মুক্তিযোদ্ধাদের হালনাগাদ তালিকা ও গেজেটে মুন্সীগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধা আজাহার আলী চৌধুরীর নাম অন্তর্ভুক্তির আকুতি জানিয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন স্ত্রী বেগম রোকেয়া চৌধুরী। ইতোমধ্যে দফায় দফায় বিভিন্ন দফতরে আবেদন করেও প্রতিকার পাচ্ছেন না বলে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেছেন তিনি।
বেগম রোকেয়া চৌধুরী জানান, আমার স্বামী মৃত. মো. আজাহার আলী চৌধুরী একজন ভারতীয় ট্রেনিংপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে ১৯৭১ সালে দেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। কিন্তু তিনি দীর্ঘদিন রোগাক্রান্ত থাকার কারণে মুক্তিযোদ্ধাদের গেজেটভুক্ত ও যাচাই-বাছাইতে অংশ নিতে পারেননি। একই কারণে পরিবারের অন্যরাও হাজির হতে পারেননি। পরবর্তীতে ২০১৭ সালের ২৭ আগস্ট মৃত্যুবরণ করেন এই বীর মুক্তিযোদ্ধা।
এর আগে ও পরে মুক্তিযোদ্ধা মো. আজাহার আলী চৌধুরীর স্ত্রী বেগম রোকেয়া চৌধুরী প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যোগাযোগ করে স্বামীর নাম গেজেটে অন্তর্ভুক্তির জন্য গত ২৯ ডিসেম্বর ২০১৫ ও ২৮ জানুয়ারি ২০১৯ তারিখে পুনরায় আবেদন জমা দেন। এছাড়া জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলে ২ অক্টোবর ২০১৬ তারিখে আবেদন করেন, যার রিসিভ নং-৯৭৬৩ ও ২৮ জানুয়ারি ২০১৯ দাখিলকৃত আবেদনের রেজিস্টার নং-৩৪৫১২।
এদিকে, ২০১৫ সালের ২৮ নভেম্বর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর সাথে যোগাযোগ করে সুপারিশও নেন বেগম রোকেয়া চৌধুরী। সিরাজদিখান উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কার্যালয়ে ও উপজেলা যাচাই-বাছাই কমিটির সাথে যোগাযোগও করেছেন তিনি। চলতি বছরের ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে সিরাজদিখান উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সাথে তার অফিসে যোগাযোগ করেন তিনি। পরে ৩ এপ্রিল ২০১৯ তথ্য ও স্বাক্ষী হাজিরের দিন ধার্য করা হয়। সেই সময় সকল তথ্য ও স্বাক্ষী নিয়ে হাজির হন বেগম রোকেয়া চৌধুরী। পরে উপজেলা নির্বাহী অফিসের কার্যালয়ে সকল আবেদন ও তথ্য জমা দেওয়া হয় যার রেজিস্টার নম্বর-৭২৮। তারই প্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়, সিরাজদিখান, মুন্সিগঞ্জ থেকে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মহোদয়ের নিকট চলতি বছরের ৭ এপ্রিল চিঠি প্রেরণ করা হয়। যাতে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয় সিনিয়র সহকারী সচিব গেজেট অধিশাখা, বিতরণ জেলা প্রশাসক, মুন্সিগঞ্জ। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সচিবের কার্যালয়ে জমাকৃত আবেদন নং- ২১০২২১৩১৯০৪২১০০৯। সচিবের দফতরের সিরিয়াল নং-২৩৪৩ যার তারিখ ২১ এপ্রিল ২০১৯।
সচিবের কার্যালয় থেকে সহকারী সচিব (অতিরিক্ত দায়িত্ব) আকতার হোসেন খান গেজেটের আবেদনটি জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের মহা-পরিচালকের দফতরে প্রেরণ করেন, যার স্মারক নং- .....১৮.৩০৮০, তারিখ ২৪ জুলাই ২০১৯। মহা-পরিচালকের দফতরের জমাকৃত রেজিস্টার নং-৪৭৮। বর্ণনাতে ৩৫ পৃষ্ঠা আছে।
এই বিষয়ে বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় তার মুক্তিযোদ্ধার গেজেটে স্থান না পাওয়ার বিষয়টি নিয়ে খবর প্রকাশিত ও সম্প্রচারিত হয়। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী, সচিব, জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের মহাপরিচালক, সহকারী পরিচালক বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে যোগাযোগের পরামর্শ দেন। কারণ সিরাজদিখান উপজেলায় পুনরায় যাচাই-বাছাই করা হয় ২৮ নভেম্বর ২০১৯। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে ‘ক’ তালিকায় অন্তর্ভুক্তির জন্য আবেদন ও তথ্য পুনরায় জমা দেওয়া হয় ৩০ জুলাই ২০১৯ যার রেজিস্টার নং-১৫৯৬। পরবর্তীতে ১৮ নভেম্বর ২০১৯ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করা হয়। ২৮ নভেম্বর’ ২০১৯ সিরাজদিখান উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা পুনরায় যাচাই-বাছাইতে বীরমুক্তিযোদ্ধা মো. আজাহার আলী চৌধুরীর সহধর্মীনী ও তার বড় ছেলে মো. আনিসুর রহমান চৌধুরী রাশেদ উপস্থিত ছিলেন।
উপজেলা যাচাই-বাছাই কমিটির সদস্যগণ ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সামনে যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে প্রমাণীত হয় বীর মুক্তিযোদ্ধা আজাহার আলী চৌধুরী একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা। ডিজি নম্বর না থাকার কারণে “ক” তালিকার সংক্ষিপ্ত তালিকায় তার নাম অন্তর্ভুক্ত হয়নি বলে জানায় উপজেলা যাচাই-বাছাই কমিটি। তাই উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে আবেদন জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলে ২৮শে নভেম্বর’ ২০১৯ এর যাচাই-বাছাইতে সকল তথ্য ও স্বাক্ষী হাজির করা হয়। এই রিপোর্টটা চিঠি আকারে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলে প্রেরণের জন্য অনুরোধ করেন তিনি। ডিজি নম্বরের জন্য একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার নাম যাতে বাদ না যায় তার জন্য অনুরোধ করেন এই মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী বেগম রোকেয়া চৌধুরী।
তিনি আরও জানান, জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলে ২৮ জানুয়ারি ২০১৯ তারিখে আপিল করা হয়েছে, যার রেজিস্টার নং- ৩৪৫১২। স্বামীর মৃত্যুর পর অনেক কষ্ট করে জীবন অতিবাহিত করছি। ৪৮ বছর পরও যাতে আমার স্বামী তার প্রাপ্য সম্মান পান তার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্টদের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি।
মৃত বীর মুক্তিযোদ্ধা আজাহার আলী চৌধুরী মুন্সীগঞ্জ জেলার সিরাজদিখান থানার রাজানগরের তেঘরিয়া গ্রামের চৌধুরীবাড়িতে ১৯৫৫ সালের ২২ আগস্ট জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মৃত মো. জহের আলী চৌধুরী। মৃত্যুকালে স্ত্রী, ২ ছেলে ও ১ মেয়েসহ অসংখ্য সহযোদ্ধা, শুভাকাঙ্ক্ষী ও আত্মীয়স্বজন রেখে গেছেন তিনি।
বিডি-প্রতিদিন/এনায়েত করিম/শফিক