গত দুদিন আগে মা গুলজান বেওয়া (৮০) কে মারপিট করে বের করে দিয়েছে ছেলেরা। শুক্রবার রাতে তাকে বগুড়া শহরের কলোনী তাজমা সিরামিক ফ্যাক্টরির সামনে দেখতে পেয়ে সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা সমর কুমার পালকে খবর দেন এক ব্যক্তি। তারপর নির্বাহী কর্মকর্তা সমর পাল নির্যাতিত মা গুলজানকে নিজ গাড়িতে করে নিয়ে যান এবং উপজেলায় আশ্রয় করে দেন।
ছেলেদের নির্যাতনের শিকার মা গুলজান বগুড়ার গাবতলী উপজেলার সুখান পুকুর এলাকার তিওরগ্রামের বাসিন্দা।
গত শুক্রবার রাত ১১টায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মা গুলজান কলোনী তাজমা সিরামিকের সামনে যাত্রী ছাউনীতে বসে আছেন। সাথে একটি ব্যাগ। ব্যাগে কিছু জিনিসপত্র। তার চারপাশে লোকজনের ভিড়। বগুড়া সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা সমর পাল কথা বলছেন তার সাথে। শরীরের নির্যাতনের চিহ্ন।
নির্যাতিত মা গুলজানের সাথে কথা হয়। তিনি জানান, স্বামী মারা গেছেন অনেক আগে। তিন ছেলে হযরত আলী, হোসেন আলী, মোহাম্মদ আলী ও এক মেয়ের বিয়ে হয়েছে। বাড়িতে ঠিকভাবে ছেলেরা খেতে দেয় না, যত্ন করে না। ছেলেরা পেশায় সংসারী কাজ করে। বেঁচে থাকার তাগিদে নানা জায়গায় তিনি ভিক্ষা করেন। ভিক্ষা করে পাওয়া চাল ও টাকা দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। কিন্তু তার ছেলেদের ভিক্ষা করা পছন্দ না। তাই তারা তাকে মারপিট করেছে। শরীরে চিহ্ন রয়েছে। ভাল ভাবে খেতেও দেয় না, ভিক্ষাও করতে দেয় না। এমতাবস্থায় তাকে গত দুদিন আগে মেরে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে ছেলেরা।
বাড়ি ফিরতে চান কি না এমন প্রশ্নে কান্না জড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, না, ছেলেদের ভয় লাগে।
এবিষয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সমর কুমার পাল বলেন, রাত ১০টার পর একজন তাকে ফোন করে জানান এক বৃদ্ধা তাজমা সিরামিকের সামনে যাত্রী ছাউনিতে বসে আছেন। তার ছেলেরা নাকি তাকে মেরে বের করে দিয়েছে। এমন খবর পেয়ে সাথেসাথে ছুটে আসি ঘটনাস্থলে। এসে তার সাথে কথা বলি। তার ঘটনার বিস্তারিত জানতে পারি। আমি তাকে সদর উপজেলায় নিয়ে যাচ্ছি। তার খাবার ও থাকাসহ যত্নের ব্যবস্থা করা হবে। শুক্রবার রাতেই তাকে বগুড়া সরকারি শিশু পরিবার কেন্দ্রে প্রেরণ করা করা হয়েছে। যাতে করে তাকে আর কোন নির্যাতন শিকার হতে না হয়। তারজন্য যথাযথ সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান তিনি।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন