বৈসাবির আনন্দে পাহাড় এখন উৎসবমুখর। বর্ষবরণ ও বর্ষ বিদায় অনুষ্ঠানকে ঘিরে নতুন সাঁজে সেজেছে পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রতিটি পাহাড়ি জনপদ। সকল পাপাচার, গ্লানি ধুয়ে মুছে নিতে খাগড়াছড়ির চেঙ্গী নদীতে ফুল ভাসানোর মধ্যে দিয়ে পাহাড়ের প্রাণের উৎসব 'বৈসাবি'র আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে। পুরাতন বছরকে বিদায় ও নতুন বছরকে বরণ করতে পাহাড়িরা ৩ দিনব্যাপী এ উৎসব পালন করে থাকে।
এ উৎসবের প্রথমদিন (বৃহস্পতিবার) ফুল বিজু। ভোরে খাগড়াছড়ি’র চেঙ্গী নদীতে পাহাড়ি তরুণ-তরুণীরা নদীতে দেবতাদের উদ্দেশ্যে ফুল বাসিয়ে দেন এবং পরিবার ও জাতির জন্য মঙ্গল কামনা করে প্রার্থনার মধ্য দিয়ে এই উৎসবের সূচনা হয়। বেলা বাড়ার সাথে সাথে চেঙ্গী নদীর তীরে মানুষের ঢল নামে। ছোট ছোট শিশুরা এ সময় নদীতে উল্লাশ শুরু করে।
পাহাড়িরা বৈসাবি উৎসবকে তিনটি ভাগে পালন করে থাকেন। প্রথম দিনটির নাম ফুল বিজু। এদিন শিশু কিশোররা ফুল তুলে ঘর সাজায়। দ্বিতীয় দিনটি মূল বিজু। এ দিনটি হচ্ছে মূল অনুষ্ঠান। এদিন নানা ধরনের তরকারি রান্না করা হয়। এর নাম পাজন, এটি বৈসাবির অন্যতম বৈশিষ্ট্য। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের পিঠা ও মিষ্টান্নও তৈরি করা হয়। অতিথিদের জন্য এদিন ঘরের দরজা থাকে সবার জন্য খোলা। এছাড়াও বৈসাবির তিনদিন পাহাড়িরা সাংসারিক ও সামাজিক আচারণ অনুষ্ঠান পালন করেন।
ফুল বিজুর দিন পাহাড়িরা ভোরে ঘুম থেকে উঠে নদী বা ছড়ায় গোসল করার আগে পানিতে ফুল ভাসিয়ে দিয়ে গঙ্গা বা গংগা পূজা করেন। এরপর বড়রা বাড়িঘর ও আঙ্গিনায় সোনা রূপার পানি দিয়ে বাড়ির আসবাবপত্র পরিষ্কার করেন। ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা বিভিন্ন ফুল দিয়ে বাড়িঘর সাজায়। সন্ধ্যায় বাড়ির আঙ্গিনায়, গোয়াল ঘরে এবং নদীর ঘাটে সারি সারি মোমবাতি জ্বালানোর মধ্য দিয়ে বৈসাবির প্রথমদিনের কাজ সম্পন্ন করা হয়।
বৈসাবি উৎসবের অনুষ্ঠান দেখতে খাগড়াছড়িতে প্রচুর পর্যটকের সমাগম হয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/১২ এপ্রিল ২০১৮/এনায়েত করিম