লোকবলের অভাব, অনিয়ম আর অব্যবস্থাপনায় বগুড়ার শেরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হচ্ছে। ১০ বছরের বেশি সময় ধরে বিকল হয়ে রয়েছে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক্স-রে মেশিন। একটি মাত্র এ্যাম্বুলেন্স থাকলেও তা অচল। হাসপাতালটির অব্যবস্থাপনার এই সুযোগে সচল হচ্ছে প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানগুলো। রোগীদের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানীর প্রতিনিধিও। অভিযোগ রয়েছে হাসপাতাল থেকে সরবরাহ করা রোগীর খাবার নিয়েও। এমন নানা অভিযোগে হাসপাতালটি এখন নিজেই রোগী হয়ে গেছে।
জানা যায়, সরকার স্বাস্থ্য সেবাকে মানুষের দোড়গোড়ায় পৌঁছাতে চায়। প্রতিটি মানুষের জন্য চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য বিভিন্ন উন্নয়নমুলক কাজ করে যাচ্ছে। এরই ধারা বাহিকতায় চলতি বছরের ২২ এপ্রিল হাসপাতালটি ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করণের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। প্রতিষ্ঠাকালে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৩১ শয্যা ছিল। শেরপুর পৌরশহরসহ উপজেলার ১০ ইউনিয়নের প্রায় চার লাখ মানুষকে সেবা দেয়ার পাশাপাশি ধুনট, কাজীপুর, রায়গঞ্জ, নন্দীগ্রাম ও তাড়াশ উপজেলার মানুষও সেবা নিতে আসেন এখানে। এসব বিবেচনায় এনে হাসপাতালটির শয্যা সংখ্যা বাড়ানো হয়। শয্যা বাড়ানো হলেও আর কিছুই বাড়েনি।
৩১ শয্যার সংকট থাকা জনবল নিয়ে চলছে হাসপাতালটি। জনবলকাঠামো অনুযায়ী লোকবল ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় উদ্বোধনের ছয় মাসেও চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম শুরু করা যায়নি। তাই হাসপাতালটি চলছে আগের মতোই খুঁড়ে খুঁড়ে। ৮ জন মেডিকেল সহকারি ও ১২ জন নার্স রয়েছে হাসপাতালে। জনবলকাঠামো অনুযায়ী ৫০ শয্যার সরকারি এই হাসপাতালটিতে ৩১ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও এখানে মাত্র তিনজন ডাক্তার কর্মরত রয়েছেন। এছাড়া দীর্ঘদিন থেকেই বিকল হয়ে পড়ে আছে এক্স-রে মেশিন ও জেনারেটর। সরকারি অ্যাম্বুলেন্সটিও রয়েছে সিন্ডিকেটের দখলে। এমনকি রোগীদের জন্য দেওয়া সরকারি ওষুধ ও খাবাবের মান নিয়েও রয়েছে বিস্তর অভিযোগ।
এ অবস্থায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেটি এখন নিজেই রোগী হয়ে পড়েছে। হাসপাতালের বহির্বিভাগে অন্তত ২০০ থেকে ৩০০ রোগী চিকিৎসা নিতে ভিড় করছেন প্রতিদিন। কিন্তু বিশেষজ্ঞ চিকিৎক না থাকায় অনেককে চিকিৎসা না নিয়েই ফিরে যেতে দেখা যায়।
বগুড়ার শেরপুর উপজেলার হামছায়াপুর গ্রামের বাবুলী আক্তার ও সাধুবাড়ীর সুফিয়া বেগম জানান, সকাল ৯টায় হাসপাতালে এসেও বেলা ১২ টার পরও তারা বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের দেখা পাননি। মেডিকেল সহকারি ও ওয়ার্ড বয়রা তাদের রোগের বর্ণনা শুনেছে মাত্র।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির একাধিক ওয়ার্ডবয় ও কর্মকর্তরা বলেন, ১০ বছরের বেশি সময় ধরে এক্স-রে মেশিন নষ্ট হয়ে আছে। গরীব-অসহায় রোগীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষার সেবা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়া জেনারেটরেরও একইভাবে নষ্ট হয়ে আছে। দীর্ঘদির ধরে এই দুইটি গুরুত্বপুর্ণ যন্ত্র বিকল হয়ে পড়ে থাকলেও চালুর বিষয়ে কর্তৃপক্ষের কোন মাথা ব্যথা নেই। সরকারি অ্যাম্বুলেন্সটি পরিকল্পিতভাবে নানা অজুহাতে বন্ধ রেখে নিজেদের একাধিক প্রাইভেট অ্যাম্বুলেন্সে রোগী পরিবহন করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে বলেও তারা অভিযোগ করেন।
বগুড়ার শেরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আব্দুল কাদের জানান, স্বল্প সংখ্যক ডাক্তার নিয়ে তাদের প্রতিদিন শত শত রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খেতে হয়। তবুও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের সেবা দিতে তারা সবরকম চেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়া হাসপাতালে কোন অনিয়ম করা হয় না-এমন দাবি করেন তিনি। হাসপাতালে নিয়ম মেনেই রোগীদের সেবা প্রদান করা হয়।
বগুড়া জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো: শামসুল হক জানান, শেরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক সংকট রয়েছে। সম্প্রতি মন্ত্রীমহোদয় ৩১ থেকে ৫০ শয্যার হাসপাতাল করার অনুমতি পাওয়া গেছে। কিন্তু প্রয়োজনীয় জনবল পাওয়া যায়নি। সেটিও পাওয়া যাবে। যেহেতু হাসপাতালের ৫০ শয্যায় উন্নতীকরণ করা হয়েছে এ কারণে নতুন এক্সে-রে মেশিন, এ্যাম্বুলেন্স পাওয়া যাবে। সে বিষয়েও যোগাযোগ চলছে।
বিডি প্রতিদিন/১৩ অক্টোবর ২০১৮/হিমেল