ফরিদপুরের সালথা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসিকুজ্জামানের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা হয়েছে। রবিবার ফরিদপুরের বিজ্ঞ সিনিয়র ম্যাজিষ্ট্রেট ৬নং আমলী আদালতে এ মামলাটি দায়ের করেন সালথা উপজেলার গট্রি ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. মুরাদ মোল্লা। মামলাটি বিজ্ঞ আদালত আমলে নিয়ে পিবিআইকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলা সূত্রে ও ইউপি সদস্য মুরাদ মোল্লা জানান, সালথা থানার ওসি মো. আসিকুজ্জামান ও তার অধিনস্ত এসআই হান্নান গত ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনের সময় বাদীর কাছে বিভিন্ন অজুহাতে চাঁদা দাবি করেন। টাকা না দিলে তাকে ইউপি নির্বাচনে অংশ নিতে দেবেন না বলে জানিয়ে দেন এবং ভয়ভীতি দেখান। পরে বাধ্য হয়ে ইউপি সদস্য মো. মুরাদ মোল্লা ৭৫ হাজার টাকা তুলে দেন ওসির হাতে। টাকা দেবার পরেও তার বিপরীত পক্ষের যোগসাজসে আরো ১ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। টাকা না দেবার কারণে অসুস্থ থাকার পরও মুরাদ মোল্লার বিরুদ্ধে ৩টি মামলা দেওয়া হয়। এভাবে বিভিন্ন সময় নানা অজুহাতে তার কাছ থেকে অর্থ দাবি করতে থাকেন ওসি মো. আসিকুজ্জামান।
মামলার অভিযোগে আরো বলা হয়, ইউপি সদস্য মুরাদ মোল্লার ভাই জিহাদকে রাতের আঁধারে ধরে নিয়ে বেদমভাবে মারপিট করে মিথ্যা মামলায় চালান দেওয়া হয়। এ ঘটনার প্রতিকার চাইলে ওসি ফের বিভিন্ন মামলায় ফাঁসিয়ে দেবার হুমকি দেওয়া হয়। এসব বিষয় নিয়ে ওসির বিরুদ্ধে মানববন্ধন করা হলে ক্ষিপ্ত হন ওসি মো. আসিকুজ্জামান।
এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী ইউপি সদস্য মুরাদ মোল্লা বলেন, আমি পঙ্গু মানুষ। আমাকে বিভিন্ন মিথ্যা মামলা দিয়ে ওসি হয়রানি করছে। আমি ওসির বিচারের দাবি জানাই। আমি ওসির এসব অন্যায় কাজের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছি।
এদিকে, সালথা থানার ওসি মোঃ আসিকুজ্জামান রবিবার বিকেলে থানায় সংবাদ সম্মেলন করে নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেন, তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। তিনি বলেন, প্রকৃত ঘটনা হলো, গত ১৩ মার্চ দলপক্ষ নিয়ে সালথা থানা এলাকার গট্টি ইউনিয়নের বাসুয়ারকান্দী গ্রামে ধলামিয়ার দল ও ইকবাল শেখের দলের মধ্যে মারামারি হয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এঘটনায় কয়েকজন আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়।
সংঘর্ষের পরিস্থিতি শান্ত হলে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে চলে আসে। এই ঘটনার জেরে গট্টি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে দলপক্ষের মধ্যে বিরোধ ছড়িয়ে পড়ে। ওই দিন রাত ২ টার দিকে পুনরায় খবর আসে বালিয়া বাজার এলাকায় দুইটি দলের লোকজন অস্ত্র নিয়ে সংগঠিত হচ্ছে। এমন খবরে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য রাতেই পুলিশফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে দলবদ্ধ লোকজনকে ছত্রভঙ্গ হওয়ার নির্দেশ দেই। উপস্থিত দুইপক্ষের লোকজন পুলিশী নির্দেশ অমান্য করে পুলিশের উপর বেপরোয়াভাবে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। তাদের আক্রমনে আমিসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হই। এসময় ঘটনাস্থল থেকে ঘটনায় জড়িত আক্কাছ শেখ, মজনু ফকির, জিহাদ মোল্যা ও সজিব মিয়াকে দেশীয় অস্ত্র ঢাল-কাতরা সহ গ্রেফতার করা হয়।
পরে ওই রাতেই মুরাদ মেম্বার ও গট্টি ইউনিয়ন পরিষদ এর চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান লাবলু থানায় আসে মুরাদ এর ভাই জিহাদকে ছাড়াতে। আমি তাকে ছাড়তে নারাজ হই। এতেই মুরাদ মেম্বার আমার উপর ক্ষিপ্ত হয়। জিহাদকে গ্রেফতার করে থানা গারদে রাখা হয়। তাকে কোনো মারধর করা হয়নি। পরের দিন তার বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হয়।
এ বিষয়ে পুলিশ সুপার আলিমুজ্জামান বলেন, এ ঘটনার বিষয়ে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে তদন্ত শুরু হয়েছে। দোষী প্রমাণিত হলে দুই পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল