গঙ্গাদেবীকে ফুল উৎসর্গ করে পাহাড়ে শুরু হয়েছে ফুলবিজু উৎসব। আকাশে তখন সূর্য উঠেনি। আবছা আবছা আলোর ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর তরুণ-তরুণীরা এক টুকরো কলা পাতায় নানা রঙের ফুল হাতে প্রস্তুত। নিজেদের সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী পোশাকে সেজে রাঙামাটি হ্রদের পাড়ে বসেছে প্রার্থণায়। পুরোনো যত গ্লানি মুছে জগতের সুখ-শান্তি কামনা করে হ্রদের জলে ভাসিয়ে দেয় সে পূজার ফুল।
বৃহস্পতিবার সকালে রাঙামাটি ত্রিপুরা কল্যাণ ফান্ডেশনের উদ্যোগে কাপ্তাই হ্রদে ফুল ভাসনো উৎসব উদ্বোধন করেন সাবেক পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার।সারাদিন ব্যাপী চলবে এ ফুলবিজু উৎসব। প্রিয়জনকে ফুল দিয়ে পাড়ায় পাড়ায় শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর তরুণ-তরুণীরা। এভাবে তাদের সারাদিন কেটে যাবে আনন্দ উল্লাসে।
ফুল ভাসানোর পরে শুরু হয় ত্রিপুরা পল্লীতে ফুল বিজুর আনন্দ উৎসব। ত্রিপুরা তরুণ-তরুণীরা বর্ণাঢ্য সাজে গড়াই নৃর্ত্যসহ, ঘিলা কেলা, বোতল নৃত্যসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে মাতিয়ে তুলে উৎসব।
বর্ষ বিদায় ও নতুন বর্ষ বরণ উপলক্ষে প্রতি বছর চৈত্র সংক্রান্তিতে পার্বত্যাঞ্চলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীরা নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে বৈসাবির উৎসব পালন করে থাকেন।
এ উৎসবকে চাকমারা-বিজু, মারমারা-সাংগ্রাইং, ত্রিপুরারা-বৈসু, তঞ্চঙ্গ্যারা-বিষু এবং অহমিকারা-বিহু বলে আখ্যায়িত করে। চাকমা ভাষা ও রীতি অনুযায়ী ২৯ চৈত্র ফুল বিজু, ৩০ চৈত্র মূল বিজু ও ১লা বৈশাখ গোজ্যাপোজ্যা দিন হিসেবে তিনব্যাপী উৎসব পালন করে থাকে।
রাঙামাটি ত্রিপুরা কল্যাণ ফান্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক ঝিনুক ত্রিপুরা বলেন, আকাশে সূর্য উঠার সাথে হ্রদে ফুল ভাসানোর মধ্য দিয়ে ফুলবিজুর আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে। জলে ফুল ভাসিয়ে আমরা সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করি অতীতের সব দুঃখ-কষ্ট, ব্যর্থতা, পাপ আর গ্লানি মোচনের জন্য। অনাগত দিনে জগতের সব প্রাণীর হিত, সুখ, মঙ্গল ও সাফল্য কামনা করি।
শুক্রবার উদযাপিত হবে মূলবিজু। পাহাড়ি ঘরে ঘরে আয়োজন করা হবে হরেক রকম মুখরোচক খাবারের। এ উৎসবে মাতোয়ারা হয়ে ওঠে সবাই। তরুণ-তরুণীরা গেংখুলী আসর ও বাঁশ নৃত্য ও ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের তরুণ-তরুণীরা গড়াইয়া নৃত্য উৎসবে মেতে ওঠবে।
বিডি প্রতিদিন/১২ এপ্রিল, ২০১৮/ফারজানা