নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে বাবার কোলে থাকা ৩ বছরের শিশু তাসফিয়া আক্তার জান্নাতকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় বেগমগঞ্জ থানায় ১৭ জনের নামসহ অজ্ঞাতনামা আরও ১০-১৫ জনকে আসামি করে মামলা হয়েছে। নিহত শিশুর খালু হুমায়ুন কবির বাদী হয়ে এ হত্যা মামলা করেন।
এদিকে, ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ। পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। একের পর এক ঘটনায় স্থানীয়রা আতঙ্কে রয়েছে। এদিকে শিশু তাসপিয়ার খুনিদের গ্রেফতার ও ফাঁসির দাবিতে এলাকায় পোস্টার ছাপিয়েছে স্থানীয়রা।
আটক ব্যক্তিরা হলেন-বেগমগঞ্জ উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের লক্ষীনারায়ণপুর গ্রামের মৃত নুরনবীর ছেলে এমাম হোসেন ওরফে স্বপন (৩০), উপজেলার লফিতপুর চৌধুরী মাস্টার বাড়ির সামছুদ্দিনের ছেলে জসিম উদ্দিন বাবার (২৩) ও লফিতপুর গ্রামের ছাদেক মেম্বারের পুরান বাড়ির দেলেয়োর হোসেনের ছেলে দাউদ হোসেন রবিন (১৭)।
বুধবার সন্ধ্যা থেকে বৃহস্পতিবার ভোর পর্যন্ত বেগমগঞ্জ ও কোম্পানীগঞ্জের একাধিকস্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়।
বেগমগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর জাহেদুল হক রনি বলেন, এ ঘটনায় ১৭ জনকে এজাহারভুক্ত আসামি এবং ১০-১৫ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। নিহত শিশুটির ময়নাতদন্তের জন্য নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, বুধবার বিকেল চারটার দিকে বেগমগঞ্জ উপজেলার হাজীপুর গ্রামের মালেকার বাপের দোকান নামক স্থানে মাওলানা আবু জাহের (৩৭) ও তার কোলে থাকা ৩ বছরের শিশু তাসফিয়া আক্তার ওরফে জান্নাতকে স্থানীয় রিমন বাহিনীর সন্ত্রাসীরা গুলি করে হত্যা করে। এ ঘটনায় নিহত শিশুর বাবা সৌদি প্রবাসী মাওলানা আবু জাহেরও (৩৭) গুলিবিদ্ধ হন। তিনি উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের রাসাদ মিয়ার বাড়ির মৃত জানু সরদারের ছেলে।
অভিযুক্ত রিমন (২৫) একই উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের লক্ষীনারায়ণপুর গ্রামের দানিজ বেপারী বাড়ির মমিন উল্যার ছেলে। রিমন এলাকার চিহিৃত অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী। তার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে।
নিহতের মামাতো ভাই ব্যবসায়ী আবদুল্যাহ আল মামুন বলেন, গত কয়েক দিন আগে আমাদের বাড়ির আল আমিন নামে এক ব্যক্তি জমিনের মাটি বিক্রি করে রিমনের কাকা বাদশার কাছে। বাদশা ওই জায়গা থেকে ৬ ফিট মাটি কাটে। এরপর আরও মাটি কাটতে গেলে আমাদের বাড়ির লোকজন তাকে বাধা দেয়। কারণ এভাবে মাটি কাটতে গেলে তাদের জায়গা ভেঙে পড়বে। একপর্যায়ে মাটি কাটতে বাধা দেওয়ার খবর পেয়ে রিমন ও তার সহযোগী রহিম, মহিন ও সুজনসহ আরও কয়েকজন গত দুই দিন একাধিকবার আমাদের বাড়িতে এসে গোলাগুলি করে এবং আমার গর্ভবতী ভাগনিকে পেটে লাথি দেয়। তাৎক্ষণিক বিষয়টি পুলিশকে জানালে পুলিশ ওই নারীকে প্রথমে চিকিৎসা দিতে বলে।
তিনি অভিযোগ করে আরও বলেন, মাটি কাটার বিরোধের জের ধরে বুধবার বিকেল ৪টার দিকে রিমনের নেতৃত্বে তার বাহিনীর সক্রিয় সদস্য রহিম, মহিন ও সুজনসহ ১০-১৫ জন অস্ত্রধারী মালকার বাপের দোকান এলাকায় অবস্থিত আমার দোকানে এসে আমাকে গালিগালাজ করে। ওই সময় আমার মামা জাহের তার শিশু মেয়ে জান্নাতকে নিয়ে দোকানে আসে চিপস আর চকলেট কিনে দেওয়ার জন্য। সন্ত্রাসী রিমন আমার মামাকে আমার দোকানে দেখে মামাকে গালমন্দ করে বলে তোর শেলটারে এরা এসব করছে। এ কথা বলার সাথে সাথে আমাদের উদ্দেশে গুলি করে এবং জান্নাতকে ইট দিয়ে আঘাত করে।
এরপর মামা দোকান থেকে বের হয়ে বাড়ির উদ্দেশে যাত্রা করলে রিমন ও তার বাহিনীর সদস্যরা পেছন থেকে পুনরায় জান্নাতকে ও মামাকে লক্ষ্য করে গুলি করে। এতে জান্নাতের কানে ও মাথায় গুলিবিদ্ধ হয় এবং মামা চোখ গুলিবিদ্ধ হয়। এরপর স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখান থেকে তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা নেওয়ার পথে রাত সাড়ে ৮টার দিকে জান্নাত মারা যায়।
বিডি প্রতিদিন/এমআই