প্রথমে হাত-পা বাঁধা হয়। তারপরে ঘরের মধ্যে নিয়ে লোহার পাইপ দিয়ে বেদম পেটানো, এক পর্যায়ে বুঁকের উপর উঠে নির্মম নির্যাতন। মাদারীপুরের ডাসারে এমন কায়দায় টাকা আর মোবাইল চুরির অভিযোগে আসিক চৌকিদার নামে এক স্কুলছাত্রকে শারীরিকভাবে নির্যাতন চালিয়েছেন রেজাউল করিম ভাষাই নামে এক ব্যক্তি।
গুরুতর আহত অবস্থায় ওই স্কুলছাত্রকে জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে নির্যাতনের ঘটনা ঘটলেও শনিবার রাতে নির্যাতনের ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তীব্র নিন্দার ঝড় উঠে। এই ঘটনায় দোষীদের কঠোর বিচার দাবি করেছেন মানবাধিকার কর্মীরা।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মাদারীপুরের ডাসার এলাকার কমলাপুর বাজারে কালাই শিকদারের হার্ডওয়ারের দোকানে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নগদ টাকা আর মোবাইল চুরির ঘটনা ঘটে। এই চুরির ঘটনার অভিযোগ এনে পূর্ব কমলাপুর গ্রামের হিমজাল চোকিদারের দশম শ্রেণীতে পড়ুয়া ছেলে আসিক চৌকিদারকে বাজার থেকে তুলে নিয়ে ডাসারের ব্যবসায়ী রেজাউল করিম ভাষাই। এক পর্যায়ে ভাষাইয়ের নেতৃত্বে ৫ থেকে ৬ জন মিলে আসিককে দঁড়ি দিয়ে বেঁধে লোহার পাইপ দিয়ে বেদম পিটানো হয়। এক পর্যায়ে তার মাথায় আঘাত করে রক্তাক্ত করে। চলে বুঁকের উপর উঠে লাথি-ঘুষিও। পরে স্থানীয়রা উদ্ধার করে মাদারীপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে আসে। এখানেও ভাষাইয়ের লোকজন চিকিৎসা নিতে বাঁধা দেয়। বিষয়টি শনিবার রাতে একব্যক্তি ফেসবুকে দিলে সমালোচনার ঝড় উঠে। বতর্মানে আসিক চিকিৎসাধীন। দোষীদের শাস্তির দাবি ভুক্তভোগী পরিবারের।
নির্যাতনের শিকার কিশোর আসিক চৌকিদার বলেন, আমাকে বেদম মারধর করেছে। আমরা গরীব বলে কি এর বিচার পাবো না? আমি এর বিচার চাই।
নির্যাতনের শিকার কিশোরের মা মুনিরা বেগম বলেন, আমার ছেলেকে চুরির অপবাদ দিয়ে মারধর করেছে। এখন শালিস মিমাংসার জন্য চাপ দিচ্ছে। এর আগে হাসপাতালে নিতেও বাধা দিয়েছে ভাষাই ও তার লোকজন। আমরা এর বিচার চাই।
বিষয়টি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা সদর হাসপাতালে গিয়ে শিশুটি খোঁজ খবর নেয়।
মাদারীপুুরের মানবাধীকার কর্মী সুবল বিশ্বাস, বলেন আইন কারো হাতে তুলে নেওয়ার সুযোগ নেই। ছেলেটিকে নির্যাতন করা মোটেও ঠিক হয়নি। আমরা দোষীদের কঠোর বিচার দাবি করছি। পুলিশের উচিত দ্রুত অপরাধীদের গ্রেফতার করা। গ্রেফতার না হওয়ায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি আরও বলেন, শুনেছি এখনও মামলা হয়নি, এটা খুবই দুঃখজনক।
মাদারীপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহবুব হাসান বলেন, চুরির অপবাদ দিয়ে মারধর করা আইনত গর্হিত অপরাধ। নির্যাতনের শিকার কিশোরের পরিবার থেকে মামলা করা হলে পুলিশ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
এদিকে ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর পুরো পরিবারের লোকজন আত্মগোপনে আছেন। তবে অভিযুক্ত রেজাউল করিম ভাষাই মোবাইল ফোনে দাবি করেছেন, চোরকে শাস্তি দেয়া হয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল