বগুড়ার শেরপুর উপজেলায় আলুর বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার ফলন ভালো হয়েছে। তবে কৃষিশ্রমিক, জমি তৈরি, সার, বীজসহ অন্যান্য কৃষি উপকরণের উচ্চমূল্যের কারণে আলুর উৎপাদন খরচ বেশি হয়েছে। তাই উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য নিয়ে শংকিত রয়েছেন তারা। তবে ইতিমেধ্যেই যারা আলু তুলেছেন তারা ন্যয্য মূল্য পেয়েছেন। আর যাদের আলু মাঠেই রয়েছে তারাও বাম্পার ফলনের স্বপ্ন দেখছেন।
গত বছরে আলু চাষে লোকসান খেয়েছে কৃষক। উৎপাদন খরচও তুলতে পারেনি অনেক কৃষক। এমনকি হিমাগারে আলু সংরক্ষণ করেও লাভের মুখ দেখতে পারেননি তারা। এবার বাম্পার ফলনের সম্ভাবনায় তারা আশায় বুক বেধেছেন। তবে শেষ মুহূর্তে এসে কি হবে তা বুঝতে পারছেন না তারা।
উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের আয়রা, বেলতা, উচরং, মামুরশাহী, বিশালপুর ইউনিয়নের পানিসারা, কুসুম্বী ইউনিয়নের দারুগ্রাম, খুরতা, আমইন, দক্ষিন আমইন, কেল্লা, পোশী, গোন্দইল, বেলঘরিয়া, জামুর এইসব গ্রামের বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠে এখন আলু তোলার কর্মযজ্ঞ চলছে। অনেক চাষী ইতিমধ্যেই আলু তুলে ফেলেছেন। আবার অনেকে আলু তোলার প্রস্তুতি হিসেবে গাছগুলোকে টেনে তুলে ফেলছেন।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় এবছর ২ হাজার ৫ শত হেক্টর জমি আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সেখানে ২ হাজার ৬শত হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। গত বছর আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ হাজার ৮ শ ৩০ হেক্টর। আর অর্জিত হয়েছিল ২হাজার ৮শ ৫০ হেক্টর যা এ বছরের তুলনায় ২৩০ হেক্টর বেশি ছিল। তবে গতবছরে আলু ক্ষেতে ভাইরাস দেখা দিয়েছিল। তাছাড়া দামেও মার খেয়েছেন কৃষক। তবে এবার তেমন কোন সমস্যায় পড়তে হয়নি তাদের।
উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের বেলতা গ্রামের আলু চাষী আসাদুজ্জামান লিটন জানান, তিনি এবার ২০ বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছেন। গতবছরে এই পরিমাণ জমিতে আলু চাষ করে লাভবান হতে পারেননি। তবে এবার ফলন ভালো হয়েছে। ইতিমধ্যেই তিনি আলুর গাছ তুলে ফেলেছেন। আর কয়েকদিনের মধ্যেই আলু তোলা শেষ হবে। এবার তিনি ভাল দামের প্রত্যাশা করছেন।
এদিকে অনেক কৃষক জমিতেই পাইকারদের কাছে আলু বিক্রি করেছেন। পাইকাররা বিঘাপ্রতি দাম ধরে আলু কিনে নিয়েছেন। এদিকে উপজেলার কোল্ডষ্টোরেজগুলোতে আলু সংরক্ষণের বুকিং চলছে। সেখানে বড় বড় ব্যবসায়ীরা ইতিমধ্যেই বুকিং দিয়ে রেখেছেন। তারা কৃষককে জিম্মি করে পানির দরে আলু কিনে মজুদ রাখার আগাম প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানা গেছে।
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা রুবেল আলম জানান, এ উপজেলায় কার্ডিনাল ও ডাইমন্ড জাতের আলু বেশি চাষ হয়েছে। এছাড়াও এক্সটারিজ, পাকরি, হাগরাই, রোমানা সহ বিভিন্ন জাতের আলু চাষ হয়েছে। এবার আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে। ইতিমধ্যেই যারা আলু তুলেছেন তারা বিঘাপ্রতি ৩৫-৩৬ হাজার টাকা দামে বিক্রি করেছেন। এখনও বিঘাপ্রতি ৩০হাজার টাকার বেশি দামে আলু বিক্রি হচ্ছে। তাই শেষ মুহুর্তেও আলু চাষীরা লাভবান হবেন বলে মনে করেন তিনি।
বগুড়ার শেরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোছা: সারমিন আক্তার বলেন, এবার আবহাওয়া ভালো ছিল। আমরা কৃষকদের বিভিন্ন সময় পরামর্শ দিয়েছি। কৃষি বিভাগের পরামর্শে এবছর আলুর ক্ষেতকে রোগ বালাইমুক্ত রাখতে পেরেছেন কৃষক। তাই আলুর ক্ষেতে তেমন কোন সমস্যা দেখা যায়নি। আশা করা যায় ভাল ফলন ও দাম পাবেন কৃষক।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার