পুলিশ কনস্টেবল মফিজুল হক। পুলিশে চাকরি করেছেন ৩৯ বছর। সেই ১ নভেম্বর ১৯৮০ সালে তরতাজা যুবকটি পুলিশে যোগদান করেছিলেন। শেরপুরে দীর্ঘদিন চাকরি শেষে শেষ কর্ম দিবস ছিল গতকাল ৩১ জুলাই। অত্যন্ত নিরীহ গোছের এই পুলিশ সদস্যের বিদায়ে সকাল থেকেই থানার পরিবেশ ছিল অরেকটা মলিন।
বিদায় অনুষ্ঠানটি তেমন আড়ম্বর ছিল না। তবে থানা পুলিশের মধ্যে আবেগ অনুভূতি ছিল ভিন্ন রকম। পুলিশ সদস্যদের অনেকেই চোখের পানি ফেলেছেন। তবে এই চোখের পানি শুধু ওই পুলিশ সদস্যের বিদায়ের কারণে নয় -একজন কনেস্টেবলের বিদায়ে পুলিশ কর্মকর্তা ও সহকর্মীদর আন্তরিকতার সম্পর্কের কারণে।
শেরপুর জেলা পুলিশের প্রধান পুলিশ সুপার কাজী আশরাফুল আজীম থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছিলেন, মফিজ বিদায় বেলায় যেন সহকর্মীদের কাছে সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা সম্মান নিয়ে বাড়ি ফিরে। শেরপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাও আয়োজন কম করেননি। বিদায়ী পুলিশ কনেস্টবল ও তার পরিবারের জন্য দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন ধরনের উপহার সামগ্রী।
পুলিশের গাড়ি দিয়ে মালমাল পৌঁছে দেওয়া হয়েছে গ্রামের বাড়ি জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ থানায়। সফরসঙ্গী হন দীর্ঘ দিনের দুই সহকর্মী। পুুলিশ সুপারের পক্ষ থেকে আশ্বস্ত করা হয়েছে ওই কনস্টেবলের পেনশন ও সরকারি সুবিধাধিসহ যে কোন মানবিক সমস্যায় শেরপুর পুলিশ পাশে দাঁড়াবে। সূত্র জানায়, কর্মস্থলে যোগদান করে বর্তমানে বিরাজমান করোনা মহামারীতে সাহসিকতার সাথে মানবিক পুলিশ হিসাবে বিভিন্ন ডিউটিতে দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালনের স্বাক্ষরতা রেখেছেন মফিজ। তিনি পুলিশ বাহিনীর সর্ব নিম্ন পদে চাকরি করেও তার প্রতিটি কাজ পুলিশের জন্য সুনাম বয়ে এনেছে।
শেরপুর সদর থানায় তাকে যে ডিউটিতেই মোতায়ন করা হয়েছে সেখানেই আন্তরিকতার সহিত দায়িত্ব পালন করেছেন। কোন দিন না শব্দটি করেননি। তাহার দৈনন্দিন চলাফেরা থেকে শুরু করে প্রতিটি কাজই বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর একজন প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত দক্ষ পুলিশ হিসেবে সিনিয়র অফিসারদের নজর কেড়েছেন। তাহার প্রতিটি কাজই অন্যান্য পুলিশ সদস্যদের কাছে উদাহরণ ও অনুস্মরণীয়। দীর্ঘ কর্মজীবনে এই পুলিশ সদস্যের চাকরিতে কোন লাল দাগ নেই। তার বিদায় অনুষ্ঠানে সহকর্মীসহ থানার বিভিন্নস্থরের কর্মকর্তাগণ কান্না চোখে তাহার কর্মকাণ্ডের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।
আবেগআপ্লুত কনস্টেবল মফিজুল হক জানিয়েছেন, এই চাকরিতে কষ্ট, সুনাম, দুর্নাম, হাসি, কান্না সবই আছে। দেখেছি অসংখ্য ভাল মানুষ, অনেক ঘৃণ্য অপরাধীও দেখেছি। এক জীবনে অনেক অভিজ্ঞতাও হয়েছে। ভুলত্রুটির বাইরে শত বিতর্কের মাঝেও সর্বশেষ পুলিশই মানুষের বিপদে জীবন দিয়ে হলেও পাশে দাঁড়ায়। আমি একজন সামান্য সরকারি কর্মচারি। অবসরের এই দিনে আমার সহকর্মীদের শ্রদ্ধা আর ভালবাসায় আমরা অভিভূত। এসময় তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন।
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা