ফরিদপুরের মধুখালীর জাহাপুর ইউনিয়নের আড়ুয়াকান্দি গ্রামের অরুনা রানী সাহার ছেলে রাজু সাহা (২৪) খুনের ঘটনার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। ঘটনার সাথে জড়িত জসিম মোল্যাকে আটকের পর তিনি পুলিশের কাছে রাজুকে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন।
মঙ্গলবার দুপুরে জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে রাজু সাহা খুনের বিস্তারিত ঘটনা জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জামাল পাশা। গত ৩ জানুয়ারি রাজু সাহার লাশ একটি টয়লেটের ভেতর থেকে উদ্ধার করে পুলিশ।
সংবাদ সম্মেলনে জামাল পাশা জানান, রাজু সাহার বড় ভাই সুমন ঢাকায় বিক্রমপুর মিষ্টান্ন ভান্ডার নামে একটি দোকান পরিচালনা করতেন। সেই সুবাধে তার ভাই রাজু সাহা ঢাকায় থাকতেন। সুমন সাহা মধুখালীর জাহাপুর ইউনিয়নের আড়ুয়াকান্দিতে একটি বাড়ি নির্মাণ করছিলেন। ফলে রাজু সাহাকে বাড়ি নির্মাণের কাজ দেখাশোনা করার জন্য বাড়িতে পাঠানো হয়। সেই নির্মাণাধীন বাড়িতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতো রাজু সাহার ঘনিষ্ঠ সহযোগী জসিম মোল্যা।
জসিম মোল্যা রাজমিস্ত্রি হিসেবে কাজ করলেও তিনি রাজু সাহার সাথে সব সময় থাকতেন এবং একসাথে নেশাও করতেন। শনিবার সন্ধ্যায় জসিম ফোন করে রাজু সাহাকে বলেন, সে নির্মাণাধীন বাড়িতে একা থাকতে পারবে না। তার সাথে রাজুকেও থাকতে বলে। এ কথায় রাজু সাহা রাজী হয় এবং রাতে জসিমের সাথে রাত কাটায়। রাতে দুইজন একসাথে নেশাও করে।
পরে গভীর রাতে রাজু সাহা প্রসাব করার জন্য বের হলে জসিম পেছন থেকে লোহার রড দিয়ে মাথায় আঘাত করে হত্যা করে। পরে রাজু সাহার লাশটি মিস্ত্রিদের জন্য ব্যবহার করা একটি টয়লেটের ভেতরে ফেলে ইট-বালু দিয়ে চাপা দিয়ে পালিয়ে যায়। পরবর্তী সময়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে।
পুলিশ সুপার আরও জানান, পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে জসিম স্বীকার করে, সে যে মেয়েকে ভালোবাসতেন, রাজু সাহাও তাকে ভালোবাসতেন। এ নিয়ে দুইজনের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়। ভালোবাসার মেয়েটিকে পেতে রাজু সাহাকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা করে জসীম। সে পরিকল্পনা অনুযায়ী একাই জসীম খুন করে রাজু সাহাকে। রাজু সাহা খুনের পর জসীমের জবানবন্দিতে বেরিয়ে আসে নানা তথ্য।
রাজু সাহা ধর্মান্তরিত হয়ে এক মুসলিম নারীকে ২০১৮ সালে বিয়ে করে। সেই ঘরে একটি সন্তানও রয়েছে। রাজু সাহার খুনের পর স্বামী দাবি করে এক নারী লাশটি তার হেফাজতে দিতে পুলিশের কাছে আবদেন জানালে রাজু সাহার ধর্মান্তরিত ও বিয়ের ঘটনাটি ফাঁস হয়। স্থানীয় এলাকাবাসী, এমনকি রাজুর পরিবারের লোকজনও জানতো না রাজু ধর্মান্তরিত হয়েছে এবং বিয়ে করেছে।
উক্ত নারীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশের পক্ষ থেকে বিয়ের কাবিননামা যাচাইয়ের জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। ঢাকা থেকে যদি বিয়ের কাবিননামা সঠিক থাকে তাহলে লাশটি তার স্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করা হবে। আর বিয়ের কাবিননামা ঠিক না হলে রাজুর পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। ফলে রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত রাজুর মরদেহ ফরিদপুর ডায়াবেটিক হাসপাতালের হিমঘরে থাকবে বলেও জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জামাল পাশা।
বিডি প্রতিদিন/এমআই