পানি বৃদ্ধির পাশাপাশি অবৈধ বালু উত্তোলনের কারণে প্রতিদিন যমুনার ভাঙ্গনে বসতভিটা-ফসলী জমি বিলীন হয়ে নিঃস্ব ও সর্বশান্ত হয়ে পড়ছে নদী তীরবর্তী মানুষ। মাথা গোঁজার মতো এক টুকরো জমি না থাকায় ভাঙনকবলিতরা খোলা আকাশ ও অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করলেও জনপ্রতিনিধি বা প্রশাসন কেউ তাদের খোঁজ নিচ্ছে না।
ভাঙনকবলিতদের অভিযোগ, ভাঙনরোধে ব্যবস্থা গ্রহণতো দূরের কথা জনপ্রতিনিধি বা প্রশাসন সামান্য সহযোগিতাও করছে না। জেলা প্রশাসন ও পাউবোকে জানালে তারা শুধু ব্যবস্থা নিবে এমন আশ্বাসের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকছে। এ অবস্থায় ভাঙন কবলিতরা বলছে, এখন একমাত্র আল্লাহ ছাড়া আমাদের সাহায্য করার কেউ নাই।
জানা যায়, গত চারমাস যাবত যমুনা নদীর কয়েকটি পয়েন্টে ভাঙন শুরু হয়েছে। বর্তমানে যমুনার পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে ভাঙন আরো তীব্র হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সিরাজগঞ্জে পয়েন্টে ১৫ সে.মি. পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। পানি বৃদ্ধির কারণে কাজিপুর উপজেলার খুদবান্ধি থেকে শুভগাছা পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে। একমাসের ব্যবধানে দেড়শতাধিক বসতভিটা, গাছপালা, বৈদ্যুতিক খুটি বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙন অব্যাহত থাকায় এলাকার আট থেকে দশটি গ্রাম হুমকিতে রয়েছে।
এনায়েতপুরের ব্রাহ্মন গ্রাম থেকে পাঁচিল পর্যন্ত ৬ কিলোমিটার এলাকায় ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। প্রতিদিন বসতভিটা-ফসলী জমি নদীতে বিলীন হচ্ছে। চৌহালীর খাসপুকুরিয়া ৫ কিলোমিটার এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে।
এনায়েতপুরের ব্রাহ্মণ গ্রামে আড়াই কোটি টাকা ব্যয়ে জিওব্যাগ ফেলে ৫শ' মিটার এলাকা সংরক্ষণ করলেও গত পরশু জিওব্যাগসহ ৫০ মিটার ধসে গেছে। শাহজাদপুরের কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত রাউতারা বাঁধ ভেঙে গেছে। শাহজাদপুর উপজেলার প্রায় চারটি পয়েন্টে ভাঙন শুরু হয়েছে।
এছাড়াও স্থানীয় দুজন ইউপি চেয়ারম্যান ও যুবলীগ নেতারা প্রভাব খাটিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে সদর উপজেলার কাওয়াকোলা ইউনিয়নের কাওয়াকোলা ও হাট বয়ড়া গ্রামের দুই শতাধিক বসতভিটাসহ ফসলি জমি বিলীন হয়ে গেছে। বালু উত্তোলণ অব্যাহত থাকায় প্রতিদিন ফসলী জমি বিলীন হয়ে পড়ছে। এসব ভাঙনকবলিতরা বর্তমানে অসহায়ত্বের মধ্যে জীবনযাপন করছে। জায়গা না থাকায় ঘরগুলো স্তুপ করে রেখে খোলা আকাশ বা অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে।
ভাঙনকবলিতদের পক্ষ থেকে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধসহ যমুনা ভাঙনরোধ এবং সহায়তার জন্য প্রশাসন ও পাউবোকে জানালো হলেও গত একমাস যাবত ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কার্যকরী কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ।
এনায়েতপুর গ্রামের আড়কান্দি গ্রামের জলেবার, সমেশ, চান্দু, বরকত, শুকুর, আবুল ও আলেয়া খাতুন জানান, পৈত্রিক বসতভিটা-জমিজমা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। অন্যের জমিতে আশ্রয় নিয়েছিলাম সেটিও চলে গেল। পানি উন্নয়ন দেখেও না দেখার ভান করছে। এমনকি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসন কেউ ভাঙনে দিশেহারা দরিদ্র এসব মানুষের খোঁজ নিতেও আসেনি। এখন আল্লাহ ছাড়া আমাদের সাহায্য করার নেই।
কাওয়াকোলা ইউনিয়নের বাসিন্দরা জানান, দুমাসে প্রায় দুশতাধিক বসতভিটা বিলীন হয়ে গেছে। একদিকে পানি বৃদ্ধি অন্যদিকে তীর ঘেষে অবৈধ বালু উত্তোলনের কারণে প্রতিদিন চোখের সামনে ফসলী জমি নদী গর্ভে চলে যাচ্ছে। কিন্তু প্রশাসন দেখেও না দেখার ভান করছে। তাদেরকে জানালে শুধু বলে দেখছি-দেখব-ব্যবস্থা নিবো। গত একমাস যাবত এ কথা বলেও ডিসি-ইউএনও শান্তনা দিয়ে যাচ্ছে-আর আমরা সবকিছু হারিয়ে সর্বশান্ত হয়ে পড়ছি।
অবৈধ বালু উত্তোলনের বিষয়ে জেলা প্রশাসক ড. ফারুক আহম্মদ ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার সরকার রায়হান ও সহকারী কমিশনার ভূমি আনিছুর রহমান জানান, বালু ব্যবসায়ীদের নির্দিষ্ট মহল ইজারা দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে গিয়ে বালু উত্তোলন করায় জনবসতি হুমকির মুখে পড়লে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম জানান, ইতোমধ্যে ভাঙনকবলিত এলাকায় প্রায় জরুরি ভিত্তিতে ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে জিওব্যাগ ফেলা হয়েছে। পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় কিছু এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে। যেসব এলাকায় ভাঙন বেশি আকার ধারণ করছে সেসব এলাকায় ভাঙন রক্ষায় জরুরি ভিত্তিতে জিওব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধ করা হবে। এছাড়াও কাজিপুর ও এনায়েতপুরে স্থায়ী সংরক্ষণ বাঁধের জন্য ১২শ' কোটি টাকার প্রকল্প জমা দেয়া হয়েছে। প্রকল্পগুলো পাস হবার পর শুষ্ক মৌসুমে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা সম্ভব।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল