্রি হয়। তাই পালপাড়াগুলো এখন অনেক ব্যাস্ত মাটির সামগ্রী তৈরিতে। চারদিকে এখন থেকেই উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্ব সাধারনের নিরাপত্তা নিশ্চিতে মেলা গুলোতে কঠোর নজরদারী রাখা হবে।
বিডিপ্রতিদিন/ ই-জাহান