২১ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ১৩:০৩

বাঁধ নির্মাণের দাবিতে নদীর পাড়ে দুই বৃদ্ধের অনশন!

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি:

বাঁধ নির্মাণের দাবিতে নদীর পাড়ে দুই বৃদ্ধের অনশন!

যমুনা নদীর কবল থেকে ফসলি জমি ও বসতভিটা রক্ষায় স্থায়ী তীর সংরক্ষন বাঁধ নির্মাণের দাবিতে তপ্ত রোদ ও বৃষ্টির মধ্যে দুই বৃদ্ধ নদীপাড়ে অনশন শুরু করেছেন। শুক্রবার থেকে ওই দুই বৃদ্ধ এনায়েতপুর থানার ঘাটাবাড়ী এলাকায় নদীর তীরে পাটি বিছিয়ে খালি গায়ে অনশন করছেন।  

তারা বলছেন, বাঁধ নির্মাণের আশ্বাস না পেলে তারা অনশন ভাঙনবেন না। দুই বৃদ্ধের অনশনে সহমত প্রকাশ করেছেন ভাঙন কবলিত শতশত মানুষ। 

অনশনকারী বয়োবৃদ্ধ ইয়াসিন প্রামানিক জানান, ৮০ বছরের জীবনে সাতবার নদী ভাঙনের শিকার হয়েছি। ভাঙতে ভাঙতে একেবারে নিঃস্ব হয়ে পড়েছি। শেষ জীবনে শুধু ভিটাটাই রয়েছে। সেই ভিটাই যদি বিলীন হয়ে যায় তাহলে বেঁচে থেকে কি হবে? পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু বা সঠিক আশ্বাস না দিলে অনশন ভাঙবো না।

আরেক বয়োবৃদ্ধ রহম আলী মোল্লা জানান, কয়েকদিন আগে নদী ভাঙন আতঙ্কে ঘরবাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে রেখেছি। শূন্য ভিটা পড়ে আছে। ভিটামাটির মায়ায় আমার কলিজা ছিড়ে যাচ্ছে। নদীতে সব বিলীন হচ্ছে-কেউ আমাদের দুঃখ দেখছে না। দেশের বহু জায়গায় বাঁধ নির্মাণ হচ্ছে কিন্তু পাউবো’র সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার নিজ জেলার সন্তান হয়েও আমাদের এলাকা রক্ষায় কোন ভূমিকা নিচ্ছে না। এর আগে মন্ত্রী, এমপি ও সচিব সাহেব ভাঙন পরিদর্শনে এসে দ্রুত বাঁধ করে দেবার আশ্বাস দিয়েছিল। কিন্তু বাধ নির্মাণে ব্যবস্থা নেয়নি। শুধু কিছু জিও ব্যাগ ফেলেছে। তাতে কোন কাজই হচ্ছে না। এ অবস্থায় সুখবর না পেলে নদীর পাড়ে নিজ বসত ভিটাতেই পড়ে থাকবো। তাতে বাঁচি আর মরি। 

বাঐখেলা গ্রামের বাসিন্দা ডা. হাসেম আলী ও সমাজসেসবক সামছুল মোল্লা জানান, নদী তীরে ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। ভাঙন রক্ষায় দুই বৃদ্ধ অনশন করছে। শত চেষ্টা করেও অনশনকারী দুই বৃদ্ধকে খাবার কিংবা নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া যাচ্ছে না। তারা এলাকা রক্ষায় স্থায়ী বাঁধ নির্মানের প্রতিশ্রুতি বাস্তয়ানের সুখবর চায়। দুজনের মধ্যে বৃদ্ধ রহম আলী একটু বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে স্থানীয়রা স্যালাইন দিয়েছে। 

স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘদিন ধরে এনায়েতপুর থানার দক্ষিণ অংশে ভাঙনের তাণ্ডবলীলা চলছে। প্রতিবছরই নদীতে পানি বৃদ্ধি ও কমার সময় প্রচন্ড ভাঙন শুরু হয়। ইতোমধ্যে ভাঙনে বিলীন হয়েছে ব্রাহ্মণগ্রাম, আড়কান্দি, ঘাটাবাড়ি, পাকুরতলা, কুঠিপাড়া, ভেকা ও পাচিল গ্রামের প্রায় সাড়ে ১১ হাজার বসতভিটা। বিলীন হয়েছে হাট বয়ড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বসন্তপুর নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়সহ অন্তত ৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ১৪টি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, কবরস্থান, ঈদগাহ মাঠ ও তাঁতকারখানাসহ বির্স্তীণ ফসলি জমিল। সবকিছু হারিয়ে হাজার হাজার মানুষ মানবেতর জীবযাপন করছে। এখনো ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। প্রতিদিন বিলীণ হচ্ছে বিস্তীর্ন জনপদ। কিন্তু পাউবো শুধু আশ্বাসই দিয়ে যাচ্ছে, কোন পদক্ষেপ গ্রহন করছে না। 

সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম জানান, দুই বৃদ্ধ অনশন করছে-বিষয়টি শুনেছি। তবে তারা যেন অনশন থেকে বিরত থাকে সে বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি আরো জানান, ভাঙনরোধে আমরাও সাধ্যমত চেষ্টা করছি। ইতোমধ্যে সাড়ে ৬ কিলোমিটার এলাকা স্থায়ী রক্ষায় সাড়ে ৬শ কোটি টাকার প্রকল্পটি অনুমোদনের অপেক্ষাধীন রয়েছে। অনুমোদন পেলে স্থায়ী রক্ষাবাঁধের কাজ শুরু করা হবে।


বিডি প্রতিদিন/হিমেল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর