হাওর অধ্যুষিত মৌলভীবাজার জেলার বিভিন্ন গ্রামে দেশীয় প্রজাতির ছোট ছোট গরুর খামার গড়ে উঠছে। খামারগুলো হাওরের প্রাকৃৃতিক ঘাস নির্ভর হওয়ায় গরু লালন-পালনে তুলনামূলক খরচ কম। এজন্য এলাকার শিক্ষিত বেকার যুবকসহ অনেকেই ছোট ছোট খামর তৈরিতে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।
তবে সরকার বা ব্যাংক থেকে আর্থিক সুবিধা পেলে এই ব্যবসাটি আরও জনপ্রিয় হয়ে উঠতো। সুযোগ থাকা সত্ত্বেও পুঁজি সংকটে অনেকের পক্ষেই গরু কেনা সম্ভব হচ্ছে না।
সম্প্রতি করোনার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের প্রণোদনা প্যাকেজের মাধ্যমে ৪ শতাংশ সুদে ঋণ দেওয়ার জন্য মাঠপর্যায়ে বিভিন্ন ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু নির্দেশনা থাকলেও হাওর অধ্যুষিত মৌলভীবাজারের কৃষকদের অনেকের কাছেই সেই ঋণ পৌঁছায়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মৌসুমভিত্তিক ফুল ও ফল চাষ, মাছ চাষ, পোলট্রি, ডেইরি এবং প্রাণিসম্পদ খাতে উদ্যোক্তা তথা খামারীদের ঋণ বিতরণের জন্য মৌলভীবাজার সোনালী ব্যাংকের আওতায় আড়াই কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়। কিন্তু ১৭ সেপ্টেম্ব পর্যন্ত বিতরণ করা হয় মাত্র ১৬ লাখ টাকা। জনতা ব্যাংক এক টাকাও বিতরণ করেনি। অগ্রণী ব্যাংকের আওতায় ১ কোটি টাকা বরাদ্দ আসলে ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৩০ লাখ ২৫ হাজার টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়।
এছাড়া কৃষি ব্যাংক মৌলভীবাজার সদর শাখায় ১ কোটি টাকা বরাদ্দ আসলে এখন পর্যন্ত প্রায় ৯০ লাখ, রাজনগর শাখায় ৭০ লাখ টাকার মধ্যে প্রায় ৪০ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। রুপালী ব্যাংকের আওতায় ৪৮ লাখ টাকা বরাদ্দ আসলে বিতরণ করা হয় প্রায় ২৫ লাখ টাকা। এই ঋণ বিতরণের মেয়াদ চলতি বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।
সরেজমিনে জানা যায়, হাওর পাড়ের প্রান্তিক ও ছোট কৃষকরা এবং বর্গা চাষীরা অনেকেই গড়ে তুলেন ছোট ছোট গরুর খামার। কেউ চারটা কেউ ছয়টা, আবার কেউ কেউ ১৫ থেকে ২০টা গরু ক্রয় করেন। যাদের সামর্থ নেই, যেমন বর্গা চাষীরা অন্যের কাছ থেকে টাকা ধার করে ৩ থেকে ৫টি গরু ক্রয় করেন।
খামারিদের অনেকেই জানান, পুঁজি সংকটের কারণে অনেকেই গরুর সংখ্যা বাড়াতে পারেননি। ব্যাংক থেকে সহজ শর্তে ঋণ পেলে তারা আরও বেশি গরু লালন-পালন করতে পারতেন।
ঋণের জন্য কোনো ব্যাংকের সাথে যোগাযোগ করেছিলেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে কয়েকজন খামারি জানান, ঋণের জন্য বিভিন্ন ব্যাংকে যোগাযোগ করা হয়েছে। কিন্তু ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা বলে তারা পাত্তা দেয়নি। কিন্তু দুই একটি ব্যাংক আবার তাদের ক্ষুদ্র উদ্যোগকে স্বাগত জানান এবং ব্যাংকিং সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
রাজনগর উপজেলার পাঁচগাঁও ইউনিয়নের কাউয়া দীঘি হাওর পাড়ের পশ্চিমভাগ গ্রামের খায়রুল আলী বলেন, আমাদের খামারের এখন ছোট বড় ১৬টি গরু রয়েছে। গত কোরবানির ঈদে আমরা ১২টি গরু বিক্রি করেছি। বাজারে গ্রাহক কম তাকায় প্রতিটি গরু বিক্রয় করতে হয়েছে সাত থেকে দশ হাজার টাকা কম মূল্যে। প্রণোদনা ঋণের জন্য আমার একাধিক ব্যাংকে গেছি। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি।
বর্গাচাষী সামচুল মিয়াসহ আনেকেই বলেন, আমাদের দেশীয় গরু দিয়ে ছোট ছোট খামার রয়েছে। শুনেছি সরকার আমাদের জন্য কম সুদে সহজ সর্তে ঋণের ব্যবস্থা করেছেন। কিন্তু ব্যাংকে গেলে আমাদের জামানতের অজুহাত দেখিয়ে বিদায় করে দেন।
মৌলভীবাজার সোনালী ব্যাংকের ডিজিএম দুলন কান্তি চক্রবর্তী বলেন, জামানত ছাড়া আমাদের ব্যাংকে ঋণের কোনো সুবিধা নেই।
মৌলভীবাজার জনতা ব্যাংকের ডিজিএম দেবাশীষ দেব বলেন, ওই ধরনের কোনো বরাদ্দ এখনো আসেনি।
রাজনগর কৃষি ব্যাংকের ব্যবস্থাপক গোলাম তৌহিদ বলেন, সরকারের এই মহতি উদ্যোগকে সফল করার জন্য আমরা খুঁজে খুঁজে উদ্যোক্তা ও প্রান্তিক খামারীদের ঋণ পৌঁছে দিচ্ছি।
বিডি প্রতিদিন/এমআই