বগুড়ায় বাণিজ্যিকভাবে পতিত জমিতে চাষ হচ্ছে পানিফল। স্থানীয় বাজারে পানিফল বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা কেজি। বগুড়া শহরের আশপাশের বিভিন্ন বিল, জলাশয়ে এই পানিফল চাষ হচ্ছে। পানিতে জন্মে বলে পানিফল, লতাপাতার মতো জলাশয়ে ভাসতে দেখা যায় পানিফলের গাছ। মৌসুমি ফসল হিসেবে পানিফল চাষ হয়। অনেকে মাছের সঙ্গে মিশ্রভাবেও চাষ করে থাকেন। পানিফলে পানি এবং প্রচুর খনিজ উপাদান থাকে।
জানা যায়, বগুড়ায় পতিত খাল-বিল ও জলাশয় জুড়ে চাষ হচ্ছে পানি ফলের গাছ। লাভজনক হওয়ায় এ জেলায় পানিফল চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকের। প্রতিবছর চাষ যেমন বাড়ছে তেমনি হাটে বাজারে বেচাকেনাও বেশ ভালো হচ্ছে। কম খরচে ভালো ফলনে ভালো দাম পেয়ে কৃষক খুশি। জেলা শহর ছাড়াও উত্তরের বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে বগুড়ায় উৎপাদিত পানিফল।
বগুড়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, আষাঢ় মাস থেকে ভাদ্র-আশ্বিন মাস পর্যন্ত চারা লাগানো যায়। চারা লাগানোর ২ থেকে আড়াই মাস পর ফল তোলা যায়। প্রতি গাছ থেকে ৩/৪ বার ফল তোলা যায়, যা পৌষ মাস বা ডিসেম্বর পর্যন্ত পাওয়া যায়। এ ফলের কোনো বীজ নেই, মৌসুম শেষে পরিপক্ব ফল থেকে আবারো চারা গজায়, সে চারা পরে জলাশয়ে লাগানো হয়। কৃষি বিভাগ আশা করছে আগামী বছরেও আরো বেশি জলাশয়ে এ ফলের চাষ হবে।
এদিকে কম খরচে লাভবান হওয়ায় বগুড়ার কৃষকরা এ ফলের চাষে আগ্রহী হচ্ছে। জেলার গাবতলী, শিবগঞ্জ ও সদর উপজেলার খাল-বিল-জলাশয়জুড়ে এখন শোভা পাচ্ছে পানিফলের গাছ। শহর গ্রামে সব খানেই এ ফলের চাহিদা রয়েছে। সেদ্ধ করেও এ ফল খাওয়া যায়। বাজারে কাঁচা ফলের পাশাপাশি সেদ্ধ ফলও বিক্রি হয়ে থাকে।
কাকডাকা ভোর থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত শহরের চেলোপাড়া ব্রীজের পাশে চাষীবাজার এলাকায় বাজার বসে। এখানকার ব্যবসায়ী আবু বক্কর জানান, আশি^ন থেকে পৌষ মাস পর্যন্ত এ বাজারে পানি ফল বিক্রি হয়ে থাকে। ভরা মৌসুমে প্রতিদিন ২’শ মণ পানিফলের কেনাবেচা হয় এ বাজারে। বগুড়া শহর ছাড়াও আশেপাশের বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে বলে জানান তিনি। বগুড়ার বাজারে প্রতি মণ পানিফল পাইকারি ৮’শ থেকে ১২’শ টাকা দরে কেনাবেচা হচ্ছে। কাঁচা ফলের দাম কম হলেও পরিপূর্ন ফলের দাম বেশি।
বগুড়ার গাবতলীর খইলশাকুড়ি বিলে এলাকার বেলাল হোসেন, সোহেলসহ ৭ জন প্রতিবছরই পানি ফল চাষ করে থাকেন। নিজেরা পরিশ্রম করে সার ও ওষুধ দিয়ে পানি ফল চাষ করে থাকেন। যেসময় এ ফলের চাষ করা হয়, তখন কৃষকের হাতে কাজ কম থাকে। লাভজনক হওয়ায় প্রতিবছরই তারা এ ফল চাষ করেন।
বগুড়া সদর উপজেলার সাবগ্রাম-বরিয়া এলাকায় দ্বিতীয় বাইপাস সড়কের পাশে দুবিলায় পানি ফল চাষ করেছেন আব্দুস সামাদ, বক্কর সহ কয়েকজন। তারা জানালেন, নিচু জমি হওয়ায় এখানে ফসল হয়না তাই প্রতিবছর তারা এখানে পানি ফল চাষ করে থাকেন। তাদের জমি থেকেই ব্যবসায়ীরা ফল কিনে নিয়ে যায়।
বগুড়ার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শষ্য) মো: এনামুল হক জানান, পানি ফল অত্যান্ত সুস্বাদু। বগুড়া থেকে পানি ফলসহ চারা দেশের বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে যাচ্ছে। কৃষি বিভাগ প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান করছে। আগামীতে জেলার অন্যান্য উপজেলাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে চাষাবাদের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান কৃষি কর্মকর্তা।
বিডি প্রতিদিন/এএম