১৮ জানুয়ারি, ২০২১ ১৮:০৪

ধুনটে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনে ৭ জনের কারাদণ্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক, বগুড়া

ধুনটে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনে
৭ জনের কারাদণ্ড

বগুড়ার ধুনট উপজেলার ভান্ডারবাড়ী ইউনিয়নের যমুনার চরে লঞ্চ চালিত ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করায় ৭ জনকে আটক করে ১৫ দিনের কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এছাড়া বালু উত্তোলন কাজে ব্যবহৃত ৪টি লঞ্চ চালিত ড্রেজার মেশিন ও বালু উত্তোলনের সরঞ্জামাদি জব্দ করা হয়েছে। রবিবার সন্ধ্যায় ধুনট থানা পুলিশের সহযোগিতায় ধুনট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সঞ্জয় কুমার মহন্ত এ অভিযান পরিচালনা করেন। 

দন্ডাদেশ প্রাপ্তরা হলেন ধুনট উপজেলার রাঁধানগর গ্রামের মৃত ফরিদ সরকারের ছেলে সুজাত আলী (২৩), একই গ্রামের আব্দুর রহমানের ছেলে জেলহক হোসেন (৩৫), বৈশাখী গ্রামের মৃত মজিবর রহমানের ছেলে সুমন সরকার (৩২), পারলক্ষিপুর গ্রামের ফজর আলীর ছেলে মহাব্বত আলী (৩২), সিরাজগঞ্জ জেলার তাড়াশ উপজেলার বিলসারা গ্রামের আসির উদ্দিনের ছেলে আলাউদ্দিন (৫০), টাঙ্গাইল জেলার কালিহাতী উপজেলার গোহালিয়া গ্রামের আজাহার মন্ডলের ছেলে ঠান্ডু মন্ডল (৩৫) ও বেড়িপোটল গ্রামের শরিফুল ইসলামের ছেলে হোসেন আলী (২৫)।

জানা যায়, ধুনট উপজেলা যুবলীগের ত্রাণ বিষয়ক সম্পাদক বেলাল হোসেন, ভান্ডারবাড়ী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি হযরত আলী ও ভান্ডারবাড়ী ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহমুদুলের নেতৃত্বে যমুনার চরাঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরে ৩০ থেকে ৪০টি লঞ্চ চালিত ড্রেজার মেশিনে বালু উত্তোলন করে তা বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করে আসছিল। সেখানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন ইউএনও। কিন্তু ভ্রাম্যমান আদালতের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যায় বালু উত্তোলনকারী। কিন্তু এর দুই দিন পর থেকে আবারো ওই যমুনার চরে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু করে বিক্রি করতে থাকে প্রভাবশালীরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এক সময় লুঙ্গি বিক্রেতা ছিলেন ভান্ডারবাড়ী ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহমুদুল হাসান। পরে তিনি বালু ব্যবসায় নেমে পড়েন। যমুনার চর কেটে বালু ব্যবসা করে কোটিপতি বুনছেন তিনি। বগুড়া শহরের জলিশ্বরিতলা রয়েছে তার কোটি টাকার বিলাশ বহুল বাড়ি। কয়েক কেটি টাকা দিয়ে কিনেছেন তিনটি বড় বড় লঞ্চ চালিত ড্রেজার মেশিন। তার নেতৃত্বে ভান্ডারবাড়ী ইউনিয়নের আরো ৩০টি লঞ্চ চালিত ড্রেজার মেশিন পরিচালিত হয়ে আসছে। তবে বিএনপি নেতা মাহমুদুলের দল ক্ষমতায় না থাকায় তিনি তার বালুর ব্যবসায় পার্টনার করেছেন ভান্ডারবাড়ী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি হযরত আলী ও ধুনট উপজেলা যুবলীগের ত্রাণ বিষয়ক সম্পাদক বেলাল হোসেনসহ ক্ষমতাসীন দলের আরো কয়েক নেতাকে।

তারা দীর্ঘদিন ধরে যমুনার চরে ৩০ থেকে ৪০টি ড্রেজার মেশিনের সাহায্যে বালু উত্তোলন করে বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। তবে এ বিষয়ে ভান্ডারবাড়ী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি হযরত আলী বলেন, তার কোন ড্রেজার মেশিন নেই। তবে মাহমুদুলসহ আরো অনেক ব্যক্তি লঞ্চ ড্রেজার কিনেছেন। তাদের ড্রেজার ভাড়া করে এনে বালু উত্তোলন করেছিলেন তিনি। বর্তমানে সেই বালু এখন বিক্রি করছেন। তবে নতুন করে কোন বালু উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত নয় বলেও দাবি করেন তিনি।  

বৈশাখী চরের আজিবর রহমান ও চাঁন মিয়া জানান, যমুনায় পানি বাড়লে বৈশাখী ও রাধানগর চরের বাসিন্দারা বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাধে আশ্রয় নিয়ে বসবাস করেন। আবার যমুনার পানি কমে গেলে লোকজন চরে বসবাস শুরু করেন এবং ফসল ফলিয়ে জীবন জীবিকা চালান। কিন্তু ভূমিদস্যুরা প্রায় অর্ধ শতাধিক বড় বড় লঞ্চ চালিত ড্রেজার মেশিনে বালু উত্তোলন করায় চরাঞ্চল এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। তবে মাঝেমধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হলেও কিছু দিন পর থেকে আবারও ভূমিদস্যুরা বালু উত্তোলন করতেই থাকে।    

বগুড়ার ধুনট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সঞ্জয় কুমার মহন্ত বলেন, যমুনা নদীর চর কেটে বালু উত্তোলন করায় ৭ জনকে আটক করে ১৫ দিনের কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া ৪টি লঞ্চ চালিত ড্রেজার মেশিন জব্দ করে এক স্থানীয় ইউপি সদস্যের হেফাজতে রাখা হয়েছে। এ বিষয়ে পরবর্তীতে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি। 
ধুনট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কৃপা সিন্ধু বালা বলেন, কারাদন্ডপ্রাপ্ত আসামিদের সোমবার সকালে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। 

বিডি প্রতিদিন/আল আমীন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর