পটুয়াখালীর কলাপাড়াসহ উপকূলীয় এলাকার বিস্তৃর্ণ মাঠ জুড়ে ধান কাটার মহোৎসব শুরু হয়েছে। কেউ কেউ ধান কাটছেন, কেউ আঁটি বাঁধছেন। আবার কেউবা মাথায় করে ধানের আঁটি নিয়ে যাচ্ছেন বাড়ির উঠানে। যেন দম ফেলার ফুরসত নেই।
এরই সাথে চলছে প্রতিটি কৃষক পরিবারের বাড়িতে নবান্নের উৎসব। ভাল ফলন হওয়ায় ওইসব কৃষকের চোখে মুখে লেগে আছে সোনালী স্বপ্ন পূরণের ছাপ। কিন্তু ফরিয়া বা মধ্যস্বত্বভোগীদের তৎপরতায় ফসলের কাঙ্খিত মূল্য পাওয়া নিয়ে কৃষকদের মধ্যে রয়েছে শঙ্কা।
কৃষি অফিসের তথ্য সূত্রে জানা যায়, এবছর এ উপজেলায় ৩৪ হাজার ৪৯০ হেক্টার জমিতে আমন চাষ, ২৪ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে উচ্চ ফলনশীন ও শুধুমাত্র ১০ হাজার ১৪০ হেক্টর জমিতে স্থানীয় জাতের ধান চাষ করেছে কৃষকরা। তবে ঘূর্ণিঝড় বুলবুল’র তাণ্ডবে কিছু কিছু ধানের ক্ষেতে ক্ষতি হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট কৃষি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সকালের মিষ্টি রোদ এসে পড়তেই দিগন্ত জোড়া সোনালি ঢেউ। মাঠ জুড়ে সোনালি ধান। আমন ধানের গন্ধে ভরে উঠেছে গ্রামীণ জনপদ। হালকা বাতাসে পাকা ধানের শীষ দোল খাচ্ছে। স্বপ্নের সোনালী ধান কাটতে কাস্তে হাতে ব্যস্ত কৃষকরা। ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকদের মুখে ফুটেছে হাসির ঝিলিক। এ সব মিলিয়ে পরিপূর্ণ এক দৃশ্য যেন শিল্পীর তুলিতে আঁকা ছবি।
একাধিক কৃষক জানিয়েছেন, ঘুর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে আমন ধানের ক্ষেত তেমন কোন ক্ষতি সাধন হয়নি। সব মিলিয়ে এ বছর ক্ষেতে ভাল ফলন হয়েছে। তবে ধানের দাম নিয়ে কৃষকরা চিন্তিত।
কৃষক মো. রুহুল আমিন বলেন, যখন ক্ষেতে ধানের থোর বের হয়েছিল। ঠিক সেই সময় ঘূর্ণিঝড় বুলবুল আঘাত হানে। প্রচন্ড ঝড়ো হাওয়ায় ক্ষেতের কিছু কিছু অংশের ধান নুয়ে পড়েছে। এর ফলে ধানে চিটা হওয়ার আশংকা দেখা দিতে পারে বলে জানান ওই কৃষক।
কৃষক মন্টু চন্দ্র সরকার বলেন, এ বছর তিনি ১৬ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছেন। এ পরিমান জমিতে ধান ফলাতে ট্রাক্টর বাবদ দিতে হয়েছে ১৬ হাজার টাকা, বীজ বপনে শ্রমিকদের মজুরী ১২ হাজার টাকা এবং সার ঔষধে ১২ হাজার টাকাসহ তার মোট ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। তবে ঘূর্ণিঝড় বুলবুল’র আঘাতে তার ক্ষেতের কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। বাজারে ধানের দাম ভাল পেলে ক্ষতি পুষিয়ে ওঠা সম্ভব হবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল মান্নান বলেন, ঘূর্ণিঝড় বুলবুল যেভাবে আঘাত হেনেছে তাতে অনেকটা ক্ষতির আশংকা ছিল। ধান ক্ষেতের দৈহিক অবস্থানগত কারণে সেভাবে ক্ষতির সম্মুখিন হয়নি। যে ধানগুলো পরিপক্ক ছিল সেগুলো পরে গেছে। এ উপজেলায় তেমন কোন ক্ষতি সাধন হয়নি। যা হয়েছে তার তালিকা করে পাঠানো হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল