টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে সূর্যমুখী ফুল চাষ করে লাভবান হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন ত্রিমোহন গ্রামের কৃষক মিলন মিয়া। কম খরচে লাভজনক হওয়ায় উপসী জাতের ফুল চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন মিলন ছাড়াও আরও ৫ চাষি। ইতিমধ্যেই গাছে ফুল ধরতে শুরু করেছে। এক একটি ফুল যেন হাসিমুখে সূর্যের আলো ছড়াচ্ছে। চারদিকে হলুদ ফুল আর সবুজ গাছে সে এক অপরূপ দৃশ্য। প্রতিদিন আশপাশের এলাকা থেকে সৌন্দর্য পিয়াসু মানুষ সূর্যমুখী ফুলের ক্ষেত দেখতে আসছে। অনেকেই ফুলের সঙ্গে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন। এ ফুল চাষে ব্যাপক সম্প্রসারণ সম্ভব বলে দাবি কৃষি অফিসের।
সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, এ বছর এই উপজেলায় প্রথম এই ফুল চাষ হচ্ছে। আবহাওয়া ও মাটি উপযোগী হওয়ায় সূর্যমুখী ফুল চাষে সাফল্য আসবে এমনটিও আশা কৃষকদের। পাশাপাশি ফুল থেকে উৎপাদিত তেল ও বীজ বিক্রি করে অধিক লাভবান হবেন এমনটিও মনে করছেন চাষিরা।
মির্জাপুর উপজেলার লতিফপুর ইউনিয়নের ত্রিমোহন এলাকায় কৃষি বিভাগের প্রণোদনায় বাণিজ্যিকভাবে ৫ বিঘা জমিতে সূর্যমুখীর আবাদ করেন প্রধান উদ্যোক্তা চাষি মিলন। ফেব্রæয়ারির মাঝামাঝি সময় থেকেই পুরো বাগানে ফুল ফুটতে শুরু করেছে। এতেই সবার নজর পরে সূর্যমুখী বাগান।
যত দূর চোখ যায়, দেখে মনে হয়, বিশাল আয়তনের হলুদ এক গালিচা। চোখে পড়ে শুধু সূর্যমুখী ফুল। আর এই ফুলের সঙ্গে দাঁড়িয়ে মনোরম দৃশ্য স্মৃতির পাতায় বন্দি করছেন অনেকেই। সূর্যোদয় থেকে শুরু করে সূর্যাস্ত পর্যন্ত ফুটে থাকা এই ফুল দর্শনার্থীদের টানছে এক আমোঘ আকর্ষণে। ফুল ফোটার শুরু থেকেই প্রতিদিন শত শত দর্শনার্থী এ বাগানে আসছেন। হলদে ফুলের সমারোহে হারিয়ে যেতে দর্শনার্থীরা ভিড় জমাচ্ছেন সূর্যমুখী বাগানে।
এদিকে সূর্যমুখী ফুল চাষিদের সকল ধরণের সহযোগিতা ও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা কৃষি অফিসার মোহাম্মদ মশিউর রহমান। কৃষি অফিস তথ্যমতে, চলতি বছর টাঙ্গাইল জেলাসহ মোট ১২টি উপজেলায় এ ফুল চাষ করা হয়েছে। এ মৌসুমে মির্জাপুর উপজেলায় ২.৫ টন বীজ উৎপাদনের লক্ষমাত্রা নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় মির্জাপুর উপজেলার লতিফপুর ইউনিয়নে ৫ জন কৃষককে সরকারিভাবে প্রতি বিঘা জমিতে চাষের জন্য ১.৫ কেজি বীজ, ২০ কেজি ডিএপি সার, ১০ কেজি এমওটি সার বিনামূল্যে সরবরাহ করা হয়েছে।
লতিফপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. জাকির হোসেন বলেন, এই ফসলটি মির্জাপুর উপজেলার চাষিদের জন্য সুখবর বয়ে আনতে যাচ্ছে। খুব অল্প টাকায় বেশি মুনাফা সম্ভব এই চাষের মাধ্যমে। এই ফুলের বীজ থেকে আমরা যে তেল পাবো তাতে ক্ষতিকর কোলেস্টেরল নেই। পরীক্ষামূলকভাবে সূর্যমুখী ফুল চাষের জন্য কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে বীজ ও সার সরবরাহ করা হয়েছে। বাজারে সরিষা ভাঙ্গানোর মেশিনের মাধ্যমেই এই বীজ ভাঙ্গিয়ে আমরা খাবার তেল পেতে পারি। পরীক্ষামূলক ৫ বিঘা জমিতে সূর্যমুখী চাষে আমরা ১৫০০-১৬০০ কেজি বীজ আশা করছি। যেখান থেকে আমরা তেল উৎপাদন করতে পারবো।
এ বিষয়ে মির্জাপুর উপজেলা কৃষি অফিসার মোহাম্মদ মশিউর রহমান জানান, এ উপজেলায় সর্বপ্রথম সরকারি প্রণোদনায় সূর্যমুখী বীজ ও সার সহায়ক হিসেবে দেওয়া হয়েছে। দেশের মানুষের জন্য নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্য নিশ্চিত করতে এ ফুলের চাষ করা হয়েছে। এ সূর্যমুখী ফুল থেকে উৎপাদিত তেলে ৪০ ভাগ লিনোলিক এসিড থাকে, যা হার্টের জন্য অত্যন্ত ভালো। এ ফুল থেকে তেল উৎপাদন করতে পারলে দেশের মানুষের ভোজ্য তেলের যে চাহিদা তা এই ফুলের মাধ্যমে পরিবর্তন করতে পারলে মানুষ স্বাস্থ্যসম্মত তেল পাবে। এ ফুল চাষে চাষি লাভবান হবেন বলেও আশা করেন তিনি। চাষি মিলনের মাধ্যমে পরবর্তী বছরে সারা মির্জাপুর উপজেলায় এ ফুল চাষের খবর ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব বলে দাবি করেন এবং ইতিমধ্যেই অনেক কৃষক এ সূর্যমুখী ফুল চাষে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
বিডি প্রতিদিন/আল আমীন