২২ জুলাই, ২০১৯ ১১:০৬

ভাঙনে পদ্মাপাড়ের ১৫ বিঘা ফসলি জমি বিলীন, ঘরছাড়া ৯টি পরিবার

শরীয়তপুর প্রতিনিধি

ভাঙনে পদ্মাপাড়ের ১৫ বিঘা ফসলি জমি বিলীন, ঘরছাড়া ৯টি পরিবার

শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার পূর্বনাওডোবা ইউনিয়নের জিরো পয়েন্টে পদ্মা নদীর পাড় ভাঙতে শুরু করেছে। এরই মধ্যে উকিল উদ্দিন মুন্সীরকান্দি গ্রামের ভাঙনের মাত্রা সবচেয়ে বেশি। গত ছয়দিনের ব্যবধানে পদ্মা নদীর ভাঙনে উকিল উদ্দিন মুন্সীরকান্দি গ্রামের পদ্মাপাড়ের ১৫ বিঘা ফসলি জমি বিলীন হয়েছে। ভিটেমাটি ছেড়ে নিরাপদ স্থানে সরে গেছে ৯টি পরিবার।

জানা গেছে, পূর্বনাওডোবা ইউনিয়নের উকিল উদ্দিন মুন্সীরকান্দি গ্রামের জিরো পয়েন্টের শাহজাহান খানের বাড়ি থেকে শুরু করে সিরাজুল বেপারীর বাড়ি পর্যন্ত পদ্মা নদীর তীরবর্তী এলাকা ভাঙনপ্রবণ। গত এক যুগে নদীভাঙনের কবলে পড়ে এসব এলাকার কয়েক হাজার পরিবার নিঃস্ব হয়েছে। কিন্তু এ বছরও এসব এলাকায় দেখা দিয়েছে ভাঙন। গত ছয় দিনে বাড়িঘর সরিয়ে নিয়ে গেছে গ্রামটির সিরাজুল বেপারী, ইদ্রিস বেপারী, মজিবর ছৈয়াল, আবু কালাম মৃধা, সজল তালুকদার, শাহজাহান খা, রুবেল বেপারী, নুরু বেপারী ও কালাম বেপারী।  

ভুক্তভোগী ব্যক্তিরা জানান, পদ্মা নদীতে তীব্র স্রোত থাকায় নদীতে সৃষ্টি হচ্ছে বড় বড় ঢেউ। ঢেউয়ের আঘাতে ভাঙছে জাজিরা উকিল উদ্দিন মুন্সীরকান্দি এলাকার পদ্মার পাড়। গত ছয় দিনে পদ্মা পাড়ের ফসলি জমি ও গাছপালা ভাঙনের কবলে পড়ে বিলীন হয়েছে। ভাঙন আতঙ্কে গ্রামের বেশ কয়েকটি পরিবার তাদের ঘরবাড়ি তুলে ফেলে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়েছে।

সরেজমিন উকিল উদ্দিন মুন্সীরকান্দি এলাকার পদ্মার তীরে দেখা যায়, নদীতে প্রচুর স্রোত বইছে। স্রোতের ঢেউয়ে পাড় ভেঙে বিলীন হয়ে যাচ্ছে নদীগর্ভে। পাশেই কয়েকটি শূন্য ভিটা পড়ে আছে। দেখে বোঝা যাচ্ছে, কয়েক দিন আগেও এখানে ছিল বসতবাড়ি। নদীভাঙনের কবল থেকে রক্ষা পেতে পরিবারগুলো অন্যত্র সরে গেছে। ইতিমধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ড ভাঙন কবলিত এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলছে।

সিরাজুল বেপারী, লাইলি বেগমসহ ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত অনেকেই বলেন, বাপ-দাদার ভিটে মাটিতে থাকতাম। কিন্তু কয়েক দিনের ব্যবধানে ভিটে মাটি চলে গেল নদীতে। অন্যের জমিতে কোন রকমে খেয়ে না খেয়ে থাকতে হচ্ছে। এখনো কোন সাহায্য সহযোগিতা পাইনি।

পূর্ব নাওডোবা ইউপি সদস্য মঙ্গল মাদবর জানান, কয়েক দিন ধরে নদীতে স্রোত বইছে সাথে পানিও বেড়েছে। পানি বাড়ার সাথে সাথে প্রবল স্রোতে নদীর পাড় ভাঙতে শুরু করে। আতঙ্কে স্থানীয় নয়টি পরিবার অন্যত্র চলে গেছে। নদীর পাড় থেকে প্রায় ১০০ গজ ভেতরের দিকে কয়েক দিন আগেও কয়েকটি বসতভিটা ছিল বলে তিনি জানান।

পূর্বনাওডোবা ইউপি চেয়ারম্যান লাল চাঁন মাদবর বলেন, আমি ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছি। ভাঙনে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেই পরিবারগুলোর একটি তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তাদের ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে ত্রাণসহ সকল সহযোগিতা করা হবে।

জানতে চাউলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী সুমন বণিক বলেন, জাজিরা জিরো পয়েন্ট থেকে শুরু করে ৭৩ মিটার ভাঙনপ্রবণ। ভাঙন রোধে ৪ হাজার ৩০০ জিও ব্যাগ ফেলানো হবে। শনি ও রবিবার ৮০০ জিও ব্যাগ ফেলানো হয়েছে। তবে আগের থেকে এখন ভাঙনের মাত্রা কমে গেছে।

শরীয়তপুর জেলা প্রশাসক কাজী আবু তাহের বলেন, পদ্মা নদী ভাঙন শুরু হলে রক্ষা করা কঠিন হয়ে যায়। ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড কাজ করছে। নড়িয়া উপজেলায় ভাঙন রোধও হয়েছে। জাজিরার পূর্বনাওডোবা ভাঙছে শুনলাম। আর একটি ঘরও যেন ভাঙনের কবলে না পড়ে সে বিষয়ে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলবো- তারা যেন ভাঙন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়। 

বিডি-প্রতিদিন/মাহবুব

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর