কুড়িগ্রামসহ দেশে অনেকদিন বিলুপ্ত প্রায় কাউন চাষ। যা ভাতের মত খাদ্য হিসেবে গ্রামে গঞ্জে বেশি আহার করত মানুষজন। ইদানীং এই কাউন চাষ করে চরাঞ্চলের কৃষকরা তাদের ভাতের বিকল্প খাবারে ঝুঁকছেন। কুড়িগ্রাম জেলার ব্রহ্মপুত্র নদ ও তিস্তা নদীর চরে আবারও কাউন চাষ করছেন চরের কৃষকরা।
জেলার উলিপুর উপজেলার বিভিন্ন চরে চলতি মৌসুমে কাউনের ফলন ভালো হওয়ায় নতুন করে স্বপ্ন দেখছেন কৃষকরা। পরপর কয়েক দফা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হন চরের কৃষকরা। তার ওপর নদী ভাঙন। কিন্তু এসময় এ কাউন চাষ তাদের আশার আলো যুগিয়েছে। এক সময় মঙ্গাপীড়িত এ অঞ্চলের অভাবী মানুষজন ভাতের বিকল্প হিসেবে কাউনের চালের ভাত ও পান্তা খেয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন।
বর্তমানে কাউনের চালের পিঠা, পায়েস ও মলাসহ বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রী গ্রামের মানুষের পাশাপাশি শহরের মানুষের শখের মুখরোচক খাবারে পরিণত হয়েছে। চলতি মৌসুমে উপজেলা কৃষি বিভাগের উদ্যোগে খরিফ-১ স্থানীয় উন্নত জাতের কাউন চাষ করেছেন বেশ কিছু কৃষক।
উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদ বেষ্টিত চরের বুড়াবুড়ি, সাহেবের আলগা, বেগমগঞ্জ, হাতিয়া ও তিস্তা নদীর অববাহিকায় থেতরাই, দলদলিয়া, গুনাইগাছ ও বজরা ইউনিয়নের প্রায় শতাধিক চর ও দ্বীপ চরে কাউন চাষ করেছেন কৃষকরা।
সরেজমিনে জানা যায়, এসব চরে এখন কাউন চাষে সবুজের সমারোহ। ধু-ধু সাদা বালু চরগুলো ঘিরে এখন সবুজময়। নতুন স্বপ্নে বিভোর চরবাসী। বিস্তীর্ণ চর জুড়ে কাউনের খেতে কৃষকের হাসি। বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের বিন্দুর চরের কৃষক বিন্দু মিয়া বলেন, এ বছর আমি দেড় একর জমিতে কাউন চাষ করেছি। ফলনও ভাল হয়েছে। এ চাষে উৎপাদন ব্যয় কম হওয়ায় দিন দিন আমাদের অনেক চাষির আগ্রহ বেড়েছে।
কৃষকরা এবছর বাজারে কাউনের কাঙ্ক্ষিত দাম পেলে আরও সামনে এ চাষ বাড়ার প্রত্যাশা তাদের।আগামী বছর চরাঞ্চলে ব্যাপকভাবে কাউন চাষে উদ্বুদ্ধ হবেন তারা। এছাড়াও অন্য চরের কাউন চাষি মিজানুর রহমান, বাবর আলী, আব্দুস সামাদ জানান, আগে কাউন চাষ তেমন ছিলনা। এবছর ব্যাপকভাবে তারা এ চাষ করেছেন।
উলিপুর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর এ উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের চরাঞ্চলে কাউনের আবাদ ২ হাজার ১৩৭ বিঘা জমির ওপর ছাড়িয়ে গেছে। তবে অল্প খরচে তাদের উৎপাদিত প্রতি মণ কাউন বাজারে ২২০০-২৪০০ টাকায় বিক্রি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে অধিক মুনাফার আশায় চরাঞ্চলের এসব কাউন চাষিরা নতুন করে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন।
এ ব্যাপারে উলিপুর উপজেলা কৃষি অফিসার সাইফুল ইসলাম বলেন, চরাঞ্চলের জমিতে কম খরচে লাভজনক কাউন চাষে আগ্রহী হচ্ছেন চাষিরা।আমাদের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাগণ নিয়মিত চাষিদের মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছেন।
বিডি প্রতিদিন/আবু জাফর