আনন্দ উল্লাস, আতশবাজি, পূণিমার আকাশে রং বে-রংয়ের বর্ণিল ফানুসের ঝলকানি আর সন্ধ্যা প্রদীপ প্রজ্জালন উৎসবে মেতেছে পাহাড়। প্রবারণা পূর্ণিমা হচ্ছে পার্বত্যাঞ্চলে বসবাসরত বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব। আজ বুধবার এ উৎসব উপলক্ষে রাঙামাটি রাজবন বিহারসহ ১০টি উপজেলার বিভিন্ন বিহারে বিহারে নানা ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান ও কর্মসূচি পালন করা হয়।
সকালে রাঙামাটি রাজবন বিহারসহ প্রতিটি বৌদ্ধ মন্দিরে সকালে ধর্মীয় পতাকা উত্তোলন, ভিক্ষুসংঘের প্রাতঃরাশ, বুদ্ধ পুজা, অষ্টপরিস্কার দান, বুদ্ধমূর্তি দান, পিন্ডদান, পরিত্রাণ পাঠ, উৎসর্গ, ধর্মীয় দেশনা সহ রাজবন বিহারে অনুষ্ঠানে ধর্মীয় বাণীর উদ্ধৃতি দিয়ে দেশনা দেন বিহারটির আবাসিক ভিক্ষুপ্রধান ও মহানির্বাণ প্রাপ্ত শ্রাবকবুদ্ধ শ্রীমৎ সাধনানন্দ মহাস্থবির বনভান্তের অন্যতম শীয্য শ্রীমৎ প্রজ্ঞালংকার মহাস্থবির। সারাদিন নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে বিহারগুলোতে ছোয়াইং বিশেষ প্রার্থনারত ছিল পূণ্যার্থীরা।
অন্যদিকে বৌদ্ধ ধর্মালম্বী নারী-পুরুষ, তরুন-তরুনী সন্ধ্যায় হাজার বাতি ও নানা রঙের ফানুস হাতে নিয়ে ভিড় জমায় পাহাড়ের বিহারে বিহারে। সাধু সাধু ধ্বনির তালে প্রজ্জালন করা হয় হাজার বাতি। উড়ানো হয় ফানুস। বর্নিল ফানুসে ঢেকে পড়েছে সন্ধ্যার আকাশে। এছাড়া আতশ বাজির ঝলকানি উৎসবমুখর হয়ে উঠে গোটা পরিবেশ। একই সাথে চলে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর তরুণীদের পাড়ায় পাড়ায় একে অপরের আয়োজনে বিভিন্ন ধরনের পিঠা-পুলি উৎসব।
এদিকে প্রবারণা পূর্ণিমা উপলক্ষে জুরাছড়ি সুবলং শাখা বনবিহারে মহাস্থবির বরণ ও সন্মাননা প্রদান করা হয়েছে। এসময় ধর্মীয় দেশনা দেন সুবলং শাখা বনবিহার অধ্যক্ষ বুদ্ধশ্রী মহাস্থবির, আর্য্যনন্দ মহাস্থবির, প্রিয়তিষ্য মহাস্থবির। এসময় জুরাছড়ি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান উদয়জয় চাকমা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য জ্ঞানেন্দু বিকাশ চাকমা, প্রবর্তক চাকমা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, বৌদ্ধ অনুসারীরা তিন মাসব্যাপী বর্ষাবাস শেষ করে এবং শীল পালনকারীরা প্রবারণা পূর্ণিমার দিনে (ওয়াগ্যোয়াই পোয়েঃ) বৌদ্ধ বিহার থেকে নিজ সংসারে ফিরে যান আর এই কারণে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের কাছে এই দিনটি বেশ তৎপর্যপূর্ণ। কারণ প্রবারণা পূর্ণিমা উৎসবের মধ্যে দিয়ে শুরু হয়েছে মাসব্যাপী কঠিন চীবর দান উৎসব। এদিকে রাঙামাটি পার্বত্য জেলার কয়েকটি বৌদ্ধ মন্দিরে শুরু হয়েছে দানোত্তম কঠিন চীবর দানোৎসবের। আজ থেকে আড়াই হাজার বছরেরও আগে মহামতি গৌতম বুদ্ধের জীবদ্দশায় তাঁর প্রধান সেবিকা বিশাখা ২৪ ঘন্টার মধ্যে তুলা থেকে সুতা কেটে রংকরণসহ তৈরি শেষে বৌদ্ধ সন্যাসীদের গেরুয়া কাপড় (চীবর) গৌতম বুদ্ধকে দান করেছিলেন। প্রতি বছর ভিক্ষুদের বর্ষা অধিষ্ঠান শেষে বিশাখা প্রবর্তিত এ দানকে কঠিন চীবর দানোৎসব পালন করেন বৌদ্ধরা। এবার প্রবারণার সঙ্গে সঙ্গে বুধবার থেকে দু’দিনব্যাপী কঠিন চীবর দানোৎসব শুরু হয়েছে- রাঙামাটি সদরের বন্দুকভাঙ্গা ইউনিয়নের খারিক্ষ্যং শাক্যবন বিহার, সাপছড়ি ইউনিয়নের বোধিপুর বন বিহার এবং শহরের আসামবস্তীর বুদ্ধাঙ্কুর বৌদ্ধ বিহারে। আগামী ১৪-১৫ নভেম্বর সার্বজনীন কঠিন চীবর দানোৎসব আয়োজন করা হবে রাঙামাটি রাজবন বিহারে।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার