৩০ লাখ টাকার বিনিময়ে সাতক্ষীরা জেলা ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটি ভেঙে দেওয়া হচ্ছে। আসছে নতুন কমিটি। এই কমিটি ভেঙে দেয়ার হুমকি দিয়েছেন সাতক্ষীরা-৩ আসনের বর্তমান এমপি এবং সাবেক স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী ডা. আ.ফ.ম রুহুল হকের প্রেস সচিব ও পিএ তোষিকে কাইফু।
এ ঘটনায় জেলাব্যাপী চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। তোষিকে কাইফু সাবেক আশাশুনি শ্রীউলা ইউনিয়নের যুগ্ম সম্পাদক ও বর্তমানে আশাশুনি উপজেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক।
ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া একটি অডিও থেকে জানা গেছে, সাবেক স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী আ.ফ.ম রুহুল হক এমপির প্রেস সচিব কাম এপিএস তোষিকে কাইফু দেবহাটা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এইচ এম সোহাগকে টেলিফোনে যা বলেছেন তা হুবহু তুলে ধরা হলো:
কাইফু: জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদিকুর রহমান সাদিককে বলো, আশাশুনি উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি ভেঙে দিয়ে নতুন কমিটি করতে।
এইচ এম সোহাগ: ভাই, সাদিক ভাইয়ের জন্য কোন সেক্রিফাইজ করা যায় না?
কাইফু: তাহলে সাদিক ভাই আজকেই ভেঙে দিক, আমি যদি কমিটি স্ট্রে করতে না পারি তাহলে আমি আমার জন্ম ঠিক নাই। আজকে নজরুল সাহেব আসবে, বসবে। আজ জগন্নাথের সম্মেলন হতে পারে। ওরা ট্রমা সেন্টারে আসবে। তুমি যদি সেরকম বলো, আমি চাই আজকেই কমিটি ভাঙতে হবে। অনেক অপমানিত হয়েছি। (জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক) ঢাকায় ট্রমা সেন্টারে বসবেন। তুমি বিশ্বাস না হলে স্যারের (রুহুল হক) কাছে শুনে দেখ। তোমার কাছে বলবে কিনা সেটা অন্য বিষয়। আর তোমার রবি (সাতক্ষীরা সদর আসনের এমপি) কাকাও কোন একটা শর্তে জেলা ছাত্রলীগের সেক্রেটারি সাদেকের পক্ষে কাজ করবে না। কোনো একটা কাজের জন্য। হতে পারে সেটা পিপি হতে পারে সেটা অন্য লীগ, যুবলীগ। কারণ তার পিপি না করলে রবি কাকার কোনো উপায় নাই। এটা তোমার বলার দরকার নাই।
তিনি আরও বলেন, আমার মনোনীত কমিটি না দিলে জেলা কমিটি ভেঙে দেওয়া হবে। এসময় তিনি আরও বলেন, আজ নজরুল সাহেব আসবেন তুমি যদি সাদেক ভাইকে সতি সত্যি চাও তাহলে আমার সাদেক ভাইয়ের সাথে কোন রাগ নেই। কিন্তু আমার আশাশুনি ছাত্র লীগের কমিটি ভাঙতে হবে। আর সুস্থ্যভাবে তুমি মনে রাখ আর আজ সন্ধ্যার মধ্যে যদি ছাত্রলীগের কমিটি না ভাঙতে পারি তাহলে সন্ধ্যার মধ্যে আত্মহত্যা করবো। আমি ঢাকায় যাচ্ছি। আমার কাছে এখন ৩০ লক্ষ টাকা গচ্ছিত আছে। ৩০ লক্ষ্ টাকা। তোমরা ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতেছো না কেন বলো তো? শুধুমাত্র এই কাইফুর জন্য। তোমরা রুহুল হকের স্যারের পিএকে অপমান করবা, গুষ্টি মারবা, জামাত পুত্র বানাবা। আমরা শুনবো? তোমরা স্যারকে এত ভালবাসো তাহলে কমিটি ভাঙছো কেন?
এইচ এম সোহাগ: স্যার তো সদর কমিটি ভাঙতে বলেননি।
কাইফু: স্যার বলবে কেন, আমি বলছি না? স্যার বলা, আমি বলা এক না? স্যার বলবে কেন? স্যার কি সব বলবে? তোমাদের বুঝে নিতে হবে ভাই। আমি বলা যা রুহুল হক বলা তাই না। কারণ আমি উনার পিএ। আমি সাদিক ভাইয়ের বাসা পর্যন্ত গেছি ভাই।
এইচ এম সোহাগ: আশিককে আহ্বায়ক ও আসিক শাহবাজকে সদস্য সচিব করে কেন্দ্র থেকে নতুন কমিটি করে ১৩ সেপ্টেম্ব সম্মেলনের তারিখ নিধারণ করা হয়ে গেছে।
এইচ এম সোহাগ: সাতক্ষীরা কি সম্মেলনের ডেট দিয়ে দেবে?
কাইফু: আমি তোমাকে বলি, ১৩ সেপ্টেম্বর, আশিক, মানে লাভলুর ভাই সভাপতি, (এসময় তাকে স্বাভাবিক মনে হয়নি অডিওতে-মাতালের মতো লাগছিল) ভাগ্নে, আশিক রুহুল হক সাহেবের লোক। সব লেখা শেষ। তুমি যদি একটা কাজ করতে পারো, সাদেক ভাইয়ের দিকে, তাহলে তুমি সদর কমিটি যদি ভেঙে দিতে পারো, তাহলে কালকে সন্ধ্যার পর দেখতো পারবা। শোভন ভাইয়ের ছোট ভাই, রাফী আমার পাশে আছে। তুমি রাফির সাথে কথা বলো।
রাফি:হ্যালো স্যালামুকুম।
এইচ এম সোহাগ: ভাই ভাল আছেন ভাই?
রাফি: হ্যা ভাল আছি, কাইফু ভাই তো ব্যক্তিগত বিষয়গুলো শেয়ার করলো।
এইচ এম সোহাগ: ভাই, একটা ব্যাপার কি? আপনি তো জানেন, এখন ব্লগের রাজনীতি হয়। আমরা সেক্রেটারি ব্লগের রাজনীতি করি। কাইফু ভাইয়ের কথা মতো সেক্রেটারি রাখার জন্য আমরা প্রস্তুত। কাইফু ভাইয়ের কথা মতো সেক্রেটারি রাখার জন্য প্রস্তুত। কারণ জেলা সেক্রেটারি কাইফু ভাইকে অনেক ভালবাসে, স্নেহ করে। সেটা কাইফু ভাই ভাল করেই জানে। তার কথা রাখার জন্য প্রস্তুত। এখন ব্যাপার হচ্ছে, জেলা প্রেসিডেন্ট যদি না ভাঙতে না রাজি হয় তাহলে আমার কিছু করার নাই। আমরা সর্বদা রুহুল হক স্যারের রাজনীতি করি। রুহুল হক স্যারের যে লোক, সে আমাদের লোক হবে স্বাভাবিক।
রাফি: বুঝতে পারছি। এটা একটা প্রবলেম, এটা সমাধানে আসতে হবে। আজকে আমাদের ছাত্রলীগের সম্মেলন তো, জগন্নাথের সম্মেলন। আমরা এখন সম্মেলনে যাচ্ছি। ভাই ব্যস্ত থাকবে। আমরা সম্মেলনে যাচ্ছি। এটা ভাইটাল প্রবলেম হয়ে যায়। আমার ডিপার্টমেন্টের বড় ভাই। শোভন ভাই আমার কাজিন, আপন চাচাতো ভাই। শোভন ভাইয়ের সাথে অনেক আগেই ভাইয়ের পরিচয় শোভন ভাই তো একদিনে নেতা হয়নি। সেটা এক বিশাল ইতিহাস। হুট করে নেতা হয়ে যাওয়া-বিষয়টি এ রকম এরকম। ভাইয়ের এই প্রবলেমটা দেখেন। আপনারা আছেন স্থানীয় পর্যায়ে। আমরা তো স্থানীয় পর্যায়ের সলভ করতে পারি না। ঢাকাতে থাকি, আপনাদের বিষয়টি আলাদা। বিষয়টি কিভাবে কি করা যায় বিষয়টি দেখেন।
অডিওটি ফাঁস হওয়ার পর সর্বত্র প্রশ্ন উঠছে, কে এই রাফি!
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন