জোড়া লাগানো অবস্থায় জন্ম নেয়া জমজ শিশুর বাংলাদেশে প্রথম সফল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে পৃথকীকরণ মনি-মুক্তার ১১তম জন্মদিন পালন করা হয়েছে। বীরগঞ্জের প্রত্যন্ত গ্রামে বেড়ে উঠা সেই মনি ও মুক্তা আজ ১২বছরে পা দিয়েছে।
প্রতি বছর বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও মনি-মুক্তার বন্ধু-বান্ধবসহ প্রতিবেশি এবং গণমাধ্যম কর্মীদের উপস্থিতিতে কেক কেটে জম্মদিন পালন করা হলেও করোনা পরিস্থিতির কারণে শনিবার সকাল ১০টায় নিজ বাড়ী দিনাজপুরের বীরগঞ্জের শতগ্রাম পালপাড়ায় ঘরোয়া পরিবেশে জন্মদিন পালন করা হয়েছে।
এ বছর মনি ও মুক্তা বীরগঞ্জের শতগ্রাম পালপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৫ম শ্রেণীতে পড়ে। অস্ত্রপচারের মাধ্যমে পৃথক হওয়ার পর তাদের সুস্থ থাকা, বড় হয়ে ওঠা, স্কুলে যাওয়াকে সফলতা হিসেবে দেখছেন এলাকাবাসী।
মনি-মুক্তার বাবা জয় প্রকাশ পাল জানান, মনি-মুক্তার জন্মলাভের দিনগুলোর কথা আজও ভুলবো না। স্ত্রী কৃষ্ণা রাণী পালের গর্ভে ২০০৯ সালের ২২ আগষ্ট পার্বতীপুর ল্যাম্ব হাসপাতালে সিজারিয়ান সেকশনে অস্ত্র পাচারের মাধ্যমে জোড়া লাগা অবস্থায় শিশুর জন্ম নেয়। এসময় গ্রামের মানুষ এটাকে অভিশপ্ত জীবনের ফসল বলে প্রচার করতে থাকে। সমাজের নানা কুসংস্কারে প্রায় এক ঘরে হয়ে পড়ি। সমাজের নানা অপবাদে গ্রামে আসিনি। হতাশার মাঝে স্বপ্ন দেখি জোরা লাগা শিশুকে নিয়ে। বিভিন্ন চিকিৎসকের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে থাকি তাদের স্বাভাবিক জীবন ফিরে পাওয়ার জন্য। পরে রংপুরের চিকিৎসকগণ ঢাকা শিশু হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে যমজ বোনকে অস্ত্র পাচারের মাধ্যমে পৃথক করার পরামর্শ দেন।
তাদের পরামর্শক্রমে ২০১০ সালের ৩০ জানুয়ারী ঢাকা শিশু হাসপাতালে মনি ও মুক্তাকে ভর্তি করা হয়। এরপরে ৮ ফেব্রুয়ারী ঢাকা শিশু হাসাপাতালে শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. এ আর খানের সফল অপারেশনের মাধ্যমে শিশু দুটি ভিন্ন সত্ত্বা লাভ করে। নাম রাখি মনি ও মুক্তা।
মনি-মুক্তার মা কৃষ্ণা রাণী পাল জানান, আমরা সব কষ্ট ভুলে তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী তাদেরকে চিকিৎসক হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। জন্মদিনে দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়ে মনি-মুক্তা বলেন, আমরা চিকিৎসক হয়ে মানুষের সেবা করতে চাই। দেশবাসীর দোয়া এবং সহযোগিতা পেলে অবশ্যই স্বপ্ন পূরণ করতে পারবো।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল