নাটোরে যমজ শিশুর একজন স্কুলে ভর্তি হওয়ার পর অন্যজনের শিক্ষাজীবন প্রায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন বাবা-মা।
মা জিন্নাত আরা জানান, তাদের যমজ কন্যা সুমাইয়া ও সুরাইয়া চলতি বছর নাটোর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। এর মধ্যে সুমাইয়া উত্তীর্ণ হয়ে ৩ জানুয়ারি ভর্তি হয়। সুরাইয়া থাকে অপেক্ষমান তালিকায়। বাবা-মা আশ্বস্ত হন, অগ্রাধিকার বিবেচনায় শূন্য আসনে ভর্তি করা যাবে।
তিনি আরও জানান, এক মেয়ের ভর্তির জন্য তিনি গত ৮ মাস ধরে ডিসি অফিস ও স্কুলের প্রধান শিক্ষকের কাছে যাওয়া আসা করছেন। আশ্বাস দেওয়ার পরও তাকে ঘোরানো হচ্ছে। এক মেয়ে ভর্তি হতে না পেরে অপর মেয়েও লোখাপড়া করছে না। ভর্তি হতে না পারা মেয়ে প্রায় অসুস্থ হয়ে পড়ছে। যমজ শিশুর স্বাভাবিক প্রবণতার কারণে অপরজনও অসুস্থ হচ্ছে। এজন্য সব সময় দুঃশ্চিন্তায় থাকতে হয়।
সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তির নীতিমালা-২০১৭-এর ২৩ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, 'আবেদনকারী শিক্ষার্থীর সহোদর/সহোদরা বা যমজ ভাই/বোন যদি পূর্ব থেকে অধ্যয়নরত থাকে তবে আসন শূন্য থাকা ও প্রয়োজনীয় যোগ্যতা সাপেক্ষে ভর্তির ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবে।'
সেই যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও সুরাইয়াকে ভর্তি নিতে অপারগতা প্রকাশ করেন ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক। এই সিদ্ধান্তে সুরাইয়ার উদ্বিগ্ন পিতা মোসাদ্দেকুল হোসেন ও মাতা জিন্নাত আরা ১০ জানুয়ারি ভর্তি কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসকের নিকট আবেদন করেন।
জেলা প্রশাসক শাহিনা খাতুন অবেদপত্রের ওপর 'জরুরি' লিখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন। এরপর থেকে তাদের মা ঘুরতে থাকেন জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে। কিন্তু শিক্ষা বছরের আট মাস অতিবাহিত হওয়ার পরও 'জরুরি' বিষয়টির নিষ্পত্তি হয়নি। অথচ বিগত বছরগুলোতে একাধিক যমজ শিশুকে ওই স্কুলে ভর্তি করা হয়েছে।
এদিকে, ওই দুই শিশুর একজন লেখাপড়া প্রায় ছেড়েই দিয়েছে। অপরজনও মনযোগী হতে পারছে না।
নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতালের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মোশারফ বিষয়টি শোনার পর জানান, এমতাবস্থায় ওই শিশুদের মনের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে।
নাটোর উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জানান, ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণের পর শিক্ষানীতির ভর্তিমালার কোন ধারতেই ভর্তির সুযোগ নেই। মেয়েটিকে ভর্তি করতে তার কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু এক্ষেত্রে ভর্তি কমিটির সিদ্ধান্ত বা জেলা প্রশাসকের লিখিত অনুমতির প্রয়োজন।
জেলা প্রশাসক শাহিনা খাতুন এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষকের সাথে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন।
বিডি প্রতিদিন/০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮/আরাফাত