দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মো. দিদারুল ইসলাম, বাবা দিনমজুর, মা গৃহিনী। দিদারুলের জন্ম থেকেই দুই চোখ অন্ধ। তারপরও ইচ্ছাশক্তি প্রকট। প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে এ বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘খ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় প্রতিবন্ধী কোঠায় মেধাতালিকায় স্থান পেয়েছেন।
শরীয়তপুর নড়িয়া উপজেলার বৈশাখীপাড়া গ্রামে বাড়ি মো. দিদারুল ইসলামের। শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার বিভিন্ন যায়গায় ঠেলাগাড়িতে কাজ করেন দিদারুল ইসলামের বাবা মো. সিরাজুল ইসলাম খান।
শরীয়তপুর সদরের আংগারিয়া সমন্বিত অন্ধ শিক্ষা কার্যক্রম আওতায় সমাজসেবা অধিদফতর থেকে সরকারি খরচে প্রথম শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত আংগারিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত আংগারিয়া উচ্চবিদ্যালয় এবং দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত শরীয়তপুর সরকারি কলেজে পড়ালেখা করেন দিদারুল।
গত ২১ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘খ’ ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে মেধাতালিকায় ১০৭৯ তম হন তিনি। কিন্তু টাকার অভাবে তার ভর্তি হওয়া নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।
দিদারুল ইসলাম জানান, ২০১৭ সালে আংগারিয়া উচ্চবিদ্যালয় মানবিক বিভাগ থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ ৪.০৯ এবং শরীয়তপুর সরকারি কলেজ মানবিক বিভাগ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ৩.২৫ পায়। তিনি নিজের ইচ্ছাশক্তি নিয়েই পড়াশোনা করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার আগ্রহ থেকে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন। ভর্তি হতে প্রায় ৩০ হাজার টাকা লাগবে। এত টাকা দেওয়ার ক্ষমতা তার পরিবারের নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেলে ভালো চাকরি করে দরিদ্র মা-বাবার মুখে হাসি ফোটাতে চান তিনি।
দিদারুল ইসলামের বাবা সিরাজুল ইসলাম খান বলেন, শুনছি ছেলেটা ঢাকাতে চান্স পাইছে। সামনে ভর্তি হতে হবে। ভর্তি হতে টাকা লাগবো। ঠেলাগাড়ি চালিয়ে নিজে চলতে পারি না ভর্তির টাকা জোগার করুম কি করে?
তিনি বলেন, আমি নিজে ঠেলাগাড়িতে কাজ করি। আমার দুই ছেলে দুই মেয়ে। দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। ছোট ছেলেকে ঢাকাতে কাজ শিখতে দিয়েছি। অভাবের কারণে এক ছেলে দুই মেয়েকে পড়াশুনা করাতে পারিনি। দিদারুল ইসলাম আমার বড় ছেলে। জন্ম থেকেই ছেলেটা আমার দুই চোখে দেখে না।
জেলা সমাজসেবা অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. কামাল হোসেন বলেন, দিদারুল এসএসসি ও এইচএসসি পাস করে আমার সঙ্গে দেখা করেছে। দিদারুল অনেক ভালো ছেলে। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হয়েও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরিক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। আমি অনেক খুশি। তার অদম্য ইচ্ছাই তাকে এই পর্যন্ত নিয়ে এসেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা-সুবিধা থাকায় দিদারুল ভালো বিষয়ে সুযোগ পাবেন বলে আমার ধরনা। আমি দোয়া করি দিদারুল ভবিষ্যতে আরও বড় কিছু করুক। বাবা-মার মুখ উজ্জ্বল করুক।
বিডি-প্রতিদিন/ সিফাত আব্দুল্লাহ