কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে রেজাউল ইসলাম (৫৬) নামে এক প্রধান শিক্ষকের ঝুলন্ত লাশ পুলিশ উদ্ধার করেছে। মঙ্গলবার ভোরে যদুবয়রা ইউনিয়নের কেশবপুর গ্রামের নিজ বাড়ির লোহার গ্রিল থেকে নিহতের স্বজনরা লাশ উদ্ধার করে পুলিশকে খবর দেয়।
পরে পুলিশ লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত করে পরিবারের কোনো অভিযোগ না থাকায় ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করে। তিনি যদুবয়রা ইউনিয়নের ১০০নং কেশবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও বাগুলাট ইউনিয়নের শালঘরমধুয়া গ্রামের মৃত আনছার উদ্দিনের বড় ছেলে।
নিহতের স্বজন, সহপাঠী ও এলাকাবাসী জানান, প্রধান শিক্ষক রেজাউল ইসলামের অনেক টাকা ধার দেনা ছিল। বেশ কিছুদিন ধরে বিভিন্ন মানুষের কাছে তিনি মৃত্যুর কথা বলে মাপ চাচ্ছিলেন। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে দেনা পরিশোধে ব্যর্থ হয়েই গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন তিনি।
এলাকাবাসী ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, রেজাউল ইসলাম ১৯৯০ সাল থেকে কেশবপুরের নিদেনতলায় শ্বশুর বাড়িতে ঘর জামাই থাকতেন। উপজেলার শালঘর মধুয়ায় তার নিজের বাড়ি। শ্বশুর ইউসুফ আলীর কোনো ছেলে সন্তান না থাকায় তিনি শ্বশুর বাড়িতেই থাকতেন। সেখানে থেকেই তিনি চাকরি করতেন। তার স্ত্রী শেফালী আক্তার চর আগ্রাকুন্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক। এই দম্পতির দুই ছেলে রয়েছে।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, তিনি নতুন বাড়ি ও বাজারে একটি মার্কেট নির্মাণ করতে গিয়ে প্রায় ২০ লাখ টাকা ধার করেছিলেন। দেনার টাকার জন্য স্বজনদের কাছে সহযোগীতা কামনা করতেন। গত সোমবার বিকালে জন্মস্থান শালঘর মধুয়াতে যান। সেখানে তিনি বলেন দুইলক্ষ টাকা না দিলে তাকে আর পাওয়া যাবে না। পরে তার ভাইয়েরা তাকে এক লাখ ৭০ হাজার টাকা দেন। তিনি টাকা নিয়ে রাতে বাড়িতে ফিরে আসেন এবং রাতে অন্যান্য দিনের মতই ঘুমিয়ে পড়েন।
এরপর হঠাৎ ভোর রাতে নিজের পাকাবাড়ির সামনের পাশের গ্রিলে রশির সাথে ঝুলতে দেখেন তার স্ত্রী। এ সময় স্ত্রীর চিৎকারে প্রতিবেশীরা ছুটে এসে তাকে নিচে নামিয়ে ডাক্তারকে খবর দেওয়া হয়। স্থানীয় ডাক্তার এসে তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। এ বিষয়ে কেশবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মুনসুর আলী বলেন, গত বৃহস্পতিবার প্রধান শিক্ষক নিজেদের মধ্যে আড্ডার সময় ইয়ার্কির ছলে চিরবিদায়ের কথা বলছিলেন। কিন্তু সত্যিই চলে যাবেন তা ভাবতে পারিনি। তিনি আরও বলেন, আজ শোনা যাচ্ছে সে অনেক টাকা দেনা। হয়তো দেনার চাপে আত্মহত্যা করেছে।
বরইচারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খন্দকার শাজাহান আলী বলেন, কয়েকদিন আগে রেজাউল ভাই মজা করে বলেছিল একটা কলা খাওয়াও ভোটের পরে কিন্তু মারা যাব। একথা শুনে আমি ও কয়েকজন শিক্ষক তাকে এক ছড়ি কলা খাওয়ায় কিন্তু সত্যিই চলে যাবেন বুঝতে পারিনি।
নিহতের স্ত্রী শেফালী আক্তার বলেন, কিছুই বুঝতে পারিনি। ধার দেনার কথা কিছু বলেনি। ভোরে খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে গ্রিলে ঝুলতে দেখে চিল্লাই উঠেছিলাম। আমি আর কিছু জানিনা।
কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুজ্জামান তালুকদার বলেন, নিজ বাড়ির গ্রিলে ঝুলছিল এক প্রধান শিক্ষকের লাশ। ঝুলন্ত লাশ নিচে নামিয়ে স্থানীয়রা পুলিশকে খবর দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ লাশের সুরতহাল করে কিন্তু কোনো অভিযোগ না থাকায় ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ হস্তান্তর করা হয়। তিনি আরও বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে তিনি আত্মহত্যা করেছেন।
বিডি প্রতিদিন/আবু জাফর