তিস্তা রেল সেতুর মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ৮৬ বছর পেরিয়ে গেছে। তারপরও ঝুঁকি নিয়ে এই সেতু দিয়ে ট্রেন চলাচল করছে। তবে রেলপথমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন মুঠোফোনে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেছেন, মেয়াদোত্তীর্ণ তিস্তা রেল সেতুর পাশে আরেকটি সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা হতে নিয়েছে রেল বিভাগ। এজন্য প্রাথমিক সমীক্ষাও করা হয়েছে। নকশাও তৈরি হয়েছে। খুব দ্রুত সিদ্ধান্ত বাস্তাবায়নের কাজ হাতে নেয়া হবে।
পশ্চিমাঞ্চলীয রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, রংপুরের সাথে লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রমের রেল যোগাযোগের জন্য তিস্তা রেলসেতু নির্মিত হয়েছিল ১৮৩৪ সালে। বর্তমানে এই সেতুর বয়স ১৮৬ বছর। নির্মাণের সময় সেতুটির মেয়াদ ধরা হয়েছিল এক’শ বছর। মেয়াদ শেষের পর ৮৬ বছর পার করেছে এই সেতুটি। ঢাকার সাথে লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামের সরাসরি যোগাযোগ স্থাপনের জন্য নির্মিত হয় তিস্তা রেলওয়ে সেতু। নর্দান বেঙ্গল স্টেট রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ১৮৩৪ সালে ২১১০ ফুট লম্বা রেলসেতুটি নির্মাণ করে। তখন এ অঞ্চলের তৃতীয় বৃহত্তম রেলসেতু হিসেবে এটি পরিচিত ছিল। সেতুটির একাংশ রংপুরের কাউনিয়া উপজেলা এবং অপর অংশে পড়েছে লালমনিরহাট সদর উপজেলা। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সেতুটিতে মিত্রবাহিনী বোমবিং করায় একটি গার্ডার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরবর্তীতে ১৯৭২ সালে সেতুটি পুনরায় চালু করা হয়।
১৯৭৭ সালে রেলওয়ে ও সওজ বিভাগ যৌথভাবে রেলসেতুতে মিটারগেজ লাইনের পাশে ২৬০টি স্টিল ও কাঠের পাটাতন স্থাপন করে। ১৯৭৮ সালে ট্রেনের পাশাপাশি সড়ক যোগাযোগ শুরু করা হয়। তখন থেকেই সেতু দিয়ে ট্রেন ও যাত্রীবাহী বাস, ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহন চলাচল করতো। কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত মালবোঝাই ট্রাক পারাপারের ফলে সেতুর ওপর দিয়ে ট্রেন চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। আর এটি একমুখী সেতু হওয়ায় উভয় পাশে একই সঙ্গে যানবাহন চলাচল করতে পারে না। যখন ট্রেন আসে তখন সেতুতে যানচলাচল বন্ধ থাকতো। ২০০১ সালে রেলসেতুর পাশে তিস্তা সড়ক সেতু নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরবর্তীতে ২০১২ সালের ২০ সেপ্টেম্বরে বতর্মান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তিস্তা সড়ক সেতু উদ্বোধনের পর তা যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। আর সড়ক সেতু চালু হওয়ার পর মেয়াদোত্তীর্ণ রেল সেতুর যানবাহন চলাচল বন্ধ হলেও রেল সেতু দিয়ে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক থাকে। বর্তমানে সেতুটি দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ১৫টির মতো ট্রেন লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রাম থেকে ঢাকাসহ বিভিন্নস্থানে চলাচল করছে। সেতুর মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেও দীর্ঘদিন থেকে ঝুঁকি নিয়ে ট্রেন চলাচল করছে এই সেতুতে। ফলে যে কোন মুহূর্তে দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
মেয়াদোত্তীর্ণ এই সেতুর বিষয়ে সরকারের পরিকল্পনা সম্পর্কে রেলমন্ত্রী বলেছেন, তিস্তায় আরেকটি রেল সেতুর সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। পুরাতন সেতুর পাশেই আরেকটি সেতু নির্মাণে খুব দ্রুত কার্যক্রম হাতে নেয়া হবে। এ বিষয়ে সরকারের পরিকল্পনা রয়েছে।
তিনি আরো জানান, সারাদেশের রেলপথ ব্রডগেজে রূপান্তরের প্রক্রিয়া চলছে। পার্বতিপুর থেকে কাউনিয়া পর্যন্ত ব্রডগেজ লাইন স্থাপনের পরিকল্পনা চূড়ান্ত হয়েছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে রংপুরে ট্রেনের সংখ্যা বাড়বে।
রংপুর রেলস্টেশনের সুপারেন্টেন্ড উত্তম কুমার বলেন, সেতুটির অনেক আগেই মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। তারপরও প্রতিদিন ওই সেতু দিয়ে ১২ থেকে ১৫টি ট্রেন চলাচল করছে।
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা