১৭ জুন, ২০২১ ১৮:২৮

হালুয়াঘাটে হেয়ার ক্যাপ তৈরি করে স্বপ্ন বুনছেন গ্রামীণ নারীরা

সাইদুর রহমান রাজু, হালুয়াঘাট

হালুয়াঘাটে হেয়ার ক্যাপ তৈরি করে স্বপ্ন বুনছেন গ্রামীণ নারীরা

হালুয়াঘাটে গ্রামীণ নারীরা হেয়ার ক্যাপ তৈরি করছেন।

ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটে ছেঁটে ফেলা চুল দিয়ে ঘরে বসেই হেয়ার ক্যাপ তৈরি করছেন দরিদ্র নারী ও স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থীরা। তৈরি করা এসব হেয়ার ক্যাপ চীনসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে রফতানি হচ্ছে। এসব ক্যাপ তৈরি করে প্রতি মাসে ৭ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করছেন তারা। এতে এলাকার বেকার শিক্ষিত নারীরা খুঁজে পাচ্ছেন বাড়তি আয়সহ নতুন কর্মসংস্থান।

সরেজমিন জানা যায়, এ কাজে উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ করছেন উপজেলার ধারা ইউনিয়নের টিকুরিয়া গ্রামের হাফেজ আলীর কন্যা রত্না আক্তার ফাতেমা। পার্শ্ববর্তী উপজেলা ফুলপুরে স্বামীর উৎসাহে এই কাজে যোগ দেওয়া। পরিচয় ঘটে ক্রেতা সংশ্লিষ্টদের সাথে। কাজের আগ্রহ দেখে ক্রেতা সংশ্লিষ্টরা এগ্রিয়ে আসেন, বাড়িয়ে দেন সহযোগিতার হাত। এরপর রত্না আক্তারকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। স্বামীর বাড়িতে জায়গা সংকুলান না হওয়ায় বাবার পরিত্যক্ত ভিটায় বাণিজ্যিকভাবে গড়ে তুলেন হেয়ার ক্যাপ তৈরির কারখানা।

সেখানে স্থানীয় নারীদের প্রাথমিক প্রশিক্ষণ শেষে তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয় চুল, সুই-সুতাসহ হেয়ার ক্যাপ তৈরির যাবতীয় সরঞ্জাম। এখন তার কারখানায় নিয়মিতভাবে ৬০ জন নারী কাজ করছেন। করোনা পরিস্থিতিতেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে পুরোদমে চলছে হেয়ার ক্যাপ তৈরি। বর্তমানে গ্রামের অনেক শিক্ষিত ও বেকার নারী আগ্রহী হয়ে উঠেছে এ কাজ করতে।

স্থানীয়রা জানান, এখানে এমন একটি কারখানা হাওয়ায় আমাদের গ্রামের অনেক গরিব পরিবারের মেয়েরা এখানে কাজ করে স্বাবলম্বী হচ্ছে। এমনকি যারা লেখাপড়া করে তারাও এখানে কাজ করে তাদের লেখাপড়ার খরচ চালিয়ে যাচ্ছে।

উদ্যোক্তা রত্না আক্তার ফাতেমা জানান, গ্রামীণ নারীদের তৈরি করা এসব হেয়ার ক্যাপ চীনসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে রফতানি হচ্ছে। গ্রামের হত দরিদ্র নারীরা নিজেদের সংসারের কাজের ফাঁকে এই কাজ করে আমার কাছে সরবরাহ করে। ক্যাপ তৈরির জন্য চুল ও বিভিন্ন সরঞ্জামাদি আমাকে ঢাকা থেকেই সরবরাহ করা হয়। প্রতিমাসে রকমভেদে তৈরি করা প্রায় ৩ শতাধিক টুপি সরবরাহ করেন। বাজার মূল্য ৪ লাখ থেকে প্রায় সাড়ে চার লাখ টাকা ছাড়িয়ে যায়। তাদের তৈরি করা হেয়ার ক্যাপ ঢাকার উত্তরার একটি প্রতিষ্ঠান সরবরাহ করে থাকেন। সরকারি কোনো সহযোগিতা পেলে তার ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠানটি আরো বড় করা সম্ভব হতো বলে জানান তিনি।

কথা হয় কাজ করতে আসা মাতুফা বেগমের সাথে। তিনি জানান, দেশের করোনা পরিস্থিতির মধ্যে আমরা স্বামী-স্ত্রীসহ ঢাকায় একটি তৈরি পোশাক কারখানায় কাজ করতাম। গত লকডাউনে আমার চাকরি চলে যায়। অনেক ঋণের বোঝা মাথায় গ্রামের বাড়িতে চলে আসি। কিন্তু কী করব কিছুই ভেবে পাচ্ছি না। এক সময় আমাদের গ্রামেরই এই হেয়ার ক্যাপ কারখানায় প্রশিক্ষণ গ্রহণ শেষে এখানেই কাজ করছি।

স্কুল শিক্ষার্থী সাদিয়া ও আয়শা জানান, করোনার কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। তিনমাস ধরে এ কাজের সাথে যুুক্ত আছি। অবসর সময়ে আমরা এই কাজ করি। চুল দিয়ে একটি ক্যাপ তৈরি করতে পারলে আমরা ১ হাজার থেকে ১২০০ টাকা পর্যন্ত পাই। একটি ক্যাপ তৈরি করতে দুই থেকে তিন দিন সময় লাগে। আমাদের আয়ের টাকা দিয়ে আমাদের নিজেদের খরচ চলে যায়।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে হালুয়াঘাট উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা গোলে জান্নাত সেতু জানান, আমাদের কার্যালয় থেকে ৩ মাসের সেলাই প্রশিক্ষণ ও বিউটি পার্লারের কাজ শেখানো হয়। এ কাজে নিয়োজিত নারীরা যদি এ ধরনের প্রশিক্ষণে আসতে চায়, তাহলে তাদের জন্য সর্বাত্মক সহযোগিতা থাকবে।

এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রেজাউল করিম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, নিঃসন্দেহে ভালো একটি উদ্যোগ। এ ধরনের কাজে নিয়োজিত হয়ে একদিকে বেকারত্ব দূর হচ্ছে এবং অর্থনীতির চাকাও সচল হচ্ছে। অন্যান্যরাও যেন অনুপ্রাণিত হয়ে এগিয়ে আসেন। এই শিল্পকে বড় পরিসরে এগিয়ে নিতে সহযোগিতার প্রয়োজন হলে আমরা তার ব্যবস্থা করব।

বিডি প্রতিদিন/এমআই

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর